রাশিদ রিয়াজ : শনিবার রাত ১১টায় রাজধানীর মুগদাপাড়া থেকে রিকশায় উঠে রওনা দিলাম। গন্তব্য মধুবাগ, হাতির ঝিল। ইঞ্জিন রিকশাচালকের নাম জিজ্ঞেস করতেই সে জানাল তার নাম মোহাম্মদ রবিউল। বাড়ি গাইবান্ধা সদর। তিনমাস বাড়ি যেতে পারেন না। করোনাকালে অর্থসংকট এরপর লকডাউন। দিনকাল কেমন যাচ্ছে জিজ্ঞেস করতে অকপটে বলল, স্যার সময় খুব খারাপ। আগে দিনে খ্যাপ মেরে খাওয়া, ঘরভাড়া দিয়ে দিনে ৫’শ টাকা থাকত। এখন পয়সা তো দূরের কথা ধার দেনায় চলছি। বাড়ি যাব কিভাবে, কিছু পয়সা ছাড়া, রেল বন্ধ। স্ত্রী ও সাড়ে তিন বছরের ছেলে আছে বাড়িতে, বাবা দেখছেন তাদের। অল্প কিছু জমি জমাও আছে।
রাস্তা ফাঁকা। মুগদার গলি, মধ্য বাসাবো খেলার মাঠ, অলিগলি শেষে রিকশা চলছে ফ্লাইওভারের নিচে দিয়ে খিলাগাও রেলগেট অভিমুখে। এরপর মালিবাগ রেলগেট বায়ে রেখে আবুল হোটেলের গলি দিয়ে মধুবাগের শেষ প্রান্তে আমাকে নামিয়ে দিল রবিউল। কষ্টের কথা শোনায় রবিউল, কবে কেটে যাবে মহামারী। স্যার অনেক সময় পুলিশ ধরে ইঞ্জিন রিকশার জন্যে। ভাল পুলিশ হলে ৬শ আর ঘিরিঙ্গি হলে ১২শ। রিকশা ছাড়াইয়া না আনতে পারলে গ্যারেজে আর রিকশা পাওয়া যায় না। দিনে গরমে রিকশা চালানো যায় না। এরই মধ্যে ফোন করে রবিউল তার আরেক বন্ধু কাওরান বাজার তা জেনে নিল। বললাম সারারাত চালাবা, রবিউল জানায় না স্যার কাওরান বাজারে একটু আড্ডা মারমু। এরপর বাসায় ফিরুম।
কিছুক্ষণ নিঃশব্ধ রিকশা চালানোর পর হঠাৎ রবিউল বলে বসল, স্যার আল্লাহর দয়া অশেষ। কেমন জিজ্ঞেস করি। স্যার আমার ছেলেটা দেখতে খুবই সুন্দর, আশেপাশে অনেক ঘর থেকে দেখতে আসে ছেলেকে। ফোনে কথা বলি। বাড়িতে ফিরে যেতে বলে স্ত্রী। তয় খামু কি? একটু উপায় থাকলে ঢাকা ছাড়তাম, দেশে তো আর ঘর ভাড়া লাগে না। মধুবাগ এসে গেলে রবিউলের ফোন নম্বর জিজ্ঞেস করলাম, ০১৯৭৩৭৩৪৫৪৮ জানালো। এ্যান্ড্রোয়েড ফোন না থাকায় ছবি তুলতে পারলাম না। হাতির ঝিল পার হয়ে অফিস থেকে সাইকেল নিয়ে মিরপুর ফিরতে হবে। ফিরলামও বাসায় রাত ১২টা ৪৬ মিনিটে। তখনো মনে রবিউলের কথার প্রতিধ্বনি ঘুরপাক খাচ্ছে, স্যার আল্লাহর অনেক দয়া...
আপনার মতামত লিখুন :