আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে সারাদেশে একসপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সুপ্তিকাল ১৪ দিন। অর্থাৎ করোনাভাইরাস শরীরে ১৪ দিন পর্যন্ত ঘাপটি দিয়ে থাকতে সমর্থ। শরীরে প্রবেশের ১৪তম দিনেও ভাইরাসটি রোগ তৈরিতে সক্ষম। এজন্য বৈজ্ঞানিক বিবেচনা থেকে লকডাউন দিলে সেটা কমপক্ষে ২ সপ্তাহ হওয়া উচিত। একসপ্তাহের লকডাউন স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।
করোনা নিয়ন্ত্রণের মূলনীতি হলো একজন মানুষের শরীর থেকে ভাইরাসকে অন্যের শরীরে প্রবেশে বাধা দেওয়া। এজন্য মাস্ক পরতে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। শারীরিক দূরত্ব তৈরির শেষ ও কঠোরতম পন্থা হচ্ছে লকডাউন। এসময়ে মানুষ ঘরবন্দী থাকবে। একের সঙ্গে অন্যের দেখা হবে না। কঠোর হওয়ার আগে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ দ্বারা জনচলাচল সীমিত করা যায়। যেমন সকল ধরনের সভা-সমাবেশ, মেলা, ক্রীড়া-আয়োজন, উৎসব স্থগিত করা। দোকানপাট, বিপণিবিতান, শপিংমল ইত্যাদির সময়সীমা কমিয়ে আনা যায়। যেসব অফিস অনলাইনে করা সম্ভব সেগুলো সেভাবে করা। সরকারি অফিসের সঙ্গে বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধিন ছোট অফিসের জনবল কমিয়ে আনা ও শিফটিং চালু করা। লোকজনকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে নামানো। এরকম আরও অনেক সেক্টরভিত্তিক পরিকল্পনা করা, সেগুলো কিছুই করা হয়নি।
করোনার তীব্রতা ঠেকাতে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সুবিন্যস্ত পরিকল্পনার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। গত ২৮ মার্চ সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে। সেখানে ব্যাপক অস্পষ্টতা লক্ষ্যণীয়। সরকারি কর্মকাÐে স্ববিরোধিতা বিদ্যমান। একদিকে সমাবেশকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, অন্যদিকে লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটিয়ে সরকারি উদ্যোগে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলো। নানা নামে বিশাল বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানায় বাধ্য করার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিস্তাররোধে সরকার একদিকে যেমন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, অন্যদিকে আবার বিস্তারসহায়ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গিয়েছে। সব মিলিয়ে করোনার সংক্রমণ সুনামিতে রূপ নিয়েছে।
আমাদের প্রত্যাশা ছিলো গত একবছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে রুখতে কর্তৃপক্ষ অনেক পরিণত পদক্ষেপ নেবেন এবং জনভোগান্তির কথা মনে রাখবেন। কিন্তু আমরা দেখলাম করোনা-শত্রæকে মোকাবেলায় কার্যকর অস্ত্রগুলোর সময়োপযোগী ব্যবহার না করে একবারে সর্বশেষ অস্ত্রটি ছুঁড়ে দেওয়া হলো। এতে করোনাবধের সঙ্গে মানুষের ভোগান্তিও বাড়বে।
লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
আপনার মতামত লিখুন :