রহিদুল খান: [২] যশোরের মৎস্য রেণুপোনা ব্যবসায় নানামুখি প্রতিকূল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে মৎস্য খাতে যশোরের যে অভাবনীয় সাফল্য তা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। উদভূত পরিস্থিতিতে পেশায় টিকে থাকতে সরকারের সহযোগিতার দাবি করেছেন এ ব্যবসায় সম্পৃক্তরা।
[৩] যশোরের চাঁচড়া মৎস্য পল্লী নামে খ্যাত। এখানে পর্যায়ক্রমে হ্যাচারি গড়ে উঠেছে ৭৭ টি। হাপা (পোনার জলাশয় আড়ৎ) রয়েছে অন্তত: ১০০টি। জেলাজুড়ে গড়ে উঠেছে ছয় হাজার নার্সারি। জেলার দুই লাখ মানুষ মৎস্য পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত বছরের শুরু থেকে করোনা ভাইরাসের প্রভাব, পোনার দাম কমে যাওয়া, বিদ্যুৎ বিল অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়াসহ নানামুখি সংকটে বন্ধ রয়েছে অর্ধেক হ্যাচারি।
[৪] শোরের হ্যাচারিগুলো রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, সিলভার কার্প, গ্রাসকার্প, মিরর কার্প, বিগহেড, জাপানি, আইড়, তেলাপিয়া, মনোসেক্স তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, শিং, কই, থাই কই, থাই সরপুটি, হাঙ্গেরী প্রভৃতি মাছের রেণুপোনা উৎপাদন করে।
[৫] সূত্র জানিয়েছে, হ্যাচারিগুলোতে মাছের ডিম থেকে রেণু উৎপাদন হয়। সেই রেণু কিনে নিয়ে যান নার্সারি ব্যবসায়ীরা। তারা তাদের জলাকারে ১০-১৫ দিন রাখেন। এরপর বড় জলাকারে চালাই করা হয়। সেখানে এক থেকে দেড় মাস রাখার পরে আনা হয় হাপায় (পোনার জলাশয় আড়ত)। হাপা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায় পোনা মাছ। এই হাপা গড়ে উঠেছে যশোরের চাঁচড়া বাবলাতলা এলাকায়। এখানে প্রতিদিন এক থেকে দেড় কোটি টাকার পোনা বেচাকেনা হয়।
[৬] মৎস্য পেশায় সম্পৃক্ত সূত্র জানিয়েছে, মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত রেণুপোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। স্বাভাবিক অবস্থায় হ্যাচারিগুলোতে বছরে আড়াই লাখ কেজি রেণুপোনা উৎপাদন করা হয়। দেশের মোট চাহিদার ৬০ ভাগ রেণু পোনা যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাব, বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি, মাছের দাম কমে যাওয়াসহ অন্যান্য কারণে এখন পোনা উৎপাদন তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে।
[৭] কথা হয় পোনা ব্যবসায়ী শাহেদুজ্জামান লালুর সাথে। তিনি জানান, অন্যান্য বছর শীতকালেও কিছু বৃষ্টিপাত হয়। আবার গরমের শুরু থেকেও বৃষ্টি হয়। সবমিলে পুকুর বা জলাকারে পানি থাকে, যাতে মানুষ পোনা ছাড়েন। কিন্তু এবার শীতকালে বৃষ্টি হয়নি। এখন বাংলা বছরের বৈশাখ অর্ধেক পার, মে মাস শুরু হলেও কোন বৃষ্টি নেই। তাই পুকুর জলাশয়ে পানি নেই। থাকলেও তা পোনা ছাড়ার মত নয়। সে কারণে এবছর এখনো পোনা ব্যবসা শুরু হয়নি। প্রচণ্ড গরমে পোনা বাড়ছেও না। আবার পোনা নার্সারিতে রেখে পানি সেচ দিতে হচ্ছে। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে আরো কিছুদিন চললে লোকসানের মুখে পড়বেন নার্সারি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে যানবাহন সমস্যায় বাইরের ক্রেতারা আসতে পারছেন না।
[৮] যশোর জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার বলেন, আমাদের পোনা সেক্টর কৃষি না শিল্প তা এখনো পর্যন্ত সরকার সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারেনি। আমরা মনে করি আমাদের কার্যক্রম শিল্প নয়, কৃষি। সরকার এটাকে শিল্পের আওতায় এনে বিদ্যুৎ বিল অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আবার শিল্পের কোন সহযোগিতা আমারা পাচ্ছি না। প্রকৃত মৎস্য ব্যবসায়ীরা বিগত দিনে প্রণোদনা পায়নি এবং এখনো পাচ্ছে না।
[৯] এ বিষয়ে যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, আমাদের মৎস্য খাতে করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যশোরের মৎস্য খাতে অন্যান্য কিছু সমস্যা বিরাজ করছে। মৎস্য ব্যবসায়ীরা সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন। কিন্তু জেলায় এর কোন ফাণ্ড নেই। বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবগত করেছি।
আপনার মতামত লিখুন :