নিউজ ডেস্ক: ভারত থেকে আমদানি করা ২০ হাজার টন চালের খালাস তথা পরিবহণ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন খাদ্য বিভাগের পরিবহণ ঠিকাদাররা। চট্টগ্রাম বন্দরে শুক্রবার বিকাল থেকে তারা চাল পরিবহণ বন্ধ রেখেছে। অভিযোগ উঠেছে, রপ্তানিকারক ভারতের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত নিম্নমানের (৬০ শতাংশ ভাঙা বা খুদ) চাল সরবরাহ করেছে। এরপরও এসব চালের নমুনা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খাদ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা চাল সরবরাহকারীর সঙ্গে যোগসাজশ করে চাল খালাসের চেষ্টাও করেন। কিন্তু ঠিকাদারদের অনমনীয় মনোভাবের কারণে শনিবার দুপুর পর্যন্ত চাল খালাস শুরু করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিম্নমানের চাল আমদানির বিষয়টি নজরে আসার পর তারা (খাদ্য বিভাগ) খালাস কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) জহিরুল ইসলাম খান চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ পরিদর্শনে গেছেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মাসের শুরুতে ভারত থেকে ২০ হাজার টন আতপ চাল নিয়ে ‘এমভি ড্রাগন’ নামে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এই চাল সরবরাহ করেছে ভারতের ‘এগ্রো কর্পস ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এর শিপিং এজেন্ট ছিল ‘সেভেন সি’স শিপিং লাইন। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভেড়ার পর খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা চাল খালাসের নানা আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। বুধবার খাদ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমদানি করা চালের নমুনা সংগ্রহ করেন। তা ল্যাবে পরীক্ষাও করা হয়। পরীক্ষা করে চালের গুণগতমান ভালো ও খাওয়ার উপযোগী বলে প্রতিবেদন দেওয়ার পর খালাস প্রক্রিয়া শুরু হয়। খাদ্য পরিবহণ ঠিকাদাররা শুক্রবার বিকালে পরিবহণের জন্য খালাস শুরু করলে দেখতে পান যেসব চাল আনা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের। অনেকটা খুদের কাছাকাছি, যা চালের পর্যায়ে পড়ে না। এর পরপরই সংশ্লিষ্ট খাদ্য পরিবহণ ঠিকাদাররা চাল পরিবহণে অস্বীকৃতি জানান। তারা ট্রাকে লোড করা চাল পুনরায় জাহাজে লোড করে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বিপাকে পড়েন। সূত্র জানায়, বড়জোর ২ থেকে ৩ শতাংশ চাল ভাঙা থাকতে পারে এবং তা গ্রহণ করা যায়।
খাদ্য পরিবহণ ঠিকাদাররা জানান, শুক্রবার বিকালে প্রোগ্রাম (খাদ্য বিভাগে পরিবহণ ব্যবস্থাকে প্রোগ্রাম বলা হয়ে থাকে) অনুযায়ী ট্রাক নিয়ে খালাস করতে গেলে দেখতে পায় আমদানি করা চাল খুবই নিম্নমানের। মুরগির খাবারের চেয়েও নিকৃষ্ট। তাদের দাবি, নিম্নমানের চাল সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপো সিএসডি কিংবা লোকাল স্টোরেজ ডিপো বা এলএসডিতে পরিবহণ করে নিলে কৃর্তপক্ষ তা গ্রহণ করবে না। উল্টো ঠিকাদারদের দায় দিয়ে বলবে মাঝ পথে এসব চাল বদল করা হয়েছে। এতে ঠিকাদাররা ভোগান্তিতে পড়বেন। এ কারণে ঠিকাদাররা এসব নিম্নমানের চাল ক্যারিং বা পরিবহণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র অভিযোগ করেছে, ‘যারা নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চাল ভালো বা পজিটিভ প্রতিবেদন দিয়েছেন, তারা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। তা না হলে এমন রিপোর্ট দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
খাদ্য বিভাগের পরিবহণ ঠিকাদার ফজলে রাব্বি যুগান্তরকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে ভারত থেকে আসা ২০ হাজার টন চালের পরিবহণ কার্যক্রম তারা বন্ধ রেখেছেন। কেননা এসব চাল নিম্নমানের, যা পরিবহণ করে এলএসডি বা সিএসডিতে নিলে কর্মকর্তারা গ্রহণ করবে না। এতে আমাদের ঘাড়েই উলটো দায় পড়বে। ’
চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের সহকারী রসায়নবিদ রফিকুল ইসলাম চালের এই চালান প্রসঙ্গে শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘আপার লেয়ার বা উপরের স্তর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। জাহাজে ভেতরের লেয়ার থেকে নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এ কারণে ওই চালানে হয়তো নিম্নমানের চাল থাকতে পারে।’ চট্টগ্রাম চলাচল ও সংরক্ষণ কার্যালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সার্বিক) ফরিদুল আলম যুগান্তরকে জানান, ‘শুক্রবার জাহাজ থেকে চাল খালাস শুরু হয়েছিল। কিন্তু চাল অত্যধিক ভাঙা হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে খালাস স্থগিত করা হয়েছে। পরে বিষয়টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও শিপিং এজেন্টকে জানানো হয়েছে।’ - যুগান্তর
আপনার মতামত লিখুন :