কূটনৈতিক প্রতিবেদক:[২] বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন এক বিবৃতিতে বাঁশখালীতে শ্রমিকদের উপর পুলিশের গুলি পরবর্তী হত্যার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, সরকারকে পুলিশের ক্রমবর্ধমান নিষ্ঠুরতার এবং ৫ জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা নিশ্চিত করতে হবে।
[৩] সভা-সমাবেশ করার অধিকার নাগরিকের মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে আর্টিকেল নাইনটিনের বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেছেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশের গুলির ঘটনা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন এবং বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার ক্ষুণ্ন করে।
[৪] আর্টিকেল নাইনটিন লক্ষ্য করছে সা¤প্রতিককালে আয়োজিত অনেকগুলো মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়েছে। পুলিশ নিষ্ঠুরভাবে সভা-সমাবেশ দমন করছে, বিশেষ করে, নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের ঘটনা ঘটে চলেছে।
[৫] ফারুখ ফয়সল বলেন, শ্রমিকরা দাবি করেছেন যে, তারা ভাল কর্ম পরিবেশ, ঈদ বোনাস, রোজার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্ম ঘণ্টা নির্ধারণ, কাজের সময় পর্যাপ্ত বিরতি, অন্যায় ছাঁটাই বন্ধ করা ইত্যাদি দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছিলেন যেখানে পুলিশ বিনা উস্কানিতে তাদের উপর গুলি চালানো শুরু করে। এতে ৫ জন শ্রমিক প্রাণ হারান এবং আরও অনেকে গুরুতর আহত হন।
[৬] কোভিড -১৯ মহামারীটি অব্যাহত থাকায় শ্রমজীবী ও দৈনন্দিন বেতনে কাজ করা শ্রমিকদের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের যথাযথ মজুরি না পরিশোধ করা বাংলাদেশ শ্রম আইন এবং মৌলিক মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন।
[৭] এস আলম গ্রুপ বিশেষত এইরকম কঠিন সময়ে তাদের কর্মীদের বেতন ঠিক ভাবে দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এই ধরণের ঘটনার নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এস আলম গ্রপকে বাংলাদেশ শ্রম আইন যথাযথ ভাবে মেনে চলতে হবে।
[৮] পুলিশ রেগুলেশন, ১৯৪৩ অনুসারে যেকোন গণতান্ত্রিক সমাবেশে পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সর্বশেষ উপায় হিসেবে ন্যূনতম শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে। এই শক্তি প্রয়োগের উদ্দেশ্য হবে সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া এবং কোনো পরিস্থিতিতেই কাউকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তা করা উচিত নয়।
[৯] বাঁশখালীর ঘটনায় দেখা যায়, পুলিশ আইনটি অনুসরণ করেনি এবং ন্যূনতম সংযম ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের উপর এ ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালে স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদের মুখে পুলিশ তাদের উপর গুলি চালায়। এতে সে সময় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
[১০] আর্টিকেল নাইনটিন সরকারকে সংবিধান স্বীকৃত নাগরিকের সভা সমাবেশ করার অধিকার নিশ্চিত করা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের নাগরিক-রাজনৈতিক অধিকার চর্চায় বাধা দেওয়া থেকে বিরত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।
আপনার মতামত লিখুন :