আবদুল হাই সঞ্জু: একটি টেলিভিশনের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা আর অন্য কয়েকটি গণমাধ্যমের সহযোগিতায় হেফাজতে ইসলামকে আপাতত কোণঠাসা করতে সমর্থ হয়েছে সরকার। এখানে সরকার এবং কতিপয় গণমাধ্যম- দুই পক্ষেরই স্বার্থ আছে। সরকারের স্বার্থ নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত রাখা আর গণমাধ্যমগুলোর স্বার্থ আদর্শিকভাবে হেফাজতকে পরাজিত করা। অবশ্য সরকারের ক্ষমতায় থাকার পরিপূরক হিসাবেও কিছু গণমাধ্যম কাজ করছে বলে অনেকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।
কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে দেখা যেতে পারে দুই পক্ষই খুব বেশি অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। কারণ
[১] হেফাজতে ইসলামের সাথে আওয়ামী লীগ কিংবা বড় রাজনৈতিক দলগুলোর স্থায়ী ডিভোর্সে ঘটাতে সক্ষম হবে না গণমাধ্যম। নির্বাচন কেন্দ্রিক বন্ধুত্ব থাকবেই। এছাড়াও ধর্মীয় নেতা হিসেবে সকল বড় দলের লোকেরা হুজুরদের গুরুত্ব দেন। এই গুরুত্ব এতো দ্রুত নিষক্রিয় করা যাবে না।
[২] পুনর্গঠিত সরকারপন্থি হেফাজতের কতিপয় নেতাকে দিয়ে সম্ভব হলেও বৃহৎ অংশকে দিয়ে মূর্তি স্থাপনের পক্ষে ফতোয়া আদায় করে আনা সম্ভব হবে না।
সরকারের পক্ষে এবং চিহ্নিত কিছু গণমাধ্যমের ডাকে সাড়া দেওয়া হুজুররা সংখ্যায় সীমিত এবং চিহ্নিত। তারা ইনিয়ে-বিনিয়ে মূর্তি স্থাপনের পক্ষে ফতোয়া দেবেন।
[৩] বলাৎকার বন্ধে অগ্রগতি হবে না। কারণ এসব বন্ধ করতে হলে মাদ্রাসাগুলোতে প্রচুর সরকারি বাজেট বরাদ্দ করতে হবে এবং মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা উন্নত ও আধুনিক করতে হবে। তথাকথিত এসব গণমাধ্যম মাদ্রাসা শিক্ষার অস্তিত্বই মেনে নিতে চায় না। তারা কেন মাদ্রাসাগুলোতে সরকারি অর্থ বরাদ্দের গুরুত্ব ও শিশু নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করবে? এবার আওয়ামীলীগ কীভাবে ব্যর্থ হবে, সে কথা বলি : হেফাজতে ইসলাম একটা বিশাল কেক। এতো বড় একটা কেক মুখে ঢুকিয়ে গিলে ফেলার মতো বড় মুখগহ্বর আওয়ামীলীগের নেই।
এটা আওয়ামী লীগও অনুধাবন করে। এজন্য তারা কেক থেকে মামুনুল, বাবুনগরী ইত্যাদি নামে যে কয়টি টুকরো রয়েছে, সেগুলো খেয়ে ফেলার চেষ্টা করবে। কিন্তু খাওয়ার পরও আওয়ামী লীগ নিজেই বিভ্রান্ত থাকবে এই ভেবে যে, তারা ঠিক মতো খেতে পেরেছে কিনা। কারণ একদিকে তারা খাবে, অন্যদিকে আবারও কেকটি পরিপূর্ণ রূপ ধারণ করবে। ভাঙা-গড়ার এই প্রক্রিয়াটিকে কাল্পনিকভাবে চিন্তা করলে অনেকটা ঞঊজগওঘঅঞঙজ ২ এর ভিলেনের মতো মনে হবে। তবে আওয়ামীলীগ-হেফাজতের মধ্যকার এই একচেটিয়া যুদ্ধে কে নায়ক আর কে ভিলেন, সেটা নির্ভর করবে আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন, তার ওপর।২৭ এপ্রিল ২০২১, লন্ডন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :