মানবজমিন : দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে ডিজিটাল অপরাধ। বিশেষ করে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার কারণে এ অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফেসবুকে হ্যাকিং, ম্যাসেঞ্জারে অশ্লীল ছবি পাঠানো, আপত্তিকর পোস্ট, ই-মেইল আইডি হ্যাক, ফেক আইডি তৈরি করে ব্ল্যাকমেইল, সেক্সটোরেশন, মোবাইল ব্যাংকিং জালিয়াতি, মিথ্যা পোস্ট দিয়ে গুজব ছড়ানো ও ব্যক্তি অবমাননা করে পোস্ট দেয়ার মতো অপরাধের ঘটনাগুলো ঘটছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-কেন্দ্রিক অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে বেশি।
অনেকেই আবার তাদের ফেসবুক নিজস্ব অ্যাকাউন্ট ব্লকের শিকার হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, দেশে হাতে হাতে মোবাইল ফোন এবং দিন দিন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। সহজেই ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়া যাচ্ছে। অপরাধের প্যাটার্ন পরিবর্তন হচ্ছে।
এতে অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। এ ছাড়াও তথ্য-প্রযুক্তিতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে গিয়ে অনেকেই শখের বশে শিখছেন হ্যাকিং। পরে তারা ডিজিটাল অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) মোহাম্মদ হায়দার আলী খান জানান, ‘সাইবার অপরাধ ঠেকাতে কাজ করছে পুলিশ। কেউ এ অপরাধের শিকার হলে থানায় নিয়মিত মামলা নেয়া হয়। এ ছাড়াও পুলিশের বিভিন্ন অ্যাপসে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে থাকেন। সামাজিক মর্যাদা রক্ষার জন্য অভিযোগকারীর নাম প্রকাশ করা হয় না।’
পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে ঢাকা মহানগর পুলিশের হ্যালো সিটি অ্যাপস, ফেসবুক, মেইল ও হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে অভিযোগ এসেছে প্রায় ১৫০০টি। এ অভিযোগগুলোর তদন্ত করছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা। ফেইক আইডি, সেক্সটোরেশনের ক্ষেত্রে নারীরা শিকার হচ্ছেন বেশি। তবে মোবাইল ব্যাংকিং, ই- মেইল আইডি হ্যাকের ঘটনা নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি করে। আইডি হ্যাকের ঘটনা বেশি ঘটছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটিরও বেশি। বেশিরভাগ লোকজনই ফেসবুকে নিজের আইডি খুললেও তা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন না। হ্যাকাররা সহজেই ওইসব আইডি হ্যাক করে খোলামেলা ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করেও অর্থ আদায় করে হ্যাকাররা। হ্যাকাররা ফেসবুক আইডি টার্গেট করে হ্যাক করে। যেসব ফেসবুক আইডিতে ব্ল্যাকমেইল করার কোনো উপাদান থাকে না, সেসব আইডি ফেরত দেয়ার নামে অর্থ আদায় করে। নারীদের ক্ষেত্রে হ্যাক হওয়া আইডি দিয়ে নানারকম আপত্তিকর ছবি পোস্ট করার হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা।
সূত্র জানায়, ডিজিটাল অপরাধে জড়িত অপরাধীর মধ্যে তরুণদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এদের আবার বড় অংশ বেকার। এদের অনেকেই তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করার পর শখের বশে হ্যাকিং শিখেছে। পরে তারা ধীরে ধীরে ব্ল্যাকমেইলিং করে অর্থ আদায়ের মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে হ্যাকাররা মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণার কাজে জড়িয়ে পড়ছে। অধিক অর্থ আয়ের লোভে এ প্রতারণার কাজে লিপ্ত হচ্ছে তারা। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে কয়েক স্থানে যে এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি হয়েছে তা হ্যাকাররা করেছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে উঠে এসেছে।
সূত্র জানায়, সাইবার অপরাধ ঠেকাতে যে ধরনের ফরেনসিক ল্যাবরেটরি প্রয়োজন, সেরকম ফরেনসিক ল্যাবরেটরি এখনো স্থাপন করা যায়নি। মামলার তদন্তে ও বিচারিক পর্যায়ে ডিজিটাল সাক্ষ্য উপস্থাপনেও দুর্বলতা রয়েছে। ফলে সাইবার অপরাধীদের আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়াটাও কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ডিজিটাল অপরাধে দেশে সবচেয়ে বেশি সংঘটিত অপরাধটি হচ্ছে- বিভিন্ন ইস্যুতে গুজব ছড়ানো। দেশের যেকোনো ইস্যুতে একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে গুজব ছড়িয়ে দেয়। এতে তার সে তথ্যকে অনেকেই যাচাই-বাছাই না করে বিশ্বাস করে তারাও ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছে। তাতে রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়াও ম্যাসেঞ্জারে অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে কোনো কোনো নারীকে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে। কোনো কোনো দুর্বৃত্ত ফেক আইডি তৈরি করেও গুজব ছড়ানোসহ ব্যক্তি অবমাননাকর পোস্ট দিচ্ছে।
সূত্র জানায়, ডিজিটাল অপরাধের বিষয়ে পুলিশ আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়। বিশেষ করে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম বিভাগ ও পুলিশ সদর দপ্তরের সাইবার ক্রাইম অপরাধ ঠেকাতে প্রযুক্তির মাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :