শিরোনাম

প্রকাশিত : ১০ মে, ২০২১, ০৪:৪৮ সকাল
আপডেট : ১০ মে, ২০২১, ০৪:৪৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বেতন-বোনাস পরিশোধ: মালিকদের দাবির সঙ্গে শিল্প পুলিশের তথ্যে বিস্তর ফারাক

বণিক বার্তা: উৎসব-পার্বণে কর্মীদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ নিয়ে প্রতি বছরই শিল্প খাতে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়। কভিড পরিস্থিতির মধ্যেও এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। ঈদকে সামনে রেখে শিল্প-কারখানাগুলোতে আজকের মধ্যে কর্মীদের বেতন-বোনাস পরিশোধের প্রতিশ্রুতি ছিল। শিল্প মালিকদের দাবি, এখন পর্যন্ত ৮০ শতাংশের বেশি কারখানায় কর্মীদের প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। যদিও শিল্প মালিকদের এমন দাবির বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে শিল্প পুলিশের তথ্যে।

নারায়ণগঞ্জের নিট পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কটন পাওয়ার এক্সেলের কর্মী সংখ্যা তিনশর বেশি। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে কারখানাটি। মালিককেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে বকেয়া বেতনের প্রত্যাশায় কর্মীরা প্রতিদিনই প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় ধরনা দিয়ে যাচ্ছেন। যদিও শিল্প মালিক সংগঠনগুলোর দাবি, শ্রমঘন পোশাক শিল্পের আকার অনেক বড়। ফলে এ শিল্পে দু-একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অস্বাভাবিক নয়।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনের সক্রিয় সদস্য কারখানার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৮০০। এর সিংহভাগই কর্মীদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছে। অবশিষ্ট কারখানাগুলোয় এখনো বেতন-বোনাস পরিশোধের কার্যক্রম চলছে।

বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, আমাদের সংগঠনের সদস্য কারখানাগুলোর মধ্যে ৮৯ শতাংশেরই বেতন পরিশোধ হয়েছে। বোনাস পরিশোধ হয়েছে ৮৫ শতাংশ কারখানায়।

শিল্প মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর তথ্য অনুযায়ী, আট শতাধিক সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি কারখানা বেতন - বোনাস পরিশোধ করেছে।

বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বেতন-বোনাস নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা নেই। বেতন প্রায় অনেক কারখানায় পরিশোধ হয়ে গেছে। কাল-পরশুর মধ্যে বাকি সব পরিশোধ হয়ে যাবে। দু-এক জায়গায় সমস্যা আছে, যেগুলো সব সময়ই থাকে। প্রশাসনকে আমরা পরিষ্কার বার্তা দিয়েছি যে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ না করে এভাবে পলাতক থাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। আমাদের আজকের হিসাব অনুযায়ী ৮০ শতাংশের বেশি কারখানায় বেতন-বোনাস হয়ে গেছে।

তবে দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির দায়িত্বে থাকা শিল্প পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য কারখানাগুলোর ১২ শতাংশ গতকাল বিকাল পর্যন্ত এপ্রিলের বেতন পরিশোধ করেছে। আর বোনাস পরিশোধ করেছে ৩১ শতাংশ কারখানা। তবে এ সংখ্যা কিছুটা বেশি হবে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গতকাল বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছে এমন সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ চিত্রটি আজ সকালে পাওয়া সম্ভব হবে। কারণ বরাবরের মতো ঈদের আগের দিন পর্যন্ত বেতন-বোনাস পরিশোধ কার্যক্রম চলবে। আর সন্ধ্যার পরও বেতন-বোনাস পরিশোধ করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনা—এ ছয়টি এলাকা শ্রমঘন বলে বিবেচিত, যার আইন-শৃঙ্খলা তদারকির দায়িত্বে আছে শিল্প পুলিশ। সংস্থাটির তথ্যমতে, এসব এলাকায় বস্ত্র, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, আসবাব, সেলফোন সংযোজন, ওষুধ ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে মোট কারখানা আছে ৭ হাজার ৯৮২টি। এর মধ্যে গতকাল বিকাল পর্যন্ত বেতন অপরিশোধিত কারখানার হার ৭৮ শতাংশ। আর বোনাস অপরিশোধিত কারখানার হার ৭২ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিল্প কেন্দ্রীভবনের কারণেই ছয় শিল্প এলাকায় একক খাতভিত্তিক কারখানার সংখ্যা বেশি। ফলে বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানার আধিক্য আছে। বেতন-বোনাস পরিশোধের চিত্রেও কেন্দ্রীভবনের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। ছয় শিল্প এলাকায় ৪০-৪১ লাখ শ্রমিক বিভিন্ন খাতের কারখানাগুলোতে কাজ করছেন।

গতকাল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পবিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ টিসিসির সভা। সার্বিক পরিস্থিতি ও ঈদের ছুটি নিয়ে সরকারি নির্দেশনা পরিপালন বিষয়ে এ সভায় আলোচনা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি ছুটি তিনদিনই। এর বাইরে মালিক-শ্রমিক আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার শর্তে দু-একদিন বেশি ছুটি দিতে পারবে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

শিল্পসংশ্লিষ্ট মালিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সদস্য কারখানাগুলোকে এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সভায় উপস্থিত মালিক প্রতিনিধিরা আগামীকালের মধ্যে প্রায় শতভাগ কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের আশ্বাস দেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান সভা শেষে জানান, ঈদের সরকারি ছুটি তিনদিন। গার্মেন্টসসহ সব শিল্প খাতের শ্রমিকদের ছুটি পাওনা থাকলে কারখানা পর্যায়ে মালিক-শ্রমিক সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে অবশ্যই কর্মস্থলে থাকতে হবে। মালিকরা আজকের মধ্যে অবশ্যই শ্রমিকদের বেতন-বোনাসসহ সব পাওনা পরিশোধ করবেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে সবাইকে নিজ নিজ কর্মস্থলে ঈদ উদযাপন করার নির্দেশনা দিয়েছে। কষ্ট করে হলেও মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি যাবেন না। যেখানে আছেন এবারের ঈদ সেখানেই উদযাপন করুন। এতে আপনি যেমন নিরাপদে থাকবেন, আপনার পরিবার-পরিজন নিরাপদ থাকবে, দেশ নিরাপদে থাকবে।

গতকাল শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভার পরিপ্র্রেক্ষিতে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র জানিয়েছে, ছুটি শ্রমিকের অধিকার। কোনো অজুহাতেই পাওনা ছুটি থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করা যায় না। তাদের অভিযোগ, ঈদের ছুটির আগাম ক্ষতিপূরণ হিসেবে এপ্রিলের প্রতিটি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শ্রমিকদের জেনারেল ডিউটি করানো হয়েছে। এখন এসে লকডাউন ভঙ্গ হওয়ার অজুহাতে শ্রমিকদের ছুটি কেটে রাখা হচ্ছে।

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতারা আরো বলেন, লকডাউন কার্যকর করার বিষয়টির সঙ্গে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্রমিকের পাওনা ছুটি সম্পর্কিত করা হচ্ছে। বস্তুত ঈদের ছুটিতে যাতায়াত করতে পারা না পারার বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলাজনিত। লকডাউনে সব পেশার মানুষ নিজ গৃহে অবস্থান করলেও গার্মেন্ট শ্রমিকদের কারখানায় কাজ করানো হয়েছে। এখন শ্রমিকদের পাওনা ও অর্জিত ছুটি কেটে রাখতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে নানা যুক্তি প্রচার করা হচ্ছে। নেতারা কোনো অজুহাতে শ্রমিকদের ছুটি কেটে না রাখার দাবি জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়