আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল : যাদের কাছে ফিলিস্তিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ হচ্ছে দানব, সেই তারা কিন্তু আমাদের সরকার হঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করে। প্রিয়া সাহা ইস্যুতে দেশপ্রেমের জোয়ার এলেও আল জাজিরার মতো একটি জঙ্গি মুখপত্র যখন দেশ ও দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তখন দেশপ্রেম বিসর্জন দিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে সেই গোষ্ঠী। ইসলামী চেতনা তখন আর কাজ করে না। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে বিদেশি আগ্রাসন কামনা করতে তারা দ্বিধা করে না। তাই পাসপোর্ট ইস্যুতে রাজাকার শাবক, জঙ্গি ও দেশদ্রোহীদের কথা বলার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। আমাদের পাসপোর্ট অন্য সকল দেশের মতো হবে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ এবং এর ফরমেট বিশে^ একধরনের। পাসপোর্টের বৈশ্বিক মানদণ্ড বজায় রাখতে কূটনৈতিক দিকটি গুরুত্বপূর্ণ। পাসপোর্টের মান হেলাফেলা করার মতো বিষয় নয়।
একটি দেশের জীবনযাত্রার মান, জিডিপি, মাথাপিছু আয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, জঙ্গিবাদ দমনে ভূমিকা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে পাসপোর্টের মান নির্ধারিত হয়। এই মান একজন নাগরিকের মর্যাদার পরিমাপ বহন করে। বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রাপ্তির সুবিধা, বিনা ভিসায় ভ্রমণ, স্টুডেন্ট ও ট্রাভেল ভিসা সহ অনেক ক্ষেত্রে পাসপোর্টের মান ভূমিকা রাখে। তাই অগ্রসরমান বাংলাদেশের পাসপোর্টে কূটনৈতিক সৌজন্য বহির্ভূত কিছু না থাকা উচিত। [তবে, ‘সকল দেশের জন্য প্রযোজ্য’- এ কথাটিও থাকার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। কারণ পাসপোর্ট মানেই পৃথিবীর সর্বত্র অবাধ যাতায়াতের মাধ্যম।]
ইসরাইল ভ্রমণ ইস্যু : ইসরাইল ভ্রমনের বিষয়টি কূটনৈতিক সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট। যেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে এখন সম্পর্ক হচ্ছে না, তাই দূতাবাসও থাকছে না। ভ্রমণ প্রসঙ্গ অবান্তর। অন্যদিকে ইসরাইলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কারো জন্য ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা নেই। কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও বাংলাদেশ, পাকিস্তান সহ অনেক দেশের নাগরিকরা অন্য দেশ থেকে ভিসা নিয়ে ইসরাইল ভ্রমণ করে আসছে।
ফলে আগের আর বর্তমান পরিস্থিতি একই থাকছে। ঈসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। একদিকে পাকি বাহিনীর আক্রমণে বাংলাদেশে রক্তের স্রোত বইছে। অন্যদিকে ইসরাইলের আক্রমণের শিকার ফিলিস্তিনিরা ও বার্মার নির্যাতিত রোহিঙ্গারা পাকিস্তান রক্ষায় উদগ্রীব হয়ে ওঠে। আমাদের কান্নার শব্দ তারা শুনতে পায়নি। কিন্তু আমাদের জন্য মানবতা দেখিয়েছিলো ঈসরাইল। আমাদের অর্জিত স্বাধীনতার নেপথ্যে রয়েছে নিঃস্বার্থভাবে তাদের দেওয়া অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য। ুনিয়তির পরিহাস। আজ সেই রোহিঙ্গারা আমাদের আশ্রিত, ফিলিস্তিনিরা বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরে, জয় বাংলা শ্লোগান দেয়। আর পাকিস্তান হতে চায় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের নেতা। স্বাধীনতার পর তিনি কোনো পরাশক্তির কাছে মাথানত না করে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে যোগ দেন।
তিনি নিজেকে শোষিত মানুষের পক্ষে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সাদ্দাম হোসেন ছাড়া কেউ যখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে চায়নি; তখন বঙ্গবন্ধু চাইলে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে দেশের আর্থিক ও খাদ্য সংকট নিরসনে সহায়তা নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি আদর্শকে ঊর্ধ্বে রেখে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রত্যাখ্যান করেন। বঙ্গবন্ধুর এ অনন্য উদারতা ও মহত্ত্বের কথা ফিলিস্তিনপ্রেমী কাউকে কখনো বলতে শুনেছেন? শেখ হাসিনা অব্যাহতভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে বলেন, জাতিসংঘে দাঁড়িয়েও ফিলিস্তিনের কথা বলেন। ফিলিস্তিনপ্রেমী কাউকে কখনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দেখেছেন? এদেশে যারা ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলে তাদের বড় অংশ ভণ্ড ও নীতিহীন। স্বার্থের জন্য পাকিস্তানের জিয়াউল হক যেভাবে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিলো, বিশ্বজুড়ে কথিত ফিলিস্তিনপ্রেমীদের মডেলরাও সেটাই করে। তাই বাংলাদেশের কূটনীতি কি হবে তা আমাদেরই ঠিক করতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের মতামত বিবেচনা করার কোনো প্রয়োজন নেই। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :