নাঈমুল ইসলাম খান: [১] আশা করা হচ্ছে মে মাসের কোনো একসময়ে ভারত বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাঠাবে।
[২] বর্তমানে ভারতের অভ্যন্তরীণ করোনা পরিস্থিতি মহাবিপদকাল অতিক্রম করছে। জুন - জুলাই মাস নাগাদ বাংলাদেশের কেনা ৩ কোটি টিকার অবশিষ্টগুলো ধাপে ধাপে পাঠানো শুরু হতে পারে। ইতোমধ্যে ভারত সেরামের টিকা থেকে বিপুল পরিমাণে কোভেক্সের জন্য রপ্তানি করেছে এবং বাংলাদেশকেও এপর্যন্ত ৭০ লাখ টিকা দিয়েছে ।
[৩ গত মার্চের শেষ দিক থেকে আগামী ২৯ এপ্রিল ভারতের তামিলনাড়ু, পদুচেরি, কেরালা, আসাম এবং পশ্চিম বঙ্গে রাজ্যসভা নির্বাচন চলছিলো।
[৪] ভারতে করোনার মহাপ্রকোপ এবং রাজ্যসভা নির্বাচন এই দুই চলতে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পাঠানো, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অভিঘাত বিজেপির জন্য রাজনৈতিক আত্মহনন হবে বিবেচনা করেই সম্ভবত মোদি সরকার বাংলাদেশে সেরামের অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা পাঠাতে দিচ্ছে না।
[৫] আমার ধারণা ২৯ এপ্রিল পশ্চিম বঙ্গে সর্বশেষ দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে কেন্দ্রিয় বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক ঝুঁকি অনেকখানি কমে আসবে।
[৬] একই সঙ্গে আগামী ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে ভারতে করোনার ভয়াবহতা কিছু নিয়ন্ত্রণে এসে এর প্রকোপ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
[৭] কেনা টিকা ভারত থেকে না আসার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থা অত্যন্ত অনিশ্চিত। সরকার দেশে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ভারতের ব্যাপারে অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে এই ৩ কোটি টিকার সম্পূর্ণ মূল্য বাংলাদেশ অনেক আগেই অগ্রিম পরিশোধ করে রেখেছে। এই বাস্তবতা বাংলাদেশের মানুষের মাথা থেকে যাচ্ছে না, যাবে না।
[৮] ধারণা করছি, ভারত অপেক্ষায় আছে যেনো বাংলাদেশের মানুষের ন্যায়সঙ্গত দাবি ও প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়ে বিজেপির ভোটের রাজনীতিতে ক্ষতি না হয় এবং করোনার ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে এসে নিম্নগামী হয়ে কিছুটা সস্তির পরিবেশ তৈরি হয়। হাফ ছাড়ার সময় পায়।
[৯] ভারতের কাছে বাংলাদেশের অব্যাহত বন্ধুত্ব অত্যন্ত জরুরি। সাম্প্রতিক সময়ে এই সম্পর্ক যতোটা শক্তিশালী হয়েছে তাকে দুর্বল করার হুমকি থেকে রক্ষা করার জন্য ভারত নিশ্চয়ই একটা কৌশলগত সুবিধাজনক সময়ের অপেক্ষায়। টিকা তারা দেবেই, মে মাসেই দিতে শুরু করবে।
[১০] টিকা তৈরির কাঁচামাল সরবরাহে কি সেরামে সংকট দেখা দিয়েছে? কাঁচামালের কি দাম বেড়েছে? ভারত থেকে টিকা আসতে দেরি হওয়ার পেছনে এই কারণগুলোরই কি কোনো প্রভাব আছে? আমাদের জন্য টিকার দাম ৪ ডলার কিন্তু ভারতের রাজ্য সরকার ০১ মে থেকে কিনছে ৫.৩৫ মার্কিন ডলারে। ভারতের বেসরকারি খাত কিনছে ৮.০৩ ডলারে। সেরামও অতিমুনাফা লোভী হয়ে যাচ্ছে? সেরাম যদি টিকা ২ ডলারেও বিক্রি করে তাতেও তাদের লাভ থাকার কথা। আমি এগুলোও ভাবছি। কত কিছুইনা ভাবতে হচ্ছে। অনুলেখক: ফাহমিদা তিশা