শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১২ মে, ২০২১, ০৩:৫৯ রাত
আপডেট : ১২ মে, ২০২১, ০৩:৫৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এম আমির হোসেন : অন্য আলো, অন্য জগৎ : বিজ্ঞান, ধর্ম এবং সংস্কৃতি

এম আমির হোসেন : ‘কেন, কীভাবে’- মোটা দাগে দুটি শব্দ। এই শব্দদ্বয় মানব মনের বড় দুটি সম্পদ। শব্দ দুটি অন্যান্য প্রাণিজগৎ থেকে মানুষকে পৃথক করেছে। ‘কেন’-র উত্তর খুঁজতে গিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেছে দর্শন, ধর্ম প্রভৃতি। আবার ‘কীভাবে’-র উত্তর খুঁজতে গিয়ে মানুষ তৈরি করেছে বিজ্ঞান। এসব নিয়ে মানুষ যে প্রক্রিয়ায় জীবনাচরণ করে তাহলো তার সংস্কৃতি। সাহিত্য সেই জীবনাচরণের ধারাভাষ্য বর্ণনা করে শুধু। একটি দিয়ে আরেকটিকে জাস্টিফাই করা, তুলনামূলক বিচার করা অপ্রয়োজনীয় ও হাস্যকর।

‘কেন ও কীভাবে’-বীজ দুটি থেকে উৎপন্ন সকল শাখা-প্রশাখা-উপশাখাই পরিবর্তনশীল। এদের পরিবর্তন ঠেকাতে যাওয়ার মতো মূর্খতা আর দ্বিতীয়টি নেই। দুষ্পরিবর্তনীয়তার এই আকাক্সক্ষা থেকে তৈরি হয় মৌলবাদ তথা মানসিক বৈকল্য যা এ যাবৎকালে মানবসৃষ্ট সকল যুদ্ধ, ধ্বংস, রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ডের প্রধানতম কারণ।

‘কীভাবে’- এই প্রশ্ন থেকে উৎপন্ন বিজ্ঞান কোয়ান্টিটিটিভ বা পরিমাণযোগ্য, যা যথার্থ প্রমাণ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। যেমন, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে-এটি প্রমাণ করা সম্ভব। অথচ এই সত্যটি সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে কয়েক হাজার বছর ধরে অনেক মানুষকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। দু’চার বছরেই এই সত্য প্রতিষ্ঠা পায়নি।

পক্ষান্তরে ‘কেন’-এই প্রশ্ন থেকে উৎপন্ন ধর্ম হলো একপ্রকার জীবনাচার তথা সংস্কৃতির অংশ, যা কোয়ালিটিটিভ বা গুণগত। অর্থাৎ যা পরিমাণ করা যায় না। সমাজের অনেক গভীরে এর মূল গ্রথিত। সর্বসাধারণের নির্ভরতার জায়গা, আইডিওলজিক্যাল মেশিনারি, সমাজ-হতে-সৃষ্ট অবিচারের সান্ত্বনা, সরল জীবনবোধ ও নৈতিকতার মানদণ্ড নির্ধারণকারী হিসাবে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ধর্মের মূল অনেক গভীরে, মূলরোম মানুষের অলিন্দে প্রবিষ্ট। কোয়ালিটিটিভ জিনিসকে ভুল প্রমাণ করা যায় না। সংস্কৃতির কোনো ভুল-শুদ্ধ নেই। একে সময়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সময়োপযোগী করতে হয়।

বর্তমানে শর্টকাটে জ্ঞানতত্ত্ব লাভ করা অতি-হিরোইজমে আক্রান্ত এক-প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, যারা সংস্কৃতির এই কোয়ালিটিটিভ উপাদানটির বিরোধিতা করাকেই প্রগতিশীলতার একমাত্র মাপকাঠি হিসাবে ভাবছে। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে অগ্রহণযোগ্য অশ্লীল-ভাষা প্রয়োগ করে ধর্ম ও ধর্ম-প্রচারকদের আক্রমণ করছে। এর প্রতিক্রিয়ায় নিরানব্বই ভাগের মানসে যে আঘাতপ্রাপ্তি ঘটছে, এর সুবিধা নিচ্ছে আরেকদল অতি-উগ্র ধর্মব্যবসায়ী ও সুবিধাবাদী রাজনৈতিক পক্ষ। এই সুযোগ নিয়ে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ আমাদের গ্রাস করতে চাইছে। যারা সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে তারা সমস্যায় পড়ছে। রাজনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, গণমানুষের অনুভূতিকে তোষণ করতে গিয়ে রাজনীতিতে হচ্ছে নেগেটিভ পোলারাইজেশন। যা প্রকারান্তরে সমাজের জন্য ক্ষতি বয়ে আনছে। প্রগতির চর্চা ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। ঝরছে অনেক নিষ্পাপ রক্ত। যে মেধাবী তারুণ্য শিক্ষা-সংস্কার আন্দোলন করতে পারতো, সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হতে পারত, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরেকটি শাহবাগ তৈরি করতে পারতো, সমাজের আনাচেকানাচে লুকানো ক্ষত সারাতে চেষ্টা করতে পারতো; সঠিক নির্দেশনার অভাবে তারা আজ ‘সব সমস্যার মূল’ হিসাবে ধর্মকেই বেছে নিচ্ছে। যেন সমাজে আর কোনো সমস্যা নেই, মানুষের ভোগান্তির আর কোনো কারণ নেই। প্রজন্মের এই বিভ্রান্তি, এই ভুল-ডায়াগনোসিস, চিন্তার এই দারিদ্র্য কবে ঘুচবে? সমাজে সত্যিকারে সু-পরিবর্তনের জন্য যে মাটি দরকার সে মাটি সুচিন্তা ও সঠিক-দর্শন দিয়েই চাষযোগ্য ও ঊর্বর করতে হয়।

এ দেশের মাটি বড়ই ঊর্বর, পাথুরে মাটি নয়, মরুভূমি নয়; এ দেশের মাটি নরম পলিমাটি। বিভক্তি নয়, বড় মন নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তখনই আমরা উন্নত দিন পাবো-সুশিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের উজ্জ্বল ফসল তুলতে পারব ঘরে। লেখক : চিকিৎসক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়