রহিদুল খান: চোখে দেখি না কানেশুনি না চলতেও পারি না একা, তবে ক্ষুধা লাগলে রাক্ষসী পেটটা বড্ড ঝামেলা করে। আল্লাহ আমার মরণ দেবে কবে ?। মরলে বাঁচি, আর পারছি না। কেন যে আল্লাহু দুনিয়ায় পাঠাইল। তিনি আরো বলেন, স্বামী বেঁচে থাকতে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অতি কষ্টে দিন চলেছে। পরের বাড়ীতে কাজকাম করে সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দিয়েছি। এখন আর পারিনা। আপনার সন্তানরা খেতে দেয় না ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের তাই চলে না। সকলেই ভ্যান-রিশকা চালায়। তাদের সংসারে দু-বেলা দুমুঠো খাবার জুগাতেই তারা নাজেহাল। কান্না জড়িত কন্ঠে এ কথাগুলো বললেন বয়সের ভারে নুয়েপড়া আয়শা খাতুন।
তার বাড়ী চৌগাছা পৌর এলাকার হুদো চৌগাছা গ্রামে। ২৩ এপ্রিল আয়শা খাতুনের বাড়ীতে গিয়ে জানা যায়, ভোটার আইডিতে ৯০ বছর হলেও বাস্তবে তার বয়স একশর উপরে। স্বামী মইজ উদ্দীন মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। তার পরেও তিনি বয়স্ক অথবা বিধবা ভাতা পান না। দীর্ঘ জীবনের শেষে শরীর আর চলছে না। তবুও যে কয়দিন বেঁচে থাকি রাক্ষসী পেটে দু বেলা দু-মুঠো খাবার তো দিতে হবে ?। আমি কি সরকারি ভাতার কার্ড পাবো না ?
বর্তমানে আয়শা খাতুন ছেলে ফজের আলীর বাড়ীতে একটি টিনের ছুপড়িতে খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি বলেন পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরদের নিকট বার বার গিয়েও কোন লাভ হয়নি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া আয়শা খাতুন আজ পর্যন্ত বয়স্ক ও বিধবা ভাতা পাননি। শেষ বয়সে ঠিকমত দু-বেলা দু-মুঠো ভাতও ঝুটছে না।
ভ্যান চালক ছেলে ফজের আলী বলেন, আমার অভাবের সংসার জুটাতে পারলে মাকে খেতে দিই, না পারলে দিনের পর দিন মা না খেয়ে থাকেন। ছেলে ফজের আলী ও বৌমা মধুমালা বলেন, আর কত বয়স হলে মা বয়স্ক অথবা বিধবা ভাতা পাবেন।আয়শা খাতুন ৬ ছেলে ও ২ মেয়ের জননী। ছেলে মেয়েদের সকলের বিবাহ হয়ে গেছে। এদের মধ্যে বড় ছেলে কাঞ্চন আলী মারা গেছে, আজেহার আলী ভ্যান চালায়, আনছার আলী ঢাকায় রিকশা চালায়, দেলোয়ার হোসেন শ্বশুর বাড়ীতে থাকেন সেখানে ক্ষেত মুজুরের কাজ করেন, ফজের আলী ভ্যান চালান, কওছার আলী যশোরে থেকে রিকশা চালান। এক কথায় বলা চলে এ পরিবারটি দিন আনা দিন খাওয়া। সকলেই পরিবার পরিজন নিয়ে কোন মতে বসবাস করেন।
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড তাকে দেওয়ার দরকার। সে প্রকৃত অসহায় ও পাওয়ার যোগ্য। এবার কার্ড আসলে প্রথমেই তাকে দেব ইনশাল্লাহ।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, বয়স্ক অথবা বিধবা ভাতার তালিকা স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা করে থাকেন। আমরা কেবল মাত্র অনুমোদন দিয়ে থাকি। তার নাম কেন আসেনি সেটা আমার জানা নেই। তবে এ বছর সরকারি সকল ভাতার কার্ড বন্ধ রয়েছে। তার পরেও কার্ডধারী কেউ যদি মারা যান বা কোন কারণে কার্ড জমা হলে তাকে দেওয়ার ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, আগামী রবিবার আমার নিকট ঐ মহিলার ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে আসতে বলেন, দেখি কিছু করা যায় কিনা।
আপনার মতামত লিখুন :