শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: কী পাচ্ছে বাংলাদেশ, কী হারাতে পারে? ◈ রাতেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হচ্ছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা (ভিডিও) ◈ চাপাতি হাতে ব্যাগ ছিনিয়ে পুলিশের সামনেই হেঁটে গেলো ছিনতাইকারী, ভিডিও ভাইরাল ◈ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ভারতের বৃহত্তম তেল শোধনাগার নায়ারা রিফাইনারির ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা ◈ রাতের আকাশে ভেসে উঠলো ‘নাটক কম করো পিও’ (ভিডিও) ◈ জটিল ভয়ানক যে রোগে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! ◈ কুড়িগ্রামে চাঁদা দাবি করা জামায়াতের সেই নেতা সাময়িক বহিষ্কার ◈ বড়াইগ্রামে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে দুই বিষয়ে দুই পরীক্ষার্থী ফেল! ◈ টাঙ্গাইলে পুলিশ হেফাজতে বিএনপি নেতার রহস্যজনক মৃত্যু ◈ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ তলিয়ে দেখা দরকার: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

প্রকাশিত : ২৯ মার্চ, ২০২১, ০৩:৫৫ রাত
আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০২১, ০৩:৫৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বুড়িগঙ্গার পানিতে তাজা হয় শ্যামবাজারের সবজি

নিউজ ডেস্ক: সাভার থেকে কয়েকটি সবজির ট্রলার এসে ভিড়েছে বুড়িগঙ্গার শ্যামবাজার ঘাটে। ট্রলার ভিড়তেই শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। কারো মাথায় শাকের বোঝা, কারো মাথায় সবজি। এসব সবজি এখান থেকে চলে যাবে রাজধানীর অন্যতম বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আশপাশের খুচরা ব্যবসায়ীরা সরাসরি শ্যামবাজার থেকেই সবজি কেনেন। উত্তর সিটির করপোরেশনের ব্যবসায়ীরা সবজি কেনেন কারওয়ান বাজার থেকে। সুস্বাস্থ্যের জন্য রাজধানীবাসী যে সবজি খাচ্ছে, তা তাজা রাখতে শ্যামবাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ীই ব্যবহার করছেন বুড়িগঙ্গার পানি। সবজি ধোয়াও হচ্ছে মৃত বুড়িগঙ্গার বিষাক্ত পানি দিয়ে। সম্প্রতি শ্যামবাজারে গিয়ে দেখা গেছে এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য।

বুড়িগঙ্গার পাড়ঘেঁষে গড়ে ওঠার কারণেই রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে নৌপথে সবজি আসে শ্যামবাজারে। শ্যামবাজার থেকে সবজি চলে যায় রাজধানীর অলি-গলি হয়ে নগরবাসীর রান্না ঘরে। জুরাইন বাজারের সবজি বিক্রেতা রাশেদ আলম লালশাক ও ধনিয়া পাতা দরদাম করছেন। পাইকারি বিক্রেতা দাম বলছেন আর একটু পরপর সবজি তাজা করতে পানির ছিটা দিচ্ছেন। রাশেদ আলম চলে যাওয়ার পর প্রতিবেদক পাইকারি বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, পানি কোত্থেকে এনেছেন’? ‘গাঙ থেকে।’ বোধ হয় মুখ ফসকেই কথাটা বেরিয়ে গেছে তার। সঙ্গে সঙ্গে কথা ঘুরিয়ে তিনি বললেন, কলের পানি।

কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে আসল ব্যাপার। এখানে সবজি ধোয়ার জন্য কলের পানির সুব্যবস্থা থাকলেও নদীর পানিই সহজলভ্য ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, কলের পানির জন্য সিরিয়াল দিতে হয়। বেচাবাট্