শিরোনাম
◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ফসফসরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী

প্রকাশিত : ০১ এপ্রিল, ২০২১, ০৪:২৩ সকাল
আপডেট : ০১ এপ্রিল, ২০২১, ০৬:১২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রেলওয়েতে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে পূর্বাঞ্চলের সাবেক জিএম সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

রিয়াজুর রহমান: বুধবার (৩১ মার্চ) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় আসামিরা হলেন- রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ফারুক আহমেদ, তৎকালীন প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী বর্তমানে ঢাকা রেলভবনে কর্মরত মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প) মিজানুর রহমান (৫৭), রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জোবেদা আক্তার (৪২), সাবেক ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার বর্তমানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের টিএসও মো. রফিকুল ইসলাম (৪০), এমএলএমএস হারাধন দত্ত (৩৪), শাহজাহানপুর রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া সুলতানা (৬৩), খালাসি মো. আবুল বশর খাঁন (৩৪), রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সিপিও দপ্তরের প্রধান সহকারী খন্দকার সাইফুল ইসলাম মামুন (৪৪), টিকিট প্রিন্টিং প্রেস কলোনি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি দাশ (৫৫), শাহজাহানপুর রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আক্তার হোসেন (৫৭), কুমিল্লার মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর আমিরুজ্জামান আশীষ (৪৯) ও মোসাম্মৎ পারভীন আক্তার (৪৪)।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ খালাসি পদে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, সচিব জোবায়দা আক্তার ও সদস্য রফিকুল ইসলাম মামলার অপর আসামি তৎকালীন জিএম সৈয়দ ফারুক আহমদকে ৬ পাতার কার্যবিবরণীতে অনিয়মে নিয়োগ পাওয়াদের নিয়োগ দিতে সুপারিশ করেন। কিন্তু নিয়োগ অনুমোদনের জন্য ৪০ দিন সময় নিলেও সৈয়দ ফারুক আহমেদ নিয়োগবিধি মানা হয়েছে কিনা যেমন—একজনের দুই চাকরি, এক পরিবারে দুজনের চাকরি, বয়স্ক লোককে চাকরি, এক স্কুল থেকে একাধিকজনকে চাকরি, জাল সনদে চাকরিতে নিয়োগ করা হচ্ছে কিনা এসব দেখেননি।

এছাড়া কোটা মানা হয়েছে কিনা, নিয়োগ কমিটির কমপক্ষে চারজনের সুপারিশ নেই কেন এসবের কিছুই যাচাই করেননি। পরবর্তীতে দুদকের তদন্তেও তিনি এর সদূত্তর দিতে পারেননি। তদন্তে দুদক দেখতে পায়, আসামিরা পরস্পরের সহযোগিতায় ২০১৩ সালের ৪ জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এসব অপরাধ ঘটান।

দুদকের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, রেলওয়ের জিএমসহ আসামিরা পরস্পরের যোগসাজসে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিয়োগ কমিটির সদস্য এম এ জিন্নাহর মূল্যায়ন নম্বর যোগ না করে, অপর সদস্য খলিলুর রহমানের স্বাক্ষর না নিয়ে তাদের সুবিধামত মার্কশিটে নম্বর বসান। এছাড়া নিয়োগকৃত এক পরিবারের দুই ভাইয়ের বয়সের পার্থক্য ৫ দিন হওয়া, ১৯ জনকে জাল সনদে চাকরি দেওয়া এবং একজন বয়স্ক প্রার্থীকে জাল সনদে চাকরি দিয়েছেন। রেলের চার কর্মকর্তার এসব অপরাধের পাশাপাশি জিএমের চালক হারাধন দত্ত প্রভাব কাটিয়ে তার আত্মীয়ের বয়স্ক স্ত্রীকে জাল সনদে চাকরি দিয়েছেন।

ঢাকার শাহজাহানপুর রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া সুলতানা জালিয়াতির মাধ্যমে ১২ জনকে অষ্টম শ্রেণির সনদপত্র প্রদান করেন। তাকে সহযোগিতা করেন স্কুলের অফিস সহকারী আক্তার হোসেন। খালাসি আবুল বাশার খান তার নিকটাত্মীয় টিকিট প্রিন্টিং স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি দাশ ও প্রধান সহকারি (সিপিও) খোন্দকার সাইফুল ইসলাম মামুনের সহযোগিতায় জাল সনদ দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। আর তাকে সহযোগিতা করায় মৃণাল ও মামুনও একই অপরাধ করেছেন বলে তাদেরও আসামি করা হয় মামলায়।

এছাড়া রেলওয়ের ঠিকাদার ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের মালিক আমিরুজ্জামান আশীষ খালাসি পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এস এ পরিবহণের মাধ্যমে ১৩ জন প্রার্থী থেকে ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। একই কায়দায় ঢাকার নাখালপাড়ার পারভীন আক্তার ৯ জনকে চাকরি দেওয়ার নাম করে ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। মোট আসামিরা এক কোটি ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন এই নিয়োগের মাধ্যমে।

মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ প্রদান, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ কোটি ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা গ্রহণ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এছাড়া রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে এমন অভিযোগ পেয়ে দুদক তথ্য অনুসন্ধান করে।

তদন্তে খালাসি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৪ জুলাইয়ে ৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর ওই নিয়োগের পরীক্ষা নেয়া হয় ২০১৫ সালে। পরীক্ষার পরপরই নিয়োগ কমিটির এক সদস্য মারা যান এবং এক সদস্য বদলি হন অন্য মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু তাদের ওই দুজনের স্থলে কাউকে সংযুক্তি না করেই ২০১৯ সালের ১১ মে ফলাফল ঘোষণা করেন কমিটির বাকি তিন সদস্য। এরপর থেকেই এ নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়