শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল, ২০২১, ০২:২৭ দুপুর
আপডেট : ০৮ এপ্রিল, ২০২১, ০২:২৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ড নিয়ে যা বললেন তার নারীসঙ্গী (অডিও)

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট: হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে তার সেই নারীসঙ্গী জান্নাত আরা ঝর্ণার একটি কথোপকথনে। সোনারগাঁওয়ের স্থানীয় এক হেফাজত নেতার সঙ্গে ঘটনার দুই দিন পর প্রায় আট মিনিট ১১ সেকেন্ড কথা বলেন ঝর্ণা। ঘটনার দিন স্থানীয় জনতা তাদের ঘেরাও করার সময় কে কী বলেছিলেন এবং এর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহও উঠে এসেছে তাদের কথোপকথনে। এমনকি ঝর্ণার বোরকার রং নিয়ে যারা সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, সেই বিষয়টিও পরিষ্কার করেছেন ঝর্ণা নিজেই। আলাপে ঝর্ণা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, মামুনুল হক কারও কারও কাছে তাকে না চেনার বিষয়ে বলেছেন। এতে তিনি বিপদে পড়ে যেতে পারেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ঝর্ণার এই কথোপকথনে স্পষ্ট হয় যে মাওলানা মামুনুল হক নারীসঙ্গীসহ আটক হওয়ার পর থেকে একধারে মিথ্যাচার করে চলেছেন। ওই নারীর সঙ্গে তার বৈধ কোনও সম্পর্ক ছিল না। এখন ‘সম্মান’ বাঁচাতে তিনি অকপটে একটার পর একটা মিথ্যা বলে চলছেন। ফাঁস হওয়া এই কথোপকথনের অডিও ক্লিপ বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। পাঠকদের উদ্দেশে তা প্রায় হুবহু তুলে ধরা হলো-

জান্নাত আরা ঝর্ণা: এইটার ফিনিশিং কী হবে?

জনৈক হেফাজত নেতা: এহন একটা খবর পাইলাম। যে এহসান সাব বললো যে, তুমি একটু থানায় যাও। থানার পরিস্থিতিটা কী, মামলা করবে আরকি। এই জন্য আমি থানায় যাচ্ছি।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: আচ্ছা কীসের জন্য মামলা করবেন?

জনৈক হেফাজত নেতা: এই যে তারা বেইজ্জতি করছে।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: এই জন্য মামলা করবে? এইটা মিটাবে কীভাবে? এটা তো সরকার, থানাতে গেলে তো ডকুমেন্ট চাইবে। তখন কীভাবে কী করবেন?

জনৈক হেফাজত নেতা: এখন আজকে তিনটার সময় সাংবাদিক সম্মেলন আছে তো। তখন বলা যাবে কী হবে।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: আচ্ছা, সাংবাদিক সম্মেলন আছে। সবকিছু ঠিক আছে। যদি আমাকে এর ভেতরে ডাকে তাহলে অবশ্যই কিন্তু.. মানে আমার...ইনফর্ম না করে আবার হঠাৎ করে ডাইকেন না। তাহলে...

জনৈক হেফাজত নেতা: এখন এইখানে হুজুরে নাম বলছে আমেনা তৈয়বা। এখন আমি যখন আপনাকে বলছি আপনার নাম কী আপনি বলছেন ঝর্ণা।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: এই বিষয়টা আমি ভালো করে আপনাকে ক্লিয়ার করতেছি। যেটা হচ্ছে যে হুজুর যখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আসছিল, যখন হুজুর প্রথম... একদম প্রথম দফা তারা যখন জেরা করতেছিল, তখন সে বলছে আমার স্ত্রীর নাম হচ্ছে আমেনা তৈয়বা। ঠিক আছে। তারপর যখন তারা চলে গেল, টিএনও সাহেব আসলো, এসআই আসলো, সাংবাদিকদের সবগুলারে বের করে দিল, তখন আমি শুনতেছিলাম যে হুজুর বলছে যে এটা আমার সেকেন্ড ওয়াইফ। আমি বিয়ে করেছি আমি কোনও অবৈধ কিছু করি নাই। যখন তিনি সেকেন্ড ওয়াইফ বলছে তারপর আমাকে জেরা করা হইছে। এখন আমি কীভাবে ফেইক বলি। আমি তো তার বাবার নাম জানি না। আমি কী করে কী বলবো, বলেন? আমাকে তো আলাদা জেরা করছে। এটা নিয়ে লাস্টে কী...

জনৈক হেফাজত নেতা: তারপর মনে করেন আমাগো লোকজন বেশি আবেগ দেখাইতে গিয়া আপনার ছবিগুলা বিকৃত করতেছে। এইটা... ওইটা... বিভিন্ন কথাবার্তা লেখতেছে। এইটা জান্নাত আরা ঝর্ণা হইতে পারে না। এগুলো নিয়ে লেখালেখি করতেছে। জিনিসটা আরও বেশি বাড়তেছে।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: এই জিনিসটা ক্লিয়ার হওয়া দরকার।

জনৈক হেফাজত নেতা: আমি মনে করি ওয়াশ রুমে আপনার যে ইন্টারভিউ নিছে। আপনার নাম-ঠিকানা, এইটা তো সত্য তাই না?

জান্নাত আরা ঝর্ণা: এইটা হান্ডের্ড পারসেন্ট সত্য।

জনৈক হেফাজত নেতা: আর ওই যে বোরকার কালার নিয়ে যে... কেউ বলতেছেন কালা বোরকা, কেউ বলতেছেন ব্লু কালার। আমি সাথে যখন ছিলাম তখন তো দেখলাম ব্লু কালারের বোরকাটা।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: ব্লু কালারের ওপরের খিমারটা (হিজাব) ছিল, নিচের কালারটা ছিল কালো কালার। এইটা লাস্টে কী হইতে পারে? আপনার কী ধারণা হচ্ছে?

জনৈক হেফাজত নেতা: আমাদের ধারণা এখন মানে আমার যেইটা এখন... এগুলা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলেই আরও বেশি সমস্যা। হুজুরে এখন আসবে শুনছি, আমি যেভাবে পারছি যে হুজুর এই মুহূর্তে সোনারগাঁও না আসাটা ভালো। আসার দরকার নাই। যতটুকু হইছে হইছেই। কারণ এখানে ক্ষয়ক্ষতি তো কম হয় নাই। কারণ জিনিসটা আরও বাড়বে। মানে প্রশাসনের সঙ্গে আমরা যুদ্ধ কইরা এই মুহূর্তে পারবো না। যতটুকু করছি ততটুকুই আল্লাহ উদ্ধার করতে পারছে দুই জনকে। এইটাই বেটার ছিল।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: হুজুর...আপনারা মনে করতেছেন যে ওনার নরম হওয়া দরকার?

জনৈক হেফাজত নেতা: নরম বলতে কী ওইভাবে নরম না। মানে যখন গরম হওয়ার দরকার গরম হইতেই হইবো। আমরা চাচ্ছি না যে ইচ্ছাকৃতভাবে জিনিসগুলো আরও ছড়াইতে। এই আর কি।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: ওহ।

জনৈক হেফাজত নেতা: কারণ সোনারগাঁও যদি আবার আসে, স্বাভাবিক প্রবলেম হইতে পারে।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: আপনারা বললে কি সে শুনবে না?

জনৈক হেফাজত নেতা: আমি চেষ্টা করতেছি, আমার মুরুব্বিদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতেছি, দেখি কী বলে।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: সে আবার কোথায় কোথায় অস্বীকার করছে আমি তাকে... সে আমাকে চিনে না।

জনৈক হেফাজত নেতা: না, এখন তো অস্বীকার না, এখন যেখানে যেখানে অস্বীকার করছে...মানে কী বলবো। মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন মনে করেন মাথা ঠিক থাকে না। বুঝেন নাই?

জান্নাত আরা ঝর্ণা: হ্যাঁ।

জনৈক হেফাজত নেতা: উনি দেখতেছে যে ওনার যে মোবাইলটা দিয়ে কথা বললে ফোন ফাঁস হইয়া যাইতেছে, আবার এই নাম্বার দিয়াই সবার লগে কথা বলতেছে। এইটা সাথে সাথে ফোনালাপটা দিয়া দিতাছে  সাংবাদিকদের, ইন্টারনেটে। এই হলো অবস্থা।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: ওই কাজগুলো নতুন কারও ফোন দিয়া ফোন দিতে পারতেছে না?

জনৈক হেফাজত নেতা: এটাই তো। এই নাম্বার দিয়া ওনার ওয়াইফরে ফোন দিছে যে তুমি বিষয়টা টেনশন কইরো না। সাক্ষাতে বলবো। সে আমার স্ত্রী না। তোমার কাছে আইসা আমি বলতেছি। এইটাতে গোমর ফাঁস হইয়া গেছে। যে হুজুর প্রথম স্ত্রীর কাছে নাকচ করছে। এইটা মানি প্রচার হইছে না? একটা দুইটা ইয়া করা যায়। কিন্তু প্রবলেম।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: ওইখানে বলছে মানে বউ মানে ওইখানে যেন ঠিক থাকে।

জনৈক হেফাজত নেতা: উনি বলছে, যে বড় খালাম্মাকে বলতেছে আরকি, টেনশন কইরো না। আমি সাক্ষাতে আইসা বলতেছি। সে অন্যের স্ত্রী, আমার স্ত্রী না। হয়তো বড় খালাম্মারে সান্ত্বনা দিতে কথা বলতেছে। পরে বলছে ঠিক আছে, তুমি বাসায় আসো। এই কথাটা ফাঁস হয়ে গেছে। আবার মনে করেন ওনার বোন বলছে যে, ভাবি, খালাম্মারে বলতেছে যে ভাবি, আপনি বলবেন যে আমি জানি, সবকিছু জানি। আমাদের পারিবারিক... আম্মা থাকা অবস্থাতেই বিয়ে হইছে। এইটাও ফাঁস কইরা দিছে। কোনোকিছু তো থাকতেছে না। এই নাম্বারটা দিয়ে কথা বললেই তো ফাঁস হইয়া যাইতেছে।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: আপনারা যা বলতেছেন, আমার মনে হইতেছে উনি পুরা নিজে ফাঁইসা গেছে।

জনৈক হেফাজত নেতা: নিজের লাইগাই ফাঁসতেছে।

জান্নাত আরা ঝর্ণা: হ্যাঁ।

জনৈক হেফাজত নেতা: এখন আমরা এত মর্মাহত, এত কষ্টে আছি। ভাবছি, উনি তো বিপদেই আছে, উনি কেমন কষ্টে আছে। এখন আমরা কিছু করতে পারতেছি না। আমি হ্যাং হয়ে গেছি। বুঝছেন না? আর আপনি কোনও সমস্যা নাই তো না?

জান্নাত আরা ঝর্ণা: এখন কোনও সমস্যা নাই। কিন্তু আপনাদের মুখ দিয়ে যা শুনতেছি এভাবে যদি বলে তাহলে তো আমি আমার মানে প্রবলেমে পড়ে যাবো।

জনৈক হেফাজত নেতা: না, প্রবলেম কী এখন। আপনার আর হুজুরের কথা তো এক থাকতে হবে, তাই না?

জান্নাত আরা ঝর্ণা: আমার কথা আর হুজুরের কথা এক থাকতে হবে। কিন্তু সে এখন একেকজনের কাছে একেক কথা বলতেছে। সেইগুলা ফাঁসও হয়ে যাইতেছে। তাহলে আমার কথা আর তার কথা কি এক থাকবে? উনি একসঙ্গে কেন অটল থাকতে পারলো না? টিএনও সাহেব যখন বললো, যখন ওসি সাহেবকে বললো, আমি রেকর্ড করে রাখতে পারি নাই। তখন সাংবাদিক ছিল না। তখন উনি যখন এই কথাগুলো বললো, তখন উনি এই কথাগুলোর ওপর অটল থাকলেই তো হয়ে যেত। সত্যর জানেন সবসময় না জয় হয়, আর মিথ্যার সবসময় অপমৃত্যু হয়। উনি কেন মিথ্যার আশ্রয় নিলো?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়