শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২২ মে, ২০২১, ০৩:৪৫ রাত
আপডেট : ২২ মে, ২০২১, ০৩:৪৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বেড়েছে মানসিক রোগীর সংখ্যা

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশে ভয়াবহ হারে বাড়ছে মানসিক রোগী। প্রতি ১০০ জনের ৩৪ জনই মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত। ক্রমান্বয়ে এ হার বেড়েই চলেছে। আক্রান্তের মধ্যে তরুণের সংখ্যাই বেশি। বিষণ্ণতা ও অবসাদে ভোগা এসব রোগীর অনেকে একপর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। জড়িয়ে পড়ছেন মাদক, ধর্ষণ, জঙ্গিবাদসহ নানা অপরাধে। মানসিক হাসপাতালে বাড়ছে রোগী ভর্তি। করোনাকালে এ প্রবণতা আরও বেড়েছে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনাকালে মানসিক রোগের প্রবণতা, বিষণ্ণতা, উদাসীনতা বেড়েছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে করোনায় সংক্রমিত মানুষের প্রতি পাঁচজনের একজনের মধ্যে করোনার সঙ্গে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। আবার কভিড সংক্রমিত নন এমন ব্যক্তি এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে স্ট্রেস উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতা, প্যানিক অ্যাটাকের হার সাধারণ সময়ের চেয়ে বহুগুণ বেড়ে যায় বলে প্রমাণিত। এপ্রিল, ২০২১-এ ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, করোনা থেকে সেরে ওঠার প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই প্রতি তিন জনে একজনের মধ্যে এমন মানসিক সমস্যা দেখা গেছে যার চিকিৎসা প্রয়োজন। কভিডকালে বাংলাদেশে পরিচালিত কিছু গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর প্রায় ৩৩ শতাংশের মধ্যে অ্যাংজাইটি আর ৪৬ শতাংশের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণ পাওয়া গেছে। তবে শুধু করোনার কারণে নয়, দেশে মানসিক রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, আক্রমণাত্মক, সহিংসতামূলক আচরণ বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে এই চিকিৎসক বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো প্রযুক্তির ব্যবহার না শিখেই মানুষ তা ব্যবহার শুরু করেছে। তাই নেট এটিকেট বা অনলাইন এটিকেটের সঙ্গে তাদের কোনো পরিচয় নেই। এ ছাড়া মানুষের রুচির বৈকল্য প্রবল হচ্ছে। এগুলোর প্রতিফলন ঘটছে সমাজজীবনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ বুলেটিন, ২০১৮-এর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে প্রাপ্তবয়সীর মধ্যে ১৬ দশমিক ১ ভাগ মানসিক রোগে ভুগছেন। আর ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরের ১৮ দশমিক ৪ ভাগই মানসিক রোগে আক্রান্ত। অন্যদিকে ২০০৯ সালে হওয়া সর্বশেষ জাতীয় সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী প্রতি পাঁচজনের মধ্যে অন্তত একজন কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত।

