ডেস্ক রিপোর্ট: হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির পর নতুনভাবে সংগঠন গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নতুন কমিটিতে কারা কীভাবে থাকবেন, তা নিয়ে হেফাজতের ভেতরে নানা মত আছে। তবে সরকার চায়, রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কেউ যেন নতুন কমিটিতে জায়গা না পায়। বিশেষ করে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকপন্থি ও যুব মজলিসের সদস্যদের ঠাঁই নতুন কমিটিতে না হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আহমদ শফী ও সদ্য সাবেক আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর লোকজনকে সমন্বয় করে কমিটি হতে পারে। হেফাজতের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে তথ্য রাখেন- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান।
পুলিশের অপর একজন কর্মকর্তা জানান, বাবুনগরীর কমিটিতে শফিপন্থি কাউকে পদ দেওয়া হয়নি। বাবুনগরী তার লোকজন নিয়ে মূলত কমিটি তৈরি করেছিলেন। কমিটির অধিকাংশ সদস্য কোনো না কোনো রাজনীতির সঙ্গে সংশ্নিষ্ট। হেফাজতের কোনো কর্মসূচিতে জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনায় রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা সামনে-পেছনে থেকে ইন্ধন দেয়। দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের এক ধরনের আঁতাত আছে। এ কারণে হেফাজতের ব্যানারে অন্য রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা তারা বাস্তবায়ন করে। হেফাজতের যে অংশটি কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় তারাও চায় সংগঠনটি রাজনীতিমুক্ত থাকুক।
জানা গেছে, আহমদ শফী মারা যাওয়ার পর বাবুনগরীর নেতৃত্বে কমিটি হয়। পরে শফীর ছেলে আনাস মাদানী ও তার লোকজন পাল্টা কমিটি ঘোষণার উদ্যোগ নিলেও তা বেশিদূর এগোয়নি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে নেওয়া কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক তাণ্ডবের পর চাপে পড়ে হেফাজত। ঘরে-বাইরে নানামুখী চাপে কমিটি বিলুপ্ত করেন জুনায়েদ বাবুনগরী। এরপর দ্রুত পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি বিলুপ্তির পরপরই শফীপন্থিরা দ্রুত তাদের নেতৃত্বে নতুন কমিটি করার ঘোষণা দেন। তবে কয়েকদিনে হেফাজতের নতুন কমিটি নিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে এক ধরনের সমঝোতার আভাস পাওয়া গেছে। আগে শফীপন্থি ও বাবুনগরীপন্থিদের মনোভাব ছিল কট্টর। কেউ কারও পক্ষের একজনকে নিজস্ব বলয়ে তৈরি কমিটিতে রাখার পক্ষপাতী ছিলেন না। এখন বাবুনগরীর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে যারা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, তুলনামূলক উদার তারা নতুন কমিটিতে জায়গা পেতে পারেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, হেফাজতের পাঁচ সদস্যের কমিটির সদস্য বাড়িয়ে ১০ করার কথা ভাবা হচ্ছিল। তবে হেফাজতের ভেতর থেকে একটি অংশ নীতিনির্ধারণী মহলকে বলছে, আপতত পাঁচ সদস্যের কমিটি দিয়ে সংগঠনটি চলতে পারে। সদস্য বাড়ালে নানামুখী নতুন রাজনীতি ঢুকতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, হেফাজত নতুন কমিটি ঘিরে এক ধরনের সংস্কারের মধ্যে গেলেও চলমান অভিযানে কোনো ভাটা পড়বে না। সম্প্রতি যারা নাশকতায় জড়িয়েছেন, তাদের দায়-দায়িত্ব সংশ্নিষ্টদের নিতে হবে। অনেকে মনে করছেন, বারবার নাশকতার পরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় হেফাজতের একটি পক্ষের মধ্যে কোনো ধরনের ভীতি কাজ করছে না। কোনো কর্মসূচি এলেই তারা পরিকল্পিতভাবে সংঘাতে জড়ায়। এবার হেফাজতের এই অংশের নেতাকর্মীদের ভুল ভাঙাতে চান সংশ্নিষ্টরা। নাশকতায় জড়ালে কেউ যে আইনের ঊর্ধ্বে নন- এই বোধ তাদের মধ্যে জাগ্রত করা হবে। মামুনুল ও তার সঙ্গে যারা বারবার নিরীহ মাদ্রাসাছাত্রদের উস্কে দিয়ে নাশকতায় জড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে থাকবে। আর উদারপন্থিদের নেতৃত্বের মাধ্যমে নতুনভাবে হেফাজতের পথরেখা তৈরি হোক- এটাই চায় সরকার। সূত্র: সমকাল
আপনার মতামত লিখুন :