শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৫ মে, ২০২১, ০৭:২৯ সকাল
আপডেট : ০৫ মে, ২০২১, ০৭:৩৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হাসিনা আকতার নিগার: অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই যেন এখন অন্যায়

হাসিনা আকতার নিগার: একটা বৈরী পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলছে জীবন। গত বছর করোনার মহামারিতে মানুষের মাঝে মৃত্যু ভয় ভীতি ছিল বলে একটা পরিতাপ বোধ কাজ করত। তখন প্রকৃতির বিচার মনে করে সবাই আশা করেছিল এ সমাজে একটা পরিবর্তন আসবে। অন্যায় অবিচার, অনিয়ম,দূর্নীতি কমে যাবে।কিন্তু হিসাবটা ভুল।মানুষ করোনাকে জয় করার প্রচেষ্টায়রত থাকতে থাকতে নিজের ক্ষমতা, দাম্ভিকতা দিয়ে সমাজে আমিত্ব জাহিরে আবার ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিজেকে বদলে দিতে পারাটা সহজ কাজ নয়। আসলে অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়া মানুষ সহজে সুপথে আসে না। কারন তারা জানে মানুষের পৃথিবীতে তারা হলো রাজাধিরাজ। তাদের অর্থের কাছে নতজানু সকল নিয়ম নীতি,আইনের অনুশাসন সহ সরকার প্রশাসন।
দ্বিতীয় ধাপে অনেক মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে কারোনায় আক্রান্ত হয়ে। এ ভাইরাসের কাছে অর্থের প্রাচুর্যতাও নগন্য। কারণ টাকা থাকলেই এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব নয়। শুধু মাত্র সামাজিক দূরত্ব আর ঘরবন্দী জীবন দমাতে পারে এ ভাইরাসকে। যদি গভীরভাবে চিন্তা করে তাহলে বুঝা যায়,ক্ষুদ্র এ ভাইরাস দিয়ে প্রকৃতি কতটা অসহায় করে তুলে মানুষকে তার কঠোর বিচার দিয়ে। তবুও মানুষ সংশোধিত হচ্ছে না। হয়তো বা এ বধিরতার কারনে মানুষ অমানবিক আচরণ করে নিজের সুখ খুঁজে নেয় দূর্নীতি অনিয়ম আর হানাহানি করে।

করোনার কারনে লক ডাউন হলে জীবিকার জন্য অতি সাধারণ মানুষরা হয় আতংকিত। কারণ তাদের কাছে প্রাত্যহিক জীবনে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করাটাই অনেক বড় সমস্যা। আরেক শ্রেনির কাছে লক ডাউন হলো ব্যবসায় অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নেয়ার সময়। অন্যদিকে গরীবের ত্রাণ নিয়ে নয়ছয় নিয়ে এখন কথা বলাই বৃথা।কারন বাংলাদেশে সরকারের ত্রানকে কিছু অসাধু মানুষ মনে করে ব্যক্তিগত সম্পত্তি।

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে সামাজিক ও গণমাধ্যম সরগরম। গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে কথা হচ্ছে মুনিয়ার আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। একই পেশার মানুষ একে অপরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি করে কাকে সুযোগ করে দিচ্ছে তা হয়তো বিজ্ঞজনরা ভালো জানেন।

মুনিয়ার আত্মহত্যার মামলাটি এখন বিচার্য বিষয়। আদালত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কতটা সঠিক বিচার করে তার দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। গণমাধ্যম কেন কথা বলছে না তার কারনটা অলিখিত হলেও সবার জানা। বর্তমান সময়ে গণমাধ্যম ব্যবসায় পরিনত হয়েছে। সেখানে কেউ চাইলেও অনেক কিছু করতে পারে না এ সত্যটা স্বীকার করতে পারলে কলমে স্তম্ভিত হতো না।
অন্যদিকে কে কতটা অপরাধী সে বিচার করার আগে একটা মেয়েকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে তা ভাষাহীন।একজন পতিতা কেন পতিতা হয় তার ইতিহাস না জেনে তাকে গালি দেয়া এ সমাজের স্বভাব। অথচ রাতের অন্ধকারে সে পতিতার কাছে যায় এ সমাজের ভদ্রবেশী মুখোশ পরা কিছু মানুষরা। সুতরাং দিনের আলোতে কথা বলার আগে ভাবুন কারো স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে কতটা অন্যায় করছেন অন্যের প্রতি।

এদেশে বিত্তবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অন্যায় করে পার পেয়ে যাবার ঘটনা নতুন নয়। ক্ষমতার পালাবদল হয় কিন্তু বিত্তশালীদের অবস্থান থাকে অনড়। কেননা এদের কাছে জিম্মি রাষ্ট্র, সমাজ।অন্যদিকে আইনের ফাঁক ফোকরের সুযোগ নিয়ে তারা সমাজে নিজেদের অবস্থান স্বচ্ছ করে অত্যন্ত সচতুরতার সাথে।

দেশের গণমাধ্যমে খবরে অতলে ঘটনা হারিয়ে যায়। কেননা সংবাদ প্রবাহমান। আজ পর্যন্ত এদেশে কত হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি তার ব্যাখ্যা কেউ চায় না। সাংবাদিক সাগর রুনী হত্যার বিচার নিয়ে এখন কেউ প্রশ্ন তুলে না। তনু হত্যার বিচার হয়নি। সাগর রুনী তনুকে যেমন মানুষ ভুলে গেছে তেমনি ভুলে যাবে মুনিয়াকে। শুধু আদালতে বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনবে পরিবার পরিজন।

প্রতিদিন হাজারো অন্যায় ঘটছে। তার কটা খবর আসে জনসম্মুখে সে খবর কেউ রাখে না।

তার চেয়েও বড় কথা হলো সামগ্রিক বিবেচনায় এখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই যেন অন্যায়। দিন দিন মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়া জীবনে কলমের শক্তিটা ম্রিয়মাণ হচ্ছে। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে আবার উন্নয়নের নামে দূর্নীতিবাজরা সরকারকে বেসামাল পরিস্থিতিতে ফেলছে।কিন্তু এসব নিয়ে কথা বলা যায় না।যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার হুঁশিয়ার করে দেয়া সত্বেও রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা দলকে ব্যবহার করে নানা ধরনের অনিয়ম দূর্নীতি অন্যায় করে, তখন সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে ভয় পায়।

কারণ সবাই জীবনের নিরাপত্তা চায়।পরিবারের কোন সদস্য অন্যায়ের প্রতিবাদ করে কারো রোষানলের শিকার হোক তা কেউ চায় না। তার চেয়ে বড় কথা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয় সম্মিলিতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে।

এখন সে একতার বড় অভাব।আত্মকেন্দ্রিক জীবনে নিজে ভালো থাকাটা এখন মুখ্য বিষয়। তাই অর্থ আর পেশিশক্তির জয়জয়কার আর নীরব দর্শক ছা -পোষা মানুষেরা।

লেখক : কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়