বিশ্বজিৎ দত্ত: [২] অনুন্নোত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশি পণ্য বৈশ্বিক সক্ষমতা হারাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক দ্রুত এই সমাস্যা কাটিয়ে উঠেতে বাংলাদেশকে ৪টি পরামর্শ দিয়েছে। এগুলো হলো, উন্নত পরিবহণের জন বিস্তৃত একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। পণ্যের গুণগত মান উন্নয়নেও এই ব্যবস্থা কাজে দেবে। অবকাঠামোর গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি আন্তমহাদেশিয় যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশেকে সকল দ্বিধা ঝেড়ে যুক্ত হতে হবে।
[৩] বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ মার্টিয়াত হেরেনা ডাপ্পে মঙ্গলবার বাংলাদেশের পণ্য পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর এক আলোচনায় বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধারবাহিক উন্নতি করে যাচ্ছে। এমনকি কোভিড ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের দক্ষতা প্রশংসনিয়। কিন্তু উন্নত ও দক্ষপণ্যপরিবহণে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরো কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে চাইলে প্রয়োজন রয়েছে লজিস্টিকে ক্রমাগত দক্ষতা বাড়ানোর।
[৪] বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্বের ১৪১টি দেশের পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৫তম। এরমধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে জার্মানি। এশিয়াতে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ফিলিপাইন, কম্বোডিয়াও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। দক্ষ পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা না থাকায় বাংলাদেশ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি মিটাতে পারছে না। বৈশ্বিক মূল্য প্রতিযোগীতায় টিকতে পারছে না। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যদি পণ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায় তবে পণ্য পরিবহণে খরচ কমবে ২৫ শতাংশ। রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে ২০ শতাংশ, কারখানাগুলো শ্রমিকদের বর্ধিত বেতনের চাপ সামাল দিতে পারবে ও তাদের যথাযত নিয়ম মেনে বেতন দিতে পারবে।
[৫] অনুন্নত পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি চড়া মূল্য দিচ্ছে। শুধুমাত্র এই কারণে পণ্যের গুণগত মান থাকছে না, শ্রমিকদের যথাযত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। অদক্ষ যোগাযোগ সিস্টেমের কারণে এশিয়ার অন্যান্য ইমার্জিং অর্থনীতির কাছে প্রতিযোগীতায় ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বেশির ভাগ শিল্প পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য অদক্ষ যোগাযোগ ব্যাবস্থাকেই দায়ি করে। তাদের হিসাবে, গার্মেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যাল, পাট টেক্সটাইল, রাইসমিল, কাঠের ফার্নিচার, হোর্টিকালচার প্রত্যেকটি শিল্পে প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষ্য ভাবে অনুন্নত লজিস্টিক ব্যবস্থা রয়েছে।
[৬] এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ আমিনুর রহমান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সড়কগুলোকে ২৫ টন পণ্যপরিবহণ উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু এই সড়কগুলোর মেইনটেনেন্স করার কথা কেউ ভাবছে না। আবার আমরা যদি রিজিওনাল যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুক্ত হতে চাই তবে এটিকে আরো উন্নত করতে হবে। আমাদের নৌপথগুলোকে ড্রেজিং করে পণ্য পরিবহণ উপযোগী করতে হবে। এরজন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনাও প্রয়োজন রয়েছে। রেল, সড়ক, নৌ ও বিমান এই ৪টিকে উন্নত কাঠামোতে নিতে হবে। আগামী দিনে এটিই হবে আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। যদি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রিজিওনাল হাব হিসাবে বাংলাদেশ লাভবান হতে চায় তবে লজিস্টিকের উন্নতি ছাড়া উপায় নেই।
আপনার মতামত লিখুন :