সুজন কৈরী : বিবাহ বিচ্ছেদের পর সাবেক স্ত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে নিপীড়ন করেন এক স্বামী। সেই দৃশ্য তিনি ধারণ করে রাখেন মুঠোফোনে। আর তা দেখিয়েই দিনের পর দিন ওই নারীকে নানাভাবে হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন তিনি। উপায় না পেয়ে ওই নারী ঘটনার বিবরণ দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুকের অফিসিয়াল পেইজে বার্তা পাঠান। এরপর পুলিশের পদক্ষেপে হয়রানি থেকে মুক্তি পান ওই নারী। শাস্তির আওতায় আনা হয় নিপীড়ণকারী ওই ব্যক্তিকে।
রোববার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভুক্তভোগী নারী বরিশালের বানারীপাড়ার বাসিন্দা। একই এলাকার ইয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর স্বামী কারণে-অকারণে তাকে শারীরিক অত্যাচার-নির্যাতন করতেন। সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ করেন ওই নারী। দুষ্ট স্বামী তা মেনে নিতে পারছিল না। তাই তাকে একদিন বরিশাল জেলখানার মোড় থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তার হাত পা বেঁধে তাকে নিপীড়ন করে। তার নগ্ন ছবি ধারণ করে রাখে এবং তা দিয়ে তাকে হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওই নারী বিষয়টি তিনি পুলিশকে জানান। এক পর্যায়ে এই বিষয়টি জানিয়ে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরিচালিত ‘বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ’ এর ইনবক্সে বার্তা পাঠান।
তার বার্তাটি পেয়ে বরিশালের বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখা এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো তা জানাতে বলে। এরই প্রেক্ষিতে, ওই নারীর স্বামীকে থানায় ডাকা হয়। নারীকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়। তার অভিযোগের বিপরীতে অভিযুক্তের বক্তব্য শোনা হয়। বক্তব্য সন্তোষজনক এবং অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়ায় অভিযুক্তকে তখনই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
সাবেক স্বামীর নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়ে ওই নারী সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি পুলিশকে লেখেন, ‘আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের জন্য আমি সঠিক বিচার পেয়েছি। আপনাদের ঋণ শোধ করার মত আমার তৌফিক নেই, কিন্তু ইনশাআল্লাহ আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন আপনাদের জন্য নামাজে বসে দোয়া করে যাবো।’
ওই নারী আরও লেখেন, ‘আমার পিতা ও বড় ভাই না থাকার কারণে আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে মুখ বেঁধে ইচ্ছামত মারধর করেছে। আমি এখনো রাতে ঘুমাতে পারি না তার সে মাইরের ভয়ে। ইনশাআল্লাহ, আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন আপনাদের জন্য দোয়া করে যাবো। মহান আল্লাহ যেনো আপনাদেরকে আমাদের মত অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেন।’
আপনার মতামত লিখুন :