সাবেত আহমেদ: [২] নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের মুক্তির দূত আধ্যাত্মিক পুরুষ পূণ্যব্রহ্ম শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের লীলাভূমি মতুয়াদের মূল পীঠস্থান গোপালগঞ্জের শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়িতে মহাবারুণীর পূণ্যস্নান সমাপন করেছেন মতুয়া ভক্তরা। শুক্রবার ভোররাত ৪টা ৫২ মিনিটে ঠাকুরবাড়ির ‘শান্তি সাগর’ ও ‘কামনা সাগর’ পুকুরে খুলনার তেরখাদা থেকে আগত তিনকড়ি মিয়াদের স্নানের মধ্য দিয়ে এ পূণ্যস্নান শুরু হয়। এরপর ঠাকুরবাড়ির সদস্যগণ স্নান করে বিশ^বাসীর মঙ্গল তথা করোনা-মুক্তি প্রার্থণা করেন।
[৩] তারপরেই ঠাকুরবাড়িতে সমাগম ঘটতে থাকে হাজারো মানুষের। ব্রহ্ম মুহূর্তের সেই শুভক্ষণে আগত সকল মতুয়া ভক্তরা পুকুর দু’টিতে পর্যায়ক্রমে স্নান সমাপন করতে থাকেন এবং সকল ব্যাধিসহ বিশ্বব্যাপী করোনা-মুক্তি প্রার্থণা করেন। স্নান সেরে তারা শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে গিয়ে প্রণাম ও প্রার্থণা নিবেদন করেন। পরে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। লকডাউনের কারণে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাদ্য-বাজনা ছাড়াই দলে দলে মতুয়া ভক্তরা আসতে থাকে ওড়াকান্দিতে। তাদের অনেকেই জানিয়েছেন করোনাকে জয় করতেই লকডাউন উপেক্ষা করে এই পূণ্যভূমি শ্রীধামে এসেছেন।
[৪] ২’শ ১০ বছর আগে বাংলা ১২১৮ সালের ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথির ব্রহ্ম মুহুর্তে মহাবারুণীর এ দিনে আবির্ভূত হয়েছিলেন পূণ্যব্রহ্ম শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর। ছোটবেলা থেকেই তার অলৌকিকত্ব¡ ও লীলার জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন এবং দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে শ্রীধাম ওড়াকান্দির নাম। সেই থেকে হরিচাঁদ ঠাকুরের এ জন্মতিথিতে প্রতিবছরই ওড়াকান্দিতে অনুষ্ঠিত হয় তিনদিন ব্যাপী মহাবারুণী মেলা ও স্নানোৎসব। লাল নিশান উড়িয়ে পদব্রজে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে হরিবোল হরিবোল ধ্বণিতে ঠাকুরবাড়িতে আগমন ঘটে দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ মতুয়া-ভক্তের।
[৫] ভক্তরা পূণ্য ও মুক্তি লাভের আশায় ঠাকুরবাড়ির পুকুর দু’টিতে স্নান করেন। আর নিজেদের তথা বিশ্বের সকল জীবের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে প্রার্থনা করেন। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে গতবছর এসবের সকল আয়োজন বন্ধ রাখা হয়। এবারও একই কারণে মতুয়া-ভক্তরা ঠাকুরবাড়িতে স্নান সমাপন করলেও বৃহদাকারে কোন উৎসব বা মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি।
[৬] বাংলাদেশ মতুয়া মিশনের সভাপতি ও ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ির অন্যতম সদস্য শ্রীশ্রী পদ্মনাভ ঠাকুর বলেছেন, লকডাউনের এ পরিস্থিতিতে আগেভাগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে খবর পৌঁছে দেয়া হয়েছে ঠাকুরবাড়িতে জনসমাগম না করার জন্য। গতবছরও এ দিনে এখানে কোন উৎসব বা মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। যে কারণে এবারে না আসতে বলার পরও বিভিন্ন জেলা থেকে অগণিত ভক্ত ওড়াকান্দিতে এসে পৌঁছেছেন। তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যায় শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২’শ ১০-তম জন্মতিথী উপলক্ষে ঠাকুরের মন্দিরে ২’শ ১০টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে বিশ^বাসীর কল্যাণ কামনায় প্রার্থণা অনুষ্ঠিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :