ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে গত এক দশকে গণমাধ্যমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও ‘রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক আঁতাত’ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মুক্ত সাংবাদিকতা, গণমাধ্যমের পেশাদারিত্ব ও স্বাধীন তথ্য প্রবাহের ক্ষেত্রে ‘বড় বাধা’ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, “কর্পোরেট পুঁজির সুরক্ষায় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় তার অনুমোদনের ফাঁদে, দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক কাঠামো নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকদের পেশাগত ও জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা ঝুঁকির নতুন সব উদহারণ তৈরি করেছে।”
টিআইবি বলছে, কোভিড-১৯ মহামারীকালে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের পেশাগত ও অর্থনৈতিক এই ঝুঁকি আরও প্রকট হয়েছে। বহু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য সাংবাদিক চাকুরিচ্যুত কিংবা পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন।
মুক্ত গণমাধ্যম এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহের সাংবিধানিক বাধ্যবাধতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে অবিলম্বে স্বাধীন ও পেশাদার গণমাধ্যমের ‘অনুকূল পরিবেশ’ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
প্রতিবছর ৩ মে বিশ্বজুড়ে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ বা মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ দিবসটি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে ‘তথ্য জনগণের পণ্য’। ইউনেস্কো প্রতিবছর নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদানের পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন নানামুখী চাপ ও বিধিনিষেধের বেড়াজালে সাংবিধানিক এই অধিকার মলাটবদ্ধ নথিতে রূপান্তরিত হয়েছে। আর মুক্ত গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের পেশাগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারার ব্যর্থতা সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে যেমন দূর্বল করেছে, তেমনি জনগণের অবাধ ও নিরপেক্ষ তথ্য লাভের অধিকার খর্ব করছে।”
তিনি বলেন, “বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমের মালিকানা ব্যবসায়ীদের হাতে। এই ব্যবসায়ী মহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে ‘মিডিয়া ক্যাপচার’ বা ‘গণমাধ্যম জবরদখল’ এখন বলতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পেয়েছে। ফলে পেশাদার সাংবাদিকরাও অনেক ক্ষেত্রে তাদের সুরক্ষায় সংবাদ প্রচার কিংবা গোপন করতে বাধ্য হচ্ছে এবং পেশাগত দায়বদ্ধতা নিশ্চিতে ব্যর্থ হচ্ছে; যা মুক্ত গণমাধ্যমের বিকাশই শুধু বাধাগ্রস্ত করছে না, গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটও প্রকট করে তুলেছে।”
টিআইবি বলছে, মহামারীতে সাংবাদিকদের তথ্যের ‘অভিগম্যতা’ এবং মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহে প্রতিকূলতা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও স্পর্শকাতর প্রতিবেদন প্রকাশের সুযোগ ‘সঙ্কুচিত’ করেছে।
“আবার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের গ্যাঁড়াকলে সংবাদ কিংবা তথ্য প্রকাশের দায়ে গণমাধ্যম, সাংবাদিক, লেখক, কার্টুনিস্টদের বিরুদ্ধে মামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন এবং কারান্তরীণ অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও অবাধ তথ্য প্রবাহের সাংবিধানিক ও আইনি প্রতিশ্রুতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের নামান্তর।
“অথচ কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ভ্যাকসিনের মতই জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করে গুজব ও ভুয়া তথ্যের নিয়ন্ত্রণমুক্ত সাংবাদিকতা হতে পারত কার্যকর ভ্যাকসিন।”