আশরাফ আহমেদ: [২] যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো, অমূল্য রতন “-প্রবাদ বাক্যের মতো ছাই কুড়িয়ে নয়, গ্রামের বাড়ি বাড়ি কয়লা কুড়িয়ে মাথায় বহন করে কামারের নিকট বিক্রি করে দারিদ্র্যতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়ে আজ স্বাবলম্বী এমনই একজন মানুষ তার নাম মোঃমনির হোসেন।
[৩] বয়স ৭২। দীঘ ৬০ বছর ধরেই গ্রামের বাড়ি বাড়ি মহিলাদের রান্না করা লাকড়ির কয়লা সংগ্রহ করে কামারদের দোকানে বিক্রি করেন। এই বৃদ্ধ বয়সেও প্রতিনিয়ত প্রত্যুষে ছুটে চলেন এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে। খুঁজতে থাকেন লাকড়ির কয়লা। গ্রামের মহিলারা বাড়িতে রান্না করার পর কয়লাগুলো সযত্নে উঠিয়ে রাখেন তারপর তারা প্রতীক্ষায় থাকেন কখন আসবেন তিনি। মহিলাদের কাছ থেকে এক সময় বিনামূল্যে কয়লা আনতে পারতেন। তবে এখন আর বিনামূল্যে কয়লা আনতে পারেন না।
[৪] গ্রামের মহিলারাও এখন অর্থের বিনিময়ে কয়লা বিক্রি করে তারাও বাড়তি উপার্জন করছেন। কয়লা সংগ্রহ হলে তারপর এনে রাস্তার পাশে রোদে শুকিয়ে তা নিয়ে যান কামারদের দোকানে। কামাররা শুকনো কয়লাগুলো বেশি পছন্দ করেন।
[৫] মোঃ মনির হোসেনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার পদুরগাতি গ্রামে। অভাবের সংসারের কারণে লেখাপড়া হয়ে ওঠেনি। বয়স তখন সবে মাত্র ১২। সেই থেকেই শুরু করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে কয়লা সংগ্রহ।
[৬] কয়লা এনে কামারদের দোকানে বিক্রি করতে থাকেন। সংসারে দুই ছেলে ও চার মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন ও ছেলে দুইজনকে কয়লার বিক্রির টাকায় বিদেশে পাঠিয়েছেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইতোমধ্যে নিজে থাকার জন্য বাড়ি তৈরি করেছেন এবং হোসেনপুর পৌরসভার ভিতর ১৫ কাঠা জমি ক্রয় করেছেন। প্রতিদিন কয়লা বিক্রি করে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা উপার্জন হয় তার। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দেশে সিলিন্ডার গ্যাস আশায় গ্রামে এখন লাকড়ি রান্না কমে যাচ্ছে। ফলে পূর্বের মদো এখন আর কয়লা পাওয়া যায় না।
[৭] মনির বলেন, ৬০ বছর ধরে কয়লায় ব্যবসা করে আজ আমি অনেক কিছু করতে পেরেছি। অভাবের সংসার থেকে এখন আমি অনেক টাকার মালিক। তবুও কেন এ পেশায় এখনো জড়িত আছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, অনেক পূর্ব থেকে এই ব্যবসা করে আসছি। তাই এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ঘরে বসে থাকতে মন চায় না। আজও এই কয়লায় ব্যবসা ধরে রেখেছি। অলস্য কখনো সুখ দিতে পারে না, পরিশ্রমই পারে সকল সুখ এনে দিতে পারে। সম্পাদনা: হ্যাপি