শিরোনাম
◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সেই সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৫ মে, ২০২১, ০১:৫৪ দুপুর
আপডেট : ২৫ মে, ২০২১, ০১:৫৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী: কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী কার কাছে ‘বিনীত’?

দীপক চৌধুরী: বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী আর আমাদের মধ্যে নেই। তাঁর মৃত্যুতে আমরা দেশের খ্যাতিমান ও পণ্ডিত ব্যক্তিকে হারালাম। মনেপ্রাণে একজন দেশপ্রেমিক ও মেধাবী মানুষ ছিলেন। মানুষের চাওয়া ও নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন, মানবিক ও সুবিবেচক সিরাজী একজন প্রকৌশলীও। বেশ কয়েক মাস ধরেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। গতরাত তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। সিরাজী ২০১৮ সালে ২০ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন।

আশির দশকের মাঝামাঝিতে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে আমার পরিচয়। যদিও এর বহু আগেই তাঁর কবিতার সঙ্গে আমার হৃদয়ের মেলবন্ধন ঘটে। ১৯৮৬-তে সাপ্তাহিক ‘রোববার’-এর ঈদসংখ্যায় ‘দেশান্তর’ নামে আমার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প ছাপা হয়েছিল। ওই সংখ্যায় আরও গল্প ছিল শওকত ওসমানের ‘ন্যায়-অন্যায়’, আবু ইসহাকের ‘নিস্ফল সঞ্চয়’, রশীদ হায়দারের ‘একটি নিদারুণ প্রেমের গল্প’, শহীদ আখন্দের ‘পরিত্যক্ত’। বিখ্যাত কবি শামসুর রাহমান, আশরাফ সিদ্দিকী, ফজল শাহাবুদ্দীন, আব্দুস সাত্তার, আবুবকর সিদ্দিক, হাবীবুল্লাহ সিরাজীসহ অনেকের কবিতাও ছাপা হয়েছিল এতে। আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে এ সংখ্যায় ছাপা হওয়া ‘বিনীত’ কবিতা। এ কবিতাটির কারণে কবি সিরাজীর প্রতি ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সাংবাদিকতা ছাড়াও সংসারের যাবতীয় কাজে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে, আর সেরকম ঘনঘন যোগাযাগ বা কথাবার্তা খুবই কম হতো। যাকগে, তিনি আমার গল্পের ও গল্প লেখার ধরনের প্রশংসা করতেন। হাবিবুল্লাহ সিরাজীর এই অদ্ভুত সুন্দর ‘বিনীত’ কবিতাটি ‘বাসর রাতে’ আমার স্ত্রীকে বাঁধাই করে উপহার দিয়েছিলাম। পৃথিবীতে এতো কিছু থাকতে আমার অবাককাণ্ড দেখে স্ত্রী খানিকটা অবাক হয়েছিলেন। আমার বিবেচনায় সবকিছুই যেন দৃশ্যমান এ কবিতায়। এটি অসামান্য কবিতা । নাতিদীর্ঘ চল্লিশ লাইনের এ কবিতাটি বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। যেমন-
বিনীত
দোয়াতের কাছে কালি বিনীত
কালির কাছে কলম বিনীত
কলমের কাছে কাগজ বিনীত
কাগজের কাছে কারণিক বিনীত
কারণিকের কাছে কে বিনীত?
.. .. .. .. .. .. .. .. .. ..
.. .. .. .. .. .. .. .. .. ..
শব্দের কাছে বাক্য বিনীত
বাক্যের কাছে উচ্চারণ বিনীত
উচ্চারণের কাছ তুমি বিনীত
‘তুমি’র কাছে ‘আমি’ বিনীত
‘আমি’র কাছে কে বিনীত?
অবশ্য, পুরো কবিতা এখন মনে নেই।

২০২১-এর ‘একুশে বইমেলা’ নিয়ে গত জানুয়ারির চতুর্থ সপ্তাহে তাঁর সঙ্গে মোবাইল ফোনে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হয়েছিল। বিষয় বাংলা একাডেমির বইমেলা আয়োজন। ভয়ংকর করোনার কারণে একুশে বইমেলা নিয়ে ঝুঁকির কথা আমিও বলেছি। আমি একটি লেখা ও লিখেছিলাম এ বিষয়ে। প্রশ্ন করেছিলাম জীবন বড় নাকি বইমেলা? বাংলা একাডেমি কার কাছে বিনীত? হাসতে হাসতে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এবারের বইমেলা জীবন ও জীবিকা অর্থাৎ দুটোর কাছেই বিনীত।’ তখন ২০২১-এ একুশে বইমেলা নিয়ে তীব্র মানসিক লড়াই চলছে। বিষয় ঃ বইমেলা আয়োজন করা হবে, কি হবে না! সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, বাংলা একোডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীসহ কয়েকজন সভা করেছেন। বলা চলে এক ধরনের ‘ক্ষমতা’র প্রতিযোগিতা। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে, না হলে পরে, তাও না হলে সুবিধাজনক সময়ে বইমেলার আয়োজন করতেই হবে। অর্থাৎ কিছু মানুষের আচার-আচরণে মাসব্যাপী এ অনুষ্ঠান যেন যেকোনোভাবেই করা উচিৎ। মান-সম্মান থাকে না! বিবেকওয়ালা মানুষ অবাক হয়। একবারের জন্য কেনো যেনো ভাবতেই চাই না, একবছর আমাদের এ অনুষ্ঠান না হলে দেশের কী কোনো চিল ওড়ে এসে কৃষ্টি গিলে ফেলবে? যেখানে গোটাদুনিয়ায় এখনও একধরনের সন্দেহ বিরাজমান যে, ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও প্রয়োগের মাধ্যমে কোভিড-১৯-এর বিষয়ে চূড়ান্ত কিছুই বলা সম্ভব হয়নি সেখানে আমাদের মেলা হয়েছে, মানুষের সমাগমও কমবেশি হয়েছে। বইমেলার সঙ্গে আমাদের প্রাণের সম্পর্ক রয়েছে। এ ব্যাপারে কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ছিলেন অত্যন্ত সতর্ক।

দেশের একজন অগ্রগণ্য কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৩৪/৩৫টি হবে। এছাড়া উপন্যাস, শিশুতোষ গ্রন্থ, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা মিলিয়ে অর্ধ শতাধিক গ্রন্থের লেখক তিনি।

যতদূর মনে করতে পারি, হাবীবুল্লাহ সিরাজীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- দাও বৃক্ষ দাও দিন, মোমশিল্পের ক্ষয়ক্ষতি, মধ্যরাতে দুলে ওঠে গণেশ, নোনা জলে বুনো সংসার, সিংহদরজা, বেদনার চল্লিশ আঙুল, কতো কাছে জলছত্র, কতোদূর চেরাপুঞ্জি, সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না, কাদামাখা পা, যমজ প্রণালী। লেখালেখির জন্য একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন এ কবি। আসলে এসব বিষয় বলার দরকার ছিল না। কিন্তু কেনো যেনো বলে ফেললাম। হতে পারে ভেতর থেকে তৈরি হওয়া এক রকম শ্রদ্ধা-ভালবাসা থেকে। কারণ, তিনি আর দশজন কবির মতো ‘প্যাঁচের মানুষ’ নন। অতি সহজ, পণ্ডিত ও অসাধারণ এক গুণীজন। সৃষ্টিকর্তা তাঁর আত্মাকে যেনো শান্তিতে রাখেন, প্রার্থনা করি।

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়