এম.ইউছুপ রেজ : [২] নিহত নারীর ভাইপো নিরুপম দাশ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পেশায় একজন চিকিৎসক নিরুপম দাশ চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান প্রশাসকও।
[৩] শুক্রবার (৭ মে) নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে দেয়া একটি পোস্টে নিরুপম দাশ নিজের অনুভূতি তুলে ধরেছেন ঠিক এইভাবে— ‘গতকাল আমার মাকে (পিসিকে তিনি মা সম্বোধন করেছেন) গোসল করাইছে, কাপড় পরাইছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জামে মসজিদের পাশের একটা রুমে খালারা।
[৪] লাশ বহন করেছে, পুরো দাহ করার সময় উপস্থিত ছিলেন দুই জন হুজুর। সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন তারা। যেখানে আমাদের আত্মীয়-স্বজন ছিলেন না, সেখানে তারা দুইজন অন্য ধর্মের হয়েও সাথে ছিলেন। আমার সহকারীসহ আল মানাহিল ফাউন্ডেশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
[৫] চট্টগ্রামে করোনায় মৃতব্যক্তির দাহ কাজ সম্পাদনে সুনাম কুড়িয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আল মানাহিল। নতুন করে হিন্দু নারীর দাহ কাজ সম্পন্ন করে আবারো আলোচনায় আসেন স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনটি। হিন্দু নারীর স্বজন ছাড়াই অন্য ধর্মের লাশের শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছেন সংগঠনের সদস্য আসাদুল্লাহ, ইসমাইল ও আবদুল্লাহ। তারা তিনজনই মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছেন।
[৬] মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় এখন আল মানাহিল টিমের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। এ প্রসঙ্গে আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘করোনার শুরু থেকেই আমরা এই কাজ করে চলেছি। এই পর্যন্ত আমরা প্রায় দুই হাজারেরও বেশি লাশ দাফন ও সৎকার করেছি। এর মধ্যে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একশ জনেরও বেশি মানুষ ছিলেন। এই দুর্যোগে মানুষই তো মানুষের পাশে দাঁড়াবে।’
[৭] তিনি বলেন, ‘তাদের মা একদিন টিভিতে দেখেন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় করোনায় মৃতদের লাশ ফেলে চলে যাচ্ছে। সেটা দেখে তিনি আমাদের (মহিলার অন্য সন্তানদেরসহ) বলেছিলেন চট্টগ্রামে যদি এমন পরিস্থিতি হয় তাহলে তোমরা গিয়ে দাফন করবা। আল্লাহ কপালে যা রাখছে তা হবে। ভয় পাবা না।’
[৮] এরপর থেকেই তারা চট্টগ্রামে লাশ দাফন ছাড়াও হাসপাতাল নির্মাণ করে ফ্রি চিকিৎসা, ইফতার সাহরি দেওয়াসহ বিভিন্ন মানবিক কাজে যুক্ত আছেন।
[৯] বৃহস্পতিবার বিকালে মা ও শিশু হাসপাতালে করোনা বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই হিন্দু নারী। এরপর থেকে লাশ সৎকার পর্যন্ত কিছু হুজুর আমাদের সাথে ছিলেন। রাত সাড়ে তিনটায় বোয়ালখালীর উত্তর ভূষিতে আমাদের বাড়িতে সৎকার করেছি। এমন পরিস্থিতিতে আল মানাহিলের সদস্যরা যেভাবে এগিয়ে এসেছেন সেটি আমরা চিরজীবন মনে রাখবো।’ সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