এএইচ রাফি: [২] ইফতারের প্রায় আধা ঘণ্টা থেকে একঘন্টা আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ভ্যানগাড়ি নিয়ে ছুটে চলেন তারা। খুঁজে খুঁজে বের করেন ফুটপাতে থাকা ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষদের। তাদের হাতে তুলে দেন ইফতারের প্যাকেট। প্রতিদিনের এমন দৃশ্যটি চোখে পড়ে জেলা শহরবাসীর।
[৩] বিগত কয়েক বছর যাবত প্রতি রমজানে মাসব্যাপী এই কাজটি করেন 'ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া' নামের একটি সংগঠন। শুধু তাই নয় জেলা শহরের আনাচেকানাচে সহ বিভিন্ন স্থানের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করার উদ্যোগ নেন এই সংগঠনটি।
[৪] গত বছর ও এই বছরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে লকডাউনের পাশাপাশি মাহে রমজান মাস এসে পড়ায় জনজীবন অনেকটা বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষ আয় বঞ্চিত হয়ে পরিবার নিয়ে দুমুঠো খাদ্যের অভাবে কষ্টে জীবন যাপন করছে। আর হতদরিদ্র মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। ফুটপাতে থাকা মানুষ গুলোও খাদ্যের অভাবে দিনযাপন করছে। এসব মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে ‘ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া’। সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য ইফতার নিয়ে হাজির হচ্ছেন সংগঠনের সদস্যরা।
[৫] গত বছরও এই কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল সংগঠনটি। সংগঠনের সদস্য ও দাতাদের চাঁদার টাকায় প্রতিদিন দেড়শতাধিক ফুটপাতে থাকা ছিন্নমূল মানুষ ও রিকশা চালককে ইফতার করাচ্ছেন তারা। বৃহস্পতিবার ১৬ রমজান পর্যন্ত সংগঠনটি ২হাজার ৪০০জন মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করেছেন। ইফতারের মধ্যে থাকে ছোলা বুট, মুড়ি,খেজুর, পিয়াজু, আলুর চপ ও বেগুনী। এছাড়া মাঝে দেওয়া হয়েছে মুরগী ও পোলাও বিতরণ করা হয়েছে।
[৬] এছাড়াও শহর ও শহরের আশপাশের এতিমখানা গুলোতেও ইফতার সরবরাহ করছে সংগঠনটি। একেক দিন একে এতিমখানায় তারা ইফতার পৌঁছে নিজেরাও ইফতার করেন এতিম শিশুদের সাথে।
[৭] ‘ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র প্রতিষ্ঠাতা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আমাদের একটি গ্রুপ আছে। সংগঠনে আমাদের সক্রিয় অনেক সদস্য আছে। গ্রুপের সদস্য, সক্রিয় সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাদের এই ইফতার বিতরণ কাজে অর্থসহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা নিজেদের সাধ্যমতো এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি'।
[৮] তিনি বলেন, 'ইফতারের আগমুহূর্তে আমাদের সদস্যরা সুবিধাবঞ্চিতদের কাছে হাজির হন ইফতারের প্যাকেট নিয়ে। প্রতিদিন জেলা শহরের মসজিদ রোড, কালীবাড়ি, ফকিরেরপুল ও রেলস্টেশন সহ ভ্যানঘাড়ি-অটোরিকশা দিয়ে বিভিন্ন গলিতে অবস্থানরত মানুষদের ইফতার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও শহরের আশপাশের এতিমখানাগুলোতেও একেক দিন একেকটিতে আমরা ইফতার সরবরাহ করছি। আমাদের এই কার্যক্রম পুরো রোজার মাসজুড়ে চলবে।
[৯] উল্লেখ্য, গত প্রায় ৪বছর আগে 'ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিচ্ছন্ন শহর গঠনে ভূমিকা রাখতে ইতিমধ্যে প্রজেক্ট পরিচ্ছন্ন শিক্ষাঙ্গণের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ‘গ্রিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামেও একটি প্রজেক্ট চালু করেছে সংগঠনটি। এছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে ডাস্টবিন স্থাপন ও বৃক্ষরোপণ করেছে তারা।