লুৎফর রহমান হিমেল: [১] কনে দেখতে এসেছে বরপক্ষ। বরপক্ষের কনে পছন্দ হয়েছে। এবার বরের বাবা ছোট্ট করে একটা অনুরোধ করলেন কনের বাবার কাছে। কনের বাবা বললেন, বেয়াই সাহেব, বলুন কী বলতে চান। এরপর বরের বাবা ‘একটার বেশি চাই না’ এভাবে বলতে বলতে মোটর সাইকেল থেকে শুরু করে রেফ্রিজারেটর, ছেলের ব্যবসার জন্য নগদ টাকাসহ বিরাট এক ফর্দ পাঠ করলেন, বাদ পড়ল না কিছুই। ফর্দ যখন পড়া হচ্ছিলো তখন কনের বাবা সব বিষয়েই মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ সূচক সম্মতি দিয়ে গেলেন। ছেলের বাবার যখন ফর্দ পড়া শেষ হলো, কনের বাবা বললেন, বেয়াই সাহেব, আপনার সব কথাই তো শুনলাম। আমার একটা অনুরোধও আপনার রাখতে হবে। কী, আপনি রাখবেন? বরের বাবা এ কথা শুনে বেজায় খুশি হলেন। বললেন, আপনি আমার সব কথাই রাখলেন। আপনার কথা না রাখলে কী চলে! বলুন। অবশ্যই রাখবো। কনের বাবা বললেন, আমি নিয়ত করেছি, আপনার ছেলের কাছে আমি মেয়ে বিয়ে দেবো না। এই অনুরোধটি আপনাকে রাখতেই হবে।
[২] করোনা মহামারিতে একটি বছর ‘নাই’ হয়ে গেছে মানবজাতির কাছ থেকে। আরেকটি বছরের চার মাস খেয়ে ফেলেছে করোনাকাল। মানুষের মনের ওপর চলছে বড় এক মানসিক ঝড়। বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। কী শিশু, কী প্রবীণ- সবার মনের ওপর অস্বাভাকি এক চাপের খেলা চলছে। এটা করা মানা, ওটা করা মানা। এটা ছোঁয়া যাবে না, ওটা করা যাবে না। বাইরে যাওয়া যাবে না, থাকতে হবে ঘরে। ঘরে থাকলে বসে থাকা যাবে না, করতে হবে ব্যায়াম। টিকা নিলেও মেনে চলতে হবে বিধিনিষেধ। এরকম নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে করতে মানুষের মগজ ফুলেফেঁপে যাচ্ছে। আইসোলেশন, লকডাউন, সোশ্যাল ডিসটেন্স, কোয়ারেন্টাইনসহ নানান নতুন ইংরেজি শব্দ মুখস্ত করতে করতে ঘেমে নেয়ে উঠছে মানবসকল।
শুধু তাই নয়, এক কোয়ারেন্টাইনেরও নানান উচ্চারণ আর বানান প্রচলিত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বাহাস হচ্ছে প্রতিদিন। খুনোখুনিও হয়তোবা হচ্ছে কোথাও। একই শব্দ, বিবিসি বলছে কোয়ারেন্টিন, আনন্দবাজার বলছে কোয়রান্টিন, প্রথম আলো বলছে কোয়ারেন্টিন। খুনোখুনি তো হওয়ারই কথা। একদিকে নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে বাধ্যতামূলক জ্ঞানের চর্চায় মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে। এতোসব করে মানুষ বাঁচবে কী করে? এটা তো কাউকে হাত-পা বেঁধে দিয়ে তাকে বলা যে, সাঁতার কাটো। না পারলে তোমার গর্দান যাবে। করোনায় মানুষের দম বন্ধ করবে কী, নানা বিধিনিষেধে মানুষের দম এমনিতেই বন্ধ। ‘এ কোনো জীবন হলো?’ মানুষের মুখে মুখে এখন এরকম প্রশ্ন। ঘরে থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। বাইরে ইতস্তত ঘুরাঘুরি করা যাবে না। শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে ‘হাসমুরগিছাগলের’ মতো খুদ-কুঁড়া খেয়ে খোপের জীবন কাটাতে হবে। খোপে থাকলে সেই খুদ-কুঁড়াটা দেবে কে বলুন শুনি? এরচে সবাই মিলে শ্রষ্ঠাকে বলি যে, হে উপরওয়ালা। করোনায় আপনার বিধিনিষেধের সব কথাই মেনে নিচ্ছি আমরা। আমাদের একটি অনুরোধের কথা শুনুন দয়া করে। আমাদের এই গ্রহের সবাইকে আপনার কাছে তুলে নিয়ে যান। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :