শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ২৮ মে, ২০২১, ০৪:৩৪ সকাল
আপডেট : ২৮ মে, ২০২১, ০৪:৩৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

করোনাকালে বেড়েছে বাড়িতে সন্তান প্রসব সঙ্গে মাতৃমৃত্যুও

সমকাল : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম দেন রাহেলা আক্তার। করোনার এ সময়ে হাসপাতাল এড়িয়ে যাওয়ার কারণেই বাড়িতে সন্তান প্রসব করানো হয়। কিন্তু জন্ম দেওয়ার পরেই জটিলতা দেখা দেয়। ভোরে রাহেলাকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে। সেখানেই মারা যান রাহেলা।

প্রথম সন্তানের মা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন মোহাম্মদপুরের নার্গিস আক্তার। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বাড়িতে সন্তান প্রসবের বন্দোবস্ত করে তার পরিবার। আট মাস না পেরোতেই পানি ভেঙে যায় নার্গিসের। পার্শ্ববর্তী এক ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পর কন্যাসন্তানের জন্ম দেন নার্গিস। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নার্গিস মারা যান।

শুধু রাহেলা বা নার্গিস নন, করোনাকালে মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতাল এড়িয়ে যাওয়ার কারণে বাড়িতে সন্তান প্রসবের হারও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খিঁচুনি, ফুল না আসা ও প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণের কারণে মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতাল-গুলোতে সীমিত সেবা, যানবাহন সমস্যা, হাসপাতালে সময়মতো সেবা না পাওয়ার আশঙ্কা এবং ছুটির দিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা নির্ধারিত সেবা না পাওয়া এর অন্যতম কারণ।

করোনাকালে মাতৃমৃত্যু বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। এমন তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত টিকাদান কর্মসূচি ইপিআই। মহামারির আগে ৫০ শতাংশ প্রসব হতো বাড়িতে, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭৩ শতাংশ। ২০১৯ সালের মার্চে

প্রসব-পূর্ব সেবা পাওয়া গর্ভবতী ছিলেন ৪২ হাজার ৫২৬ জন, ২০২০ সালের মার্চে সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ৩৬ হাজার ৪১৫। পরিস্থিতির আরও অবনতি হয় এপ্রিলে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে প্রসব-পূর্ব সেবা পেয়েছিলেন ৪২ হাজার ৫৭১ জন গর্ভবতী। গত বছর এ সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৬২ জন।

অবস্ট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি বাংলাদেশ (ওজিএসবি)-এর তথ্যমতে, মহামারির আগে বাড়িতে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ৩২ শতাংশের মতো। কিন্তু করোনাকালে ওজিএসবির ১৪টি শাখার তথ্য বলছে, শতকরা ৫৪ শতাংশ বাড়িতে মাতৃমৃত্যু বেড়েছে। যদিও এটা গবেষণালব্ধ জরিপ নয়। তাছাড়া মহামারি এখনও শেষ হয়নি, আর সব হাসপাতালের তথ্যও নেওয়া শেষ হয়নি।

গত বছরের মার্চ থেকে লকডাউনের সময়ে পরিবার পরিকল্পনা সার্ভিস ছিল বেশ নড়বড়ে। লকডাউন থাকার কারণে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে 'ম্যাটেরিয়াল' পৌঁছাতে পারেননি। পরিবার পরিকল্পনা সেন্টারগুলোও বন্ধ ছিল। তাই তারা উপকরণও পাননি। ফলে এ সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বেড়ে যায়।

বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারের অর্ধেকই পিল। বাকি অর্ধেকের মধ্যে আছে ইনজেকশন, কনডম, নারী ও পুরুষের বন্ধ্যাকরণ, ইমপল্গান্ট ইত্যাদি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে পিল ও কনডমের ব্যবহার কমে যায় প্রায় ৩০ শতাংশ। স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণের পরিমাণও কমে যায় ব্যাপকভাবে। যেমন জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে গড়ে প্রায় তিন হাজার ভ্যাসেকটমি (পুরুষের বন্ধ্যাকরণ) হলেও এপ্রিল মাসে এ সংখ্যা ছিল ২৬৩ এবং মে মাসে ১২১। নারী বন্ধ্যাকরণ বা কিউবেকটমির সংখ্যা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ছয় হাজারের ওপরে হলেও এপ্রিলে এর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮০০ আর মে মাসে এ সংখ্যা ২ হাজার ৬০০।

তথ্যমতে, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার না করায় অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের কারণে সন্তান প্রসবের হার যেমন বেড়েছে, তেমনই গলির দোকান থেকে গর্ভপাতের ওষুধ খাবার কারণেও রক্তক্ষরণ হয়ে অনেক মা মারা যাচ্ছেন। আবার কেবল যে সন্তান প্রসবের সময়েই মায়েরা মারা গেছেন, তা-ই নয়, 'আর্লি প্রেগন্যান্সিতে'ও নানান জটিলতার কারণে মায়েদের মৃত্যু বেড়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, 'যেসব গর্ভবতী মা নিয়মিত চেকআপে থাকতেন, করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় এই সময়টাতে তারা থাকতে পারেননি। এ কারণে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মা, যাদের অবশ্যই হাসপাতালে ডেলিভারি করাতে হবে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে, তারা সেই সুযোগ পাননি। কারণ তাদের শনাক্ত করা যায়নি।' তিনি আরও বলেন, মাতৃমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ। কিন্তু করোনার এ সময়ে চিকিৎসা অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে। সীমিত হয়েছে ডোনার। ঠিক সময়ে রক্ত না পাওয়া, ব্লাডব্যাংকগুলোতে রক্তস্বল্পতার কারণেও মাতৃমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায়ও নারী না থাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্টজন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আইনুন নাহার বলেন, 'পরিবার থেকে শুরু করে সর্বত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ খুব সীমিত। করোনার সময়ে গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে সবাইকে। ফলে পুরুষের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে গিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে গর্ভধারণ করতে হয়েছে অনেক নারীকে। আবার অনেক নারীকে পুরুষের সিদ্ধান্তে অনিরাপদ গর্ভপাত করতে হয়েছে। এতে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মা মৃত্যুবরণও করেছেন।'

একই কথা বলেন মেরিস্টোপস বাংলাদেশের অ্যাডভান্স ফ্যামিলি প্ল্যানিং কার্যক্রমের সমন্বয়কারী মনজুন নাহার। তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায় থেকে পরিবার পর্যন্ত- সর্বত্র জেন্ডার বৈষম্য দূর করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে যে কোনো দুর্যোগ বা সংকটে নারী সুস্থ থাকবেন।

এমনই এক পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সরকারিভাবে এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নানা কর্মসূচি পালন করছে। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

সারাবিশ্বে ১৯৮৭ সাল থেকে 'নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস' পালন শুরু হলেও মাতৃস্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব এবং এর কার্যকারিতা অনুধাবন করে ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশে তা পালন শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে নারীপক্ষ আজ সকাল ১১টায় ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়