শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: কী পাচ্ছে বাংলাদেশ, কী হারাতে পারে? ◈ রাতেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হচ্ছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা (ভিডিও) ◈ চাপাতি হাতে ব্যাগ ছিনিয়ে পুলিশের সামনেই হেঁটে গেলো ছিনতাইকারী, ভিডিও ভাইরাল ◈ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ভারতের বৃহত্তম তেল শোধনাগার নায়ারা রিফাইনারির ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা ◈ রাতের আকাশে ভেসে উঠলো ‘নাটক কম করো পিও’ (ভিডিও) ◈ জটিল ভয়ানক যে রোগে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! ◈ কুড়িগ্রামে চাঁদা দাবি করা জামায়াতের সেই নেতা সাময়িক বহিষ্কার ◈ বড়াইগ্রামে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে দুই বিষয়ে দুই পরীক্ষার্থী ফেল! ◈ টাঙ্গাইলে পুলিশ হেফাজতে বিএনপি নেতার রহস্যজনক মৃত্যু ◈ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ তলিয়ে দেখা দরকার: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

প্রকাশিত : ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৫ রাত
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:১৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শাহাজাদা এমরান : সংবেদনশীল রাজনৈতিক নেতা ছিলেন খসরু ভাই

শাহাজাদা এমরান : সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের নব-নির্বাচিত সভাপতি ,কুমিল্লা-৫(বুড়িচং-ব্রাক্ষ¥ণপাড়া) নির্বাচনী এলাকা থেকে পাঁচবার নির্বাচিত এমপি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এড.আবদুল মতিন খসরু। তিনি আমাদের এপেক্স ক্লাব অব কুমিল্লার সাবেক সভাপতিও ছিলেন। ছিলেন এপেক্সের জাতীয় পর্যায়ের নেতাও। এই পরিচয়ের বাহিরেও তাঁর অনেক অনেক আরো বড় বড় পরিচয় আছে।কিন্তু এ গুলোর কোনটাই ব্যক্তি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ন কখনো মনে হয়নি। তার যে পরিচয়টি আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে সেটি হলো, তিনি একজন সংবেদনশীল রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। আপাদমস্তক একজন ভদ্র লোক ছিলেন।

এমপি আবদুল মতিন খসরু ভাইয়ের সাথে আমার ব্যক্তিগত ভাবে খুব বেশী সম্পর্ক ছিল না। আনুষ্ঠানিক কোন আয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে কখনো একসাথে বসে চা-ও খাওয়া হয়নি। কিন্তু একজন সংবাদকর্মী হিসেবে সুযোগ হয়েছে তার সাথে অসংখ্যবার কথা বলার ও শোনার। ফোনে তার কথা বলার ষ্টাইল ছিল অত্যন্ত নিচু গলায় এবং আস্তে আস্তে। যে কোন আক্রমনাত্মক প্রশ্ন করলেও কখনো তিনি উত্তেজিত হতেন না। বরং ঠান্ডা মাথায় উত্তরটি নিজের মত করে দিয়ে প্রতিবেদককে ফোন রাখার আগেই তার পক্ষে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। এটা ছিল তার মুন্সিয়ানা। এই গুণটি আমাদের কুমিল্লার অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতার মধ্যে পাওয়া যায় না। মতিন খসরু ভাইয়ের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে বলেই আজ তাকে পরম শ্রদ্ধাভওে, মমতার সাথে স্মরণ করছি।