বেকারত্ব, পরিবার ও কর্মস্থলে অবহেলা, পারিবারিক অশান্তি, যৌথ পরিবার ভেঙে সম্পর্কের বন্ধন আলগা হওয়া, মাদকের আগ্রাসন, জীবনযাপনে প্রযুক্তির অতিনির্ভরতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারকে মানসিক রোগের অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ সংখ্যা এখন কয়েক গুণ বেড়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি ১ লাখ মানুষে ছয়জন আত্মহত্যা করছেন মানসিক সমস্যার কারণে। মানসিক রোগের কারণে এখন সন্তানের হাতে বাবা-মা আর বাবা-মার হাতে সন্তান খুনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। খুন, ধর্ষণ বাড়ছে। অবসাদে ভোগা এসব রোগী মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো অবসাদগ্রস্ত এসব তরুণকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে সহজে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ফেলছে। চিকিৎসকরা বলছেন, কেউ মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে তার আচরণে নানা পরিবর্তন আসে। সারাক্ষণ মন খারাপ থাকা, কোনো কাজে উৎসাহ না পাওয়া, খাওয়া-দাওয়ার ইচ্ছা কমে যাওয়া, পড়াশোনায় অনাগ্রহ, নিজের যত্ন নিতে ইচ্ছা না করা, যে কোনো বিষয় ভুলে যাওয়া- এসবই মানসিক সমস্যার লক্ষণ। শিশুদের ক্ষেত্রে সব সময় বড়দের মতো লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। কিন্তু প্রায়ই শরীর খারাপের নানা অভিযোগ থাকে। ডাক্তারের কাছে নিলে রোগ পাওয়া যায় না। মানসিক সমস্যার কারণে এমনটা হতে পারে। এর মধ্যে প্রচুর সাইবার আসক্তির রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তারা মোবাইলে, ল্যাপটপে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, গেম, পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। কত বছর বয়সে একটা বাচ্চার হাতে মোবাইল দেওয়া হবে তার কোনো গাইডলাইন নেই। বড়রা হয়তো দেখছেন শিশুটি গেম খেলছে, কিন্তু সে নিজের অজান্তেই এমন একটা আসক্তিতে ঢুকে পড়ছে যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এজন্য সন্তানের সঙ্গে বাবা-মার ভালো যোগাযোগ থাকতে হবে বলে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। বেকারত্ব, হতাশা, জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন, প্রযুক্তিনির্ভরতা ও বিদেশি সংস্কৃতির প্রতি দুর্বলতায় বাড়ছে মানসিক অস্থিরতা। ব্যক্তিজীবনের অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, নানামুখী চাপ, কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা, অপ্রাপ্তি, লোভ, বিচারহীনতা মানুষকে হতাশায় ডুবিয়ে মানসিক রোগীতে পরিণত করছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বজুড়ে মানসিক রোগী বাড়ার অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে এ কারণগুলো।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উদ্বেগাধিক্যতে ৮ দশমিক ৪, বিষণ্ণতার চূড়ান্ত পর্যায়ে ৪ দশমিক ৬, গুরুতর মানসিক রোগে ১ দশমিক ১ এবং মাদকাসক্তিতে শূন্য দশমিক ৬ ভাগ লোক ভুগছেন। এসব কারণে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ক্রমেই বেড়ে চলেছে রোগীর সংখ্যা। তবে জনবল সংকটে রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মানসিক রোগী বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরাও। হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে শুধু বহির্বিভাগেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ২৭০ জনের। এ ছাড়া ইনডোরে ভর্তি হয়েছেন ২৪৮ জন; যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। করোনা সংক্রমণে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও থেমে নেই রোগী ভর্তি। করোনা পরিস্থিতি মানুষের মনঃস্বাস্থ্যে ফেলছে চরম বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

মানসিক চাপ কমে মেডিটেশনে : মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশনে আগ্রহী হচ্ছে মানুষ। যে কোনো বয়সের মানুষ প্রতিদিনই ধ্যান বা মেডিটেশন করতে পারেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। দেশে গতকাল পালিত হয়েছে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস। নিয়মিত মেডিটেশনে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব বাড়ে। মনের রাগ, দুঃখ, হতাশা, মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে মেডিটেশন। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বলছে, বিশ্বজুড়ে এখন প্রায় ৫০ কোটি মানুষ মেডিটেশন করে। এ বছর মেডিটেশন দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘নিয়মিত মেডিটেশন, সুস্থ, সফল, সুখী জীবন’। কোয়ান্টাম বলছে, ২০১৮ সালের এক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৫২ ভাগ প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্মীদের মেডিটেশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কারণ তারা দেখেছে, মেডিটেশন করা কর্মীর উৎপাদনক্ষমতা মেডিটেশন না করা কর্মীর চেয়ে শতভাগ বেশি। বাংলাদেশের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও সেদিকে ঝুঁকছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়