শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল, ২০২১, ০১:২৯ দুপুর
আপডেট : ১৫ এপ্রিল, ২০২১, ০১:২৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিয়ে বাণিজ্যে নিঃস্ব বহু প্রবাসী, দূতাবাসের সন্দেহে হয়রানির শিকার প্রকৃত ভিসা আবেদনকারীরা

ডেস্ক রিপোর্ট: চুক্তিভিত্তিক নয়, সামাজিকভাবে বিয়ের মাধ্যমে কেউ স্ত্রী, আবার কেউ স্বামী কর্তৃক প্রতারিত হচ্ছেন। সামাজিক বিয়ের আড়ালে বিয়ে বাণিজ্যের কবলে পড়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বহু প্রবাসী নিঃস্ব হয়েছেন। বিয়ে বাণিজ্যের শিকার হয়ে তাদের জীবনে নেমে এসেছে দুর্বিষহ যন্ত্রণা। কেউ যন্ত্রণা কেউ কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন, আবার দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে ঘরহীন হয়ে পথে পথে ঘুরছেন। thikana.us

অন্যদিকে বিয়ে বাণিজ্যের বিষয়ে সন্দেহ বাড়ছে ঢাকার আমেরিকান দূতাবাসের। এসব ঘটনায় ভিসা প্রদানে দূতাবাস আরোপ করছে কড়াকড়ি। ফলে স্বামী বা স্ত্রীকে আমেরিকায় আনতে ভিসা পেতে গলদঘর্ম হচ্ছেন প্রকৃত আবেদনকারীরা। ঠিকানার এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বিয়ে বাণিজ্যের চাঞ্চল্যকর এমন কিছু তথ্য।

বাংলাদেশি সুন্দরী তরুণী আলভীনা (ছদ্মনাম) থাকেন নিউইয়র্কের কুইন্সের জ্যাকসন হাইটসে। বাংলাদেশে গ্রামের বাড়ি যশোর জেলায়। ২০২০ সালের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন স্বামীর আবেদনে। পরিবারের পছন্দে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তার। ভিসা জটিলতায় তার যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে দেরী হয়। আলভীনার বয়স এখন ২৯। এই বয়সে যে কোনো নারীর স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখের সংসার হবার কথা। কিন্তু এক বছরের সংসার জীবনে তিনি পা বাড়ান ভিন্নপথে। রাতারাতি ধনী হবার নেশায় শিক্ষিত এই তরুণী বেছে নেন বিয়ে বাণিজ্য। আর এই বাণিজ্যে লণ্ডভণ্ড হয়েছে তার নিজের সংসার। অর্থের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা আলভীনার কারণে এখন দিশেহারা তার স্বামী সুজন (ছদ্মনাম)। তিনি স্ত্রীর লাগাম টেনে ধরতে পারেননি। সংসারও তার আর নেই!

কুইন্স ভিলেজের বাসিন্দা সুজন তার স্ত্রীকে নিয়ে সুখে সংসার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে আসার এক মাসের মাথায় গ্রিনকার্ড হাতে পাবার পর রাতারাতি বদলে যান স্ত্রী আলভীনা। যেদিন গ্রিনকার্ড হাতে পান, সেদিনই পুলিশ কল দিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন। জেলে যেতে হয় স্বামীকে। অথচ ২০১৩ সালে বিয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রে ট্যাক্সিক্যাব চালিয়ে আয় করা বিপুল অর্থ স্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন সুজন। স্বামীর প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পত্তিও লিখে নিয়েছেন আলভীনা। দেশ-প্রবাসের কোথাও কোনো সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছুই নেই সুজনের। পাগলের মত রাস্তায় ঘুরে বেড়ান তিনি।

এদিকে স্বামী সুজনকে জেলে পুড়ে দেশে চলে যান আলভীনা। যুক্তরাষ্ট্রে ডিভোর্স না দিয়েই দেশে গিয়ে বিয়ে করেন বিত্তশালী একজন পাইলটকে। বিয়ের পর তার সঙ্গেও প্রতারণা করেছে আলভীনা। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আলভীনার এই প্রতারণা ও বিয়ে বাণিজ্যের ব্যাপারে অবহিত হয়েছে। ফলে পাইলটকে যুক্তরাষ্ট্রে আনার সব চেষ্টাই দেশে ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কে ফিরেছেন আলভীনা। তিনি এখন নতুন করে বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছেন! পত্রিকায় পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপনও দিয়েছেন। এমন কি প্রতিষ্ঠিত কয়েকজন ঘটকের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন তিনি!