আমাদের দেশের প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই একটি দলের একাধিক প্রার্থী মাঠে কাজ করে। কুমিল্লা-৫ নির্বাচনী এলাকাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই আসনে তখন মাঠে ছিল ব্যারিস্টার শোহরাব হোসেন চৌধুরী ও আবদুস ছালাম বেগ। খসরু ভাইয়ের কর্মীরা এই দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর পোস্টার , ব্যানার ও ফেস্টুন যেখানেই পায় সেখানেই ছিঁড়ে ফেলে। এই পোষ্টার ছিঁড়া নিয়ে দৈনিক আমাদের কুমিল্লা, কুমিল্লার জমিন.কম ও দৈনিক মানবকন্ঠে একাধিক নিউজ করি। একদিন বিকালে বুড়িচংয়ের সিনিয়র সাংবাদিক সৌরভ মাহমুদ হারুন হোটেল মিয়ামী থেকে আমাকে ফোন করে বলে ভাই, খসরু ভাই একটু আপনার সাথে কথা বলতে চায়, নেন কথা বলেন। এই কথা বলেই হারুন খসরু ভাইকে তার ফোনটা দিয়ে দিল আমার সাথে কথা বলার জন্য। আমি সালাম দিয়েই জানতে চাইলাম, খসরু ভাই আপনি কেমন আেেছন। জবাবে তিনি একেবারেই ন¤্র সুরে বললেন, এমরান, ভাল থাকব কিভাবে, তুমি যদি ভালো না রাখ। আমি হাসি দিয়ে বললাম, ভাই, ভালো তো রাখবেন আল্লাহ্। আর আমার দ্বারা কি আপনার কোন ক্ষতি হয়েছে। তিনি হেসে বললেন, মনোনয়ন পেতে বা এমপি হওয়ার মত কোন ক্ষতি হয়নি। তবে তোমার নিউজে মাঝে মাঝে বিব্রত হতে হয় আমাকে। আর তোমার আমাদের কুমিল্লায় আমার নিউজ গুলো ভিতরে সাদা কালো পাতায় আসে। ভাইকে একটু কভারেজ দেওয়া যায় না। যে কোন প্রয়োজনে ভাইকে ফোন করবা। তুমি তো কখনও আমার কাছে আসোনি। কাছে না আসলে তো আন্তরিকতা বাড়ে না। একটু খেয়াল রাখিও। দেখা হবে, কথা হবে। ভালো থেকো। এই বলে সেদিন তিনি ফোনটা রেখে দিলেন। পরে সাংবাদিক সৌরভ মাহমুদ হারুন থেকে শুনলাম, মিয়ামী হোটেলে বুড়িচংয়ের একদল কর্মী আমার বিরুদ্ধে কথা বলে খসরু ভাইয়ের কান ভারী করার চেষ্টা করছিল। তখন খসরু ভাই উপস্থিত থাকা সাংবাদিক হারুন কে বলল, এমরানকে একটু লাগাও আমি কথা বলি। এই ছিল এড.আবদুল মতিন খসরু। অথচ এই জেলারই কোন কোন এমপি একই অভিযোগে সাংবাদিকদের ফোন করে বাপ মা তুলে বকা দিতেও কার্পণ্য করেননি।
গত ১৪ এপ্রিল বুধবার আসর নামাজ পড়ে সাংবাদিক মহিউদ্দিন মোল্লাকে অন্য একটা বিষয়ে ফোন দিলে সে রিসিভ করেই জানাল খসরু ভাই মারা গেছেন-এই খবরটি দিবেন? আসলে আমি তখনো জানতাম না যে খসরু ভাই মারা গেছে। খসরু ভাই লাইফ সাপোর্টে আছেন এ কথাটি জানার সাথে সাথেই মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল। মনে মনে আল্লাহর কাছে তার সুস্থতার জন্য দোয়া করলেও কেন জানি খসরু ভাইয়ের সুস্থ হয়ে ফিরে আসার ব্যাপারে আমার মন আশাবাদী হয়ে উঠতে পারেনি। হয়েছেও তাই। যা আমরা কখনো কামনা করিনি। কারণ, এড.আবদুল মতিন খসরু ভাইয়ের মত রাজনীতিবিদের সংখ্যা আমাদের কুমিল্লা তথা দেশে যেই হারে কমছে সেই হারে উঠে আসার কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। তাদের শূণ্যস্থান গুলোর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে কিন্তু পূরণ হচ্ছে না। একই নির্বাচিনী এলাকার চার চার বার নির্বাচিত এমপি অধ্যক্ষ মো. ইউনুস স্যারও মারা গেলেন কিছুদিন আগে। তিনি আমাকে অত্যান্ত ¯েœহ করতেন। কুমিল্লা-৫ নির্বাচিনী এলাকা বলতে অধ্যক্ষ ইউনুছ আর আবদুল মতিন খসরুকেই বুঝাতে। এই দুই জন সাবেক এমপি ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন অনেক আগেই। বুড়িচং ব্রা²ণপাড়ার লোকজন দেশের এ যাবত ১১টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ৯টিতেই আস্থা রেখেছিলেন তাদের দুই জনের উপর। তাদের মত মহিরুহ নেতৃত্ব বুড়িচং ব্রা²ণপাড়ার লোকজন আর কোন দিন পাবে কিনা সময়ই তা বলে দিবে।
এপারে ভালো ছিলেন, ওপাড়েও ভাল থাকেন মহান আল্লাহর কাছে এই দোয়া করি খসরু ভাই আপনার জন্য।

শাহাজাদা এমরান,কুমিল্লা
লেখক : সাংবাদিক,সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়