ইত্তেফাক : দেশের শিল্পোদ্যোগকে আরো বেশি সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগসহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে করকাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর কিংবা বিলাসজাত পণ্য আমদানিকে নিরুত্সাহিত করতে কিছু উদ্যোগ থাকবে। আবার যেসব ব্যক্তি এক খাতের আয়কে কিংবা অবৈধ আয়কে অন্য খাতের আয় দেখিয়ে কর-সুবিধা নিচ্ছেন, তাদের এই সুবিধার ক্ষেত্রেও কিছুটা রাশ টানতে যাচ্ছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বাজেট-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী আমদানিকৃত ফল, কিছু সবজি এবং মদ ও সুগন্ধিজাতীয় পণ্যের অগ্রিম আয়কর বাড়তে যাচ্ছে। অন্যদিকে স্থানীয় শিল্পকে উত্সাহিত করতে সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানির অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বিদ্যমান ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ, সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পের এআইটি ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে। অন্যদিকে কৃষিভিত্তিক শিল্পকে উত্সাহিত করতে এ ধরনের চারটি খাতের শিল্প স্থাপনে ১০ বছরের জন্য কর অব্যাহতির সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হলো কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উত্পাদনকারী শিল্প এবং ফার্ম যন্ত্রপাতি-সংশ্লিষ্ট শিল্প।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির পণ্য প্রসারের জন্য ব্যয়ের (প্রমোশনাল এক্সপেন্স) ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। গত বছরের বাজেটে যে কোনো কোম্পানির মোট বার্ষিক বিক্রয়ের শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পণ্যের প্রসারের জন্য ব্যয়কে করমুক্ত রাখা হয়। এবার এটি বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। অর্থাত্, চলতি বছর যে পরিমাণ ব্যয় করমুক্ত ছিল, আগামী বছর কোম্পানিগুলো ঐ ব্যয় দ্বিগুণ করতে পারবে, যে জন্য কোনো কর দিতে হবে না।
তবে শিল্পসংশ্লিষ্টদের দাবি, পণ্য প্রসারের ব্যয় ৫ থেকে ১০ শতাংশ কিংবা কোনো কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি হয়। কিন্তু ১ শতাংশ করমুক্ত সুবিধা দেওয়া হলে বাদবাকি ব্যয়ের ওপর কোম্পানিগুলোকে আয়কর গুনতে হবে। এতে করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয়কর দিতে হয়। অন্যদিকে কর বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করেন, অতীতে এক্ষেত্রে কোনো নজরদারি না থাকায় অনেকে এ উপায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় দেখিয়ে সরকারের কর ফাঁকি দিয়েছে।
এছাড়া বাজেটে অতিধনীদের ওপর বাড়তি করারোপ করতে যাচ্ছে সরকার। ১০ কোটি টাকার ওপরে যাদের সম্পদ রয়েছে, তাদের মোট করের ওপর বাড়তি ১০ শতাংশ মাশুল (সারচার্জ বা করের ওপর কর) দিতে হবে। এই সম্পদের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে তার ওপর মাশুল ২০ শতাংশ, ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে ৩৫ শতাংশ মাশুল দিতে হবে।
অন্যদিকে মত্স্য খাতের আয় দেখিয়ে যারা এতদিন কম হারে আয়কর দেওয়ার সুবিধা নিয়েছেন, তাদের ওপর এবার বাড়তি কর আরোপ হতে পারে।
আগামী ৩ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পেশকালে এসব প্রস্তাব দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ইতিমধ্যে বাজেট-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম প্রায় সম্পন্ন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর।
আপনার মতামত লিখুন :