বিশ্বজিৎ দত্ত: [২] লকডাউনের চেয়ে করোনা মোকাবেলায় পিটুনিকেই বেশি কার্যকর মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। মঙ্গলবার তিনি টেলিফোনে বলেন, লকডাউনতো কেউ মানছে না। সবাই সবকিছু খোলে দিতে বলছে। সুতরাং সরকারের ঘোষিত লকডাউন আসলে কোন কাজ করছে না। তার চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার উপর সরকারের জোর দেয়া উচিৎ। মানুষ যাতে মাস্ক ছাড়া ঘর থেকে বের হতে না পারে। সাবান ব্যবহার করে। পরষ্পর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকে। এগুলো মানতে বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশ মিলিটারি দিয়ে পিটিয়ে মানুষকে বাধ্য করতে হবে।
[৩] অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে বলেন, ঈদের সময়টা আমাদের আভন্ত্যরীণ বাজারের ক্ষেত্রে একটি বড় সময়। এই সময়ে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি কেনা কাটা হয়। অনেক ব্যবসা আছে যেমন পাঞ্জাবি এই সময়টাতেই সারা বছরের পাঞ্জাবি বানিয়ে রাখা হয়। এরকম আরো অনেক ব্যবসা আছে যাদের উদ্দেশ্যই থাকে ঈদের কেনাকাটায়।এখন করোনায় এই ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের জিডিপির বড় অংশই হলো অভ্যন্তরীণ বাজার। সুতরাং আগামীতে জিডিপি কমবে।
[৪] সরকারের টিকাদান কর্মসূচির সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রতি মাসেই আমাদের জনসংখ্যায় ২ লাখ মানুষ যুক্ত হচ্ছে। সরকার টিকা দিচ্ছে ৪০ হাজার। এইভাবে টিকা দিলে আমাদের সময় লাগবে ৫০ বছর। আবার এখন যে টিকা দেয়া হচ্ছে তার মেয়াদ মাত্র ১ বছর। পরের বছর আবার বুস্টার টিকা দিতে হবে। সরকারের উচিৎ প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ লাখ লোককেকে টিকা দেয়া। কোভিড মোকাবেলায় টিকার বিকল্প কিছু নেই।
[৫] তিনি অর্থনীতির প্রসঙ্গে বলেন, সবাই টায়ার্ড হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ী ক্রেতা সবাই আতংকে আছে। আগের লকডাউনে মানুষ কিছুটা দান খয়রাত করেছে। তাতে গরিব মানুষ কিছু দান পেয়েছে। এবারে যারা দান করবেন বিশেষ করে মধ্যবিত্ত তারাই খয়রাত করছেন। সুতরাং প্রান্তিক মানুষের দুর্দশা এই লকডাউনে আরো বেড়েছে। সরকার কোভিড কালীন একটি অর্থনৈতিক প্যাকেজ দিয়ে ছিল ব্যবসা বাণিজ্য কিছুটা সচল থাকার জন্য। এর বেশির ভাগটাই নিয়েছে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা। আবার যারা কোভিডে ভাল ব্যবসা করেছেন তারাও এই ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু ঋণ রিকভারি হচ্ছে না। গর্মেন্ট ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধের সময় বাড়াচ্ছেন। তারা এটা আরো বাড়াতে থাকবেন। শেষে এই ঋণ পুরোটাই খেলাপিতে পরিণত হবে। অর্থনীতিতে ঋণ সঞ্চালন হবে না। গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে কিছু ঋণ দেয়া হয়েছে। এটি ভাল উদ্যোগ। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ঋণ আলাদা বিষয়। তারা যদি দেখে ব্যবসা নাই তবে ঋণ নিবে না। কারণ ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। তবে অনেকে আছে যাদের ঋণ ফেরত দিতে হয় না। তারা ঋণ নিবেন।
[৬] তিনি বর্তমান আমলা নির্ভর সরকারি প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন এরা কোথায় কি করতে হবে। কাকে ঋণ দিতে হবে কাকে দিতে হবে না। কখন লক ডাউন দিতে হবে কখন পিটুনি দিতে হবে এসব না বুঝেই নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে ফলে লক ডাউন বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আবার করোনা পরিস্থিতিরও কোন উন্নতি হচ্ছে না।
আপনার মতামত লিখুন :