আলভীনার বিয়ে বাণিজ্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না সুজন। কারণ স্ত্রীর ভাইয়েরা যশোরের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। সরকারি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সম্পত্তি ফেরত চেয়ে স্ত্রীর ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে উল্টো সুজনকেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কোথাও মুখ খুললে দেশে গেলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও পাচ্ছেন সুজন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় সুজন বিষয়টি ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসকে জানিয়ে রেখেছেন।

নিউইয়র্কের ট্যাক্সি চালিয়ে বিপুল অর্থ সঞ্চয় করেছিলেন ঢাকা জেলার প্রবাসী আরিফ আহমেদ। দেশে গিয়ে বিয়ে করে আমেরিকায় আনেন শিক্ষিত তরুণী পারুলকে (ছদ্মনাম)। নিউইয়র্কের এলমহার্স্টে তাদের বাসা। গত পাঁচ বছরে তাদের সুখের সংসারে আসে দুটি সন্তান। গ্রিনকার্ডধারী স্ত্রী পারুল যেদিন সিটিজেন হলেন, সেদিন রাতেই পুলিশে কল দিয়ে অভিযোগ করলেন স্বামী তাকে বটি দিয়ে খুন করতে চেয়েছে! তাৎক্ষণিক জেলে যান আরিফ। পরে পুলিশের তদন্তে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কিন্তু সর্বনাশ যা হবার হয়ে গেছে ততক্ষণে। ডিভোর্স ফাইল করেন পারুল। স্ত্রী, সন্তান হারিয়ে পথের ফকির হয়ে যান আরিফ। অথচ স্ত্রী দেশে গিয়ে টাকার বিনিময়ে বিয়ে করে আনেন স্কুল জীবনের এক বন্ধুকে। টাকা নেওয়ার পরও বন্ধুকে নিয়ে সংসার করার স্বপ্ন দেখেন পারুল। কিন্তু বিধি বাম। গ্রিনকার্ড পাবার পরদিনই পারুলকে ছেড়ে যান ওই বন্ধু। যাবার সময় স্কুল জীবনের বান্ধবী ও স্ত্রীকে বলে যান ‘তুই বুড়ি হয়ে গেছিস। তোকে দিয়ে কী হবে?’

পারুলও এখন নতুন জীবনসঙ্গী খুঁজছেন। যোগাযোগ করছেন নিউইয়র্কের এক ঘটকের সঙ্গে। অন্যদিকে তার বন্ধুও একই ঘটকের দ্বারস্থ হয়েছেন পাত্রী খুঁজতে। ঘটক জানেন তাদের জীবনের কথা। কিন্তু তারা দুজন জানেন না যে তারা একই ঘটকের কাছে ছুটছেন।

কানেকটিকাটে বাংলাদেশি এক নারী টিকটকে সেলিব্রেটি। তিনিও বিয়ে বাণিজ্য করছেন। এ পর্যন্ত সাতজনকে স্বামী বানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এনেছেন। এ ঘটনাও এখন ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের নজরে এসেছে।

নিউইয়র্কের কুইন্সের বাসিন্দা নড়াইলের রুমী বিয়ে বাণিজ্যের শিকার হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর দুই বছরের কন্ডিশনাল গ্রিনকার্ড পেয়েছিলেন। কিন্তু স্থায়ী গ্রিনকার্ডের আবেদনের আগে দাবি করেন ২৫ লাখ টাকা। বিপাকে পড়েন রুমী। ২০ লাখ টাকা ডলারে পরিশোধ করেও কপালে জোটে ডিভোর্স। গত দেড় বছরে সেই ধাক্কায় এখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না রুমী। হয়ে পড়েছে আনডকুমেন্টেড। সম্প্রতি একজন অ্যাটর্নির সঙ্গে পরামর্শ করে ইমিগ্রেশনে কেস ফাইল করেছেন তিনি। কিন্তু তার আবেদন এখনো পেন্ডিং রয়েছে।

আমেরিকায় গত ২০ বছরে দুই হাজার পাত্র-পাত্রী খুঁজে দিয়েছে একটি ম্যারেজ মিডিয়া প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিয়ের পাত্র-পাত্রী খুঁজতে গিয়ে তিনি প্রায় দেড়শ কেস হিস্ট্রিরি পেয়েছেন, যে ঘটনাগুলো খুবই হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী। এই মানুষগুলো বিয়ে বাণিজ্যের শিকার হয়েছেন। বলতে গেলে সরাসরি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত আবেদনকারীরা, যারা স্ত্রী বা স্বামীর জন্য আবেদন করে গলদঘর্ম হচ্ছেন। দূতাবাস অতিরিক্ত ডকুমেন্টস চাচ্ছে। এসব ডকুমেন্টস সংগ্রহ করাও অনেকসময় দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে।

বিয়ে বাণিজ্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী ঠিকানাকে জানান, বিয়ে বাণিজ্য ও প্রতারণা একটি গর্হিত কাজ। এতে হয়তো ব্যক্তি উপকৃত হয়, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় কমিউনিটি। এমনকি দেশেরও সুনাম নষ্ট হয়। এ ধরনের অপরাধ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে মঈন চৌধুরী বলেন, বিয়ে প্রতারণা ফেডারেল ক্রাইম। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বিভাগ এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।
ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বিয়ে নিয়ে দূতাবাসের কাছে অসংখ্য প্রতারণা বা বিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। ফলে এ বিষয়ে ভিসা প্রদানে অধিকতর তদন্ত করছে দূতাবাস। আর এ কারণে স্বামী-স্ত্রীর ভিসা প্রদান গত ১০ বছরে গড়ে ২৩ শতাংশ কমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) বিভাগের তথ্য মতে, বিয়ে প্রতারণা একটি ফেডারেল ক্রাইম। এই অপরাধে জড়িত প্রমাণিত হলে ৫ বছরের জেল, আড়াই লাখ ডলার জরিমানা হতে পারে। এমন কি অপরাধীকে যুক্তরাষ্ট্রের সব বেনিফিট থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়