অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: নারায়ণগঞ্জের রিসোর্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু ফোন কল রেকর্ড করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা আমি কখনো সমর্থন করি না সেটা যার বিরুদ্ধেই হোক। এইটা এক কেন্দ্রিক। সরকারের ক্ষমতা আছে বলে সরকারি মেশিনারি ব্যবহার করে এই কাজটি করা হয়। সরকারও অনেক কাজ করে যার ফোন কল রেকর্ড করে ছাড়া হলে দেশেতো বিপ্লব ঘটে যাবে। যাহোক রিসোর্ট কেন্দ্রিক ফোন কল যেহেতু ফাঁস হয়েই গেছে তা শোনার সুযোগও হয়েছে। এর ফাঁস হওয়া রেকর্ডগুলোর একটি হলো মা এবং ছেলের মধ্যে। খুবই হৃদয়বিদারক সেই মা এবং ছেলের মধ্যে কথোপোকথন। ছেলে টিভি খুললে, পত্রিকা খুললে, মোবাইল খুললে, ঘর থেকে বের হলে কেবল তার মাকে নিয়েই কথা শুনে। একবার তাহলে ভাবুন ছেলের অবস্থাটা। আবার তার মাও বিপর্যস্ত। যদিও হক সাহেব আলেম, সেলিব্রিটি এবং মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে ঘটে যাওয়া তাণ্ডবের কারণে সমস্ত ফোকাস গিয়ে ঠেকেছে হক সাহেবের ওপরে। তা না হলে, এই নারী বা এই মাই হতেন সমস্ত ফোকাসের কেন্দ্রবিন্দু। তার চরিত্র নিয়ে তোলপাড় হতো। তার বিচারে মানুষ সোচ্চার হতো। তাকে সমাজচ্যুত করা, দোররা মারার দাবি উঠতো। তথাপি সে এখন নানা কারণে বিপর্যস্ত।
এইরকম একটা সময়ে মা-ছেলের কথোপকথনটা শুনে আমার মনে হয়েছে এই নারী খুবই বুদ্ধিমতী। সে অত্যন্ত ঠান্ডা মেজাজে তার ছেলেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করেছে। এইটা সম্ভব হয়েছে কারণ সে একজন কর্মজীবী নারী। জীবনে অনেক অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। দুই ছেলেকে নিয়ে জীবন ধারণ করতে অনেক সংগ্রাম করেছেন। এসবই তাকে শিক্ষিত করেছে। কেবল ঘরে বসে থাকলে আজকে এরকম সময়টা এমনভাবে ছেলেকে হ্যান্ডেল করতে পারতেন না।
আমার আশ্চর্য লাগে এই ফোনালাপটা শোনার পরও বাংলাদেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী ছেলেটির প্রতি বা তার ভাইয়ের প্রতি কোনোরকম সহানুভূতি দেখায়নি। কেমনে পারে? মানুষ কীভাবে এতো অন্ধ হয়? এই ছেলেটার কথাবার্তার মধ্যেও বেশ ম্যাচিউরিটি লক্ষ্য করার মতো যদিও কখনো কখনো সে তার মেজাজ ঠিক রাখতে পারেনি এবং তা পারা যেকোনো মানুষের জন্যই কঠিন। মায়ের সাথে এই ছেলেটি কথোপকথন ছাড়াও আরেকটি ভিডিও বার্তা সে নিজে লাইভে এসে দিয়েছে। সেখানে তার পারিবারিক অনেক কিছুই খোলাসা করেছে। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে এই ছেলে দুটো কেবল এখন না অনেকদিন যাবৎই অশান্তির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। আমি ছোট এই দুই ছেলের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে খুবই মন খারাপ হচ্ছে। তারা যেসব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা এই বয়সের যেকোনো বাচ্চার জন্য কঠিন। এর একটা ইমপ্যাক্ট তাদের বেড়ে উঠার মধ্যে নিশ্চই পরবে। এই মুহূর্তে তাদের psychiatrist এর পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি বলে মনে করি। লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :