মেহেদী হাসান: [২] নিরহঙ্কার, সদাহাস্য মিতা হক এমন এক শিল্পী যার কন্ঠ রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভারবস্তুর রস অনাহত রেখে এগিয়ে চলে, গানটিকে ঐশ্বর্যে এমন এক উচ্চ মাত্রায় জাগিয়ে তোলেন যেখানে আমরা এক সুরের-মিতার দেখা পাই আর সেখানেই সকল শ্রোতার ভালোবাসা অনন্য তাৎপর্যে তাঁকে ছুঁয়ে থাকে। এদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তার ভুমিকা অনবদ্য হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিসহ গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিবর্গ।
[৩] ২০২০ সালে একুশে পদক পাওয়ার পর বিনয়ের সাথে নিজের শিক্ষাগুরুকে এই সম্মাননা নিবেদন করে বলেছিলেন ‘সারাজীবন আমি গানকে ভালবেসেছি। যে কোনও সাংস্কৃতিক আন্দোলন, সামাজিক, এমনকি রাজনৈতিক আন্দোলনেও থেকেছি। দেশের জন্য আমার যে মাথাব্যথা, যেটুকু ভালোবাসা- তার স্বীকৃতি হিসেবে দেখছি এই পদকটিকে।’
[৪] বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ও সংগঠক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ভোরে বিষন্ন খবরটা শুনলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল। বিহ্বল হয়ে পড়লাম। কারণ, আমার আর মিতার যোগসূত্রটা একই স্থানে। হেঁটেছিও একই পথে। মিতা আর আমার পড়াশোনা একই জায়গায়, শান্তিনিকেতন। বিষয়ও একই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
[৫] অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী মিতা হক....আমাদের প্রাণের মানুষ, মিতা আপা...চলে গেলেন সবাইকে ছেড়ে...আর কোনদিন দেখতে পাবো না, শুনতে পাবো না আপনার গান....গভীর শ্রদ্ধা....
[৬] উদিচি’র কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা সৈয়দা তানজিমা ইমাম বলেন, মিতা'পা কেন চলে গেলে? কত কষ্ট নিয়েও কত উচ্ছ্বল ছিলে। এমনি থাকতে। কিসের এতো তাড়া ছিল তোমার আপা? গতকালই তোমার গান শুনছিলাম আর তখন তুমি ওপারে যাবার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছো। এতো কান্না! এতো কষ্ট! অনন্তের পথে উড়ে যাও আমাদের গানের পাখি। অসীম আকাশ আর সমস্ত চরাচর তোমার গানে শুদ্ধ হোক। সুরের পরশে উদ্ভাসিত হোক অনন্তলোক। আকাশে কান পেতে শুনবো তোমার কাঁচ ভাঙা হাসি আর গান। জীবন ও মরণের সীমানা ছাড়ায়ে বন্ধু হে আমার রয়েছো দাঁড়ায়ে...ভালোবাসা, আদর আর শ্রদ্ধা তোমার প্রয়াণের পথে।
[৭] সঙ্গীতশিল্পি মাহামুদুজ্জামান বাবু লিখেছেন, আমাদের সবার প্রিয়, খুব সাধারণ, আর রবীন্দ্রনাথের গানে স্বতন্ত্র এবং একদমই অসাধারণ মিতা হক শেষ নিঃশ্বাস ফেললেন। হায়,কে আমাকে বলবে আর...' বাবু ভাই আপনার গলায় রাগ আর মায়ার মিশেল আছে,আপনি রবীন্দ্রনাথের গান করেন না কেন?' আমি লজ্জায় কুন্ঠিত হতাম। দ্বিধাহীনভাবে যাকে সব বলা যেতো, যিনি উপলব্ধি করতেন মমতায়, দেশাত্নবোধক গান ও গণসংগীত যারা করে ভারতবর্ষে, তারা কতটা নিঃসঙ্গ এবং উজান ঠেলে চলে।
[৮] সংগীতশিল্পী নবনীতা চৌধুরী লিখেছেন, ‘আমার ‘চিরবন্ধু, চিরনির্ভব’ মিতা হক আর নাই। ‘চিরপ্রীতি সুধানির্ঝর তুমি হে হৃদয়েশ’। কীভাবে বিদায বলি তাঁকে! আমি শোকগ্রস্ত। গভীর শোক আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। সে চলে গেল, বলে গেল না.. সে কোথায় গেল ফিরে এল না। সে যেতে যেতে চেয়ে গেল, কী যেন গেয়ে গেল.. তাই আপন-মনে বসে আছি কুসুমবনেতে।’ সম্পাদনা: রাশিদ