সুজন কৈরী: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ বিভিন্ন সনকারি দপ্তরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বুধবার রাতে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডি ঢাকা মেট্রোর (দক্ষিণ) একটি টিম।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন- শামীম আহমেদ ওরফে মোস্তফা মনির ওরফে মোশাররফ (৪৫), তানজীলা সুলতানা সমাপ্তি (২৫), বজলু রশিদ ও শরিফুল ইসলাম। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে এয়ার হোস্টেজের ব্যবহৃত পোশাক, মোবাইল ফোনসেট এবং ভুয়া নিয়োগপত্র উদ্ধার করেছে সিআইডি।
সিআইডি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার চক্রের মূলহোতা শামীম আহমেদ। তিনি কখনো পরিচয় দিতেন রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে, আবার কখনো তিনি এমডি। তিনি দাবি করতেন, টাকা নিয়ে বিমানে চাকরি দিতে পারেন। শামীমের বান্ধবী হচ্ছেন তানজীলা। শামীমের সঙ্গেই থাকতেন এবং নিজেকে পরিচয় দিতেন বিমানের এয়ার হোস্টেস বা কেবিন ক্রু হিসেবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, শামীম নিজেকে বিভিন্ন সময় নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিমানের জেনারেল ম্যানেজার ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আবার কখনো এমডি হিসেবে পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ে চাকরির নিয়োগ পত্র প্রদানের মাধ্যমে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। শামীমের নেতৃত্বে চক্রটি বিমানে চাকরি দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে ১৩ থেকে ১৭ লাখ টাকা করে আত্মসাৎ করেছেন।
চক্রের সদস্যরা বিমানের নিয়োগের সার্কুলার হওয়ার পর তাদের এলাকার লোকজনকে চাকরি দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। বিশ্বাস অর্জনে চক্রটি চাকরি প্রত্যাশীদের ভুয়া পরীক্ষা নিতো এবং সবাইকে ফেল করিয়ে দিতো। পরে অকৃতকার্যদের নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। বিমানের একটি বিভাগে সহকারী পরিচালকের চাকরির জন্য শামীমকে ২০১৯ সালে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা দিয়েছেন এক ব্যক্তি। তিনি প্রতারিত হয়ে এ বিষয়ে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় চারজনকে দেখানো হয়েছে।
শামীমের বিষয়ে সিআইডি কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন আগে শামীম একটি সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সেই সূত্রে বিমানবন্দরের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। সেখান থেকেই তিনি প্রতারণার কৌশল জেনে চাকরি ছেড়ে চাকরি দেওয়ার প্রতারণা শুরু করেন। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে মোবাইল এবং ভুয়া নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু, এক্সিকিউটিভ অফিসার, সিগন্যালম্যান, চেকিং অফিসার, এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার এবং কয়েকটি সরকারি দপ্তরে সহকারী পরিচালক পদে চাকরির নামে ৮০ লাখ ২৯ হাজার ৩০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে। তবে শামীম সিআইডির কাছে জানিয়েছেন, বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বেশ কয়েকজনকে বিমানের কেবিন ক্রু, এক্সিকিউটিভ অফিসার, সিগন্যাল ম্যান, চেকিং অফিসার, এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার পদে চাকরি দিয়েছেন। কিন্তু এবার পারেননি।
বিমানের কথিত এয়ার হোস্টেজ তানজীলা সম্পর্কে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, তানজীলা নিজেকে একজন টিকেটিং অফিসার বলে দাবি করেন। তিনি কখনো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স আবার কখনো রিজেন্ট এয়ারওয়েজের টিকেটিং অফিসার বলে দাবি করেছেন। তিনি শামীমের সঙ্গে যোগসাজশে তার এলাকার লোকজনকে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নিতেন। তানজীলা নিজেকে এয়ার হোস্টেস বুঝাতে তার ফেসবুক পেজে কেবিন ক্রুর পোশাক পরে ছবি দিতেন। একবার তিনি নিয়োগ প্রত্যাশীদের বিশ্বাস অর্জনে বিমানে করে সৈয়দপুরেও যান। তানজীলা বিবাহিত নন। তাকে ঢাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে শামীমের সঙ্গে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, গ্রেপ্তার বজলুর সেনাবাহিনীর সৈনিক হিসেবে র্যাবের সদস্য ছিলেন। ২০০৭ সালে একটি ডাকাতির মামলায় তাকে চাকরিচ্যুত করে জেলে পাঠানো হয়। ৮ বছর জেল খেটে তিনি বের হয়ে এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যুক্ত হন। প্রতারণা চক্রে বজলুর রশিদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বডিগার্ড দাবি করতেন।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের যোগসাজশের আভাস পাওয়া গেছে। আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করে খতিয়ে দেখছি।
আপনার মতামত লিখুন :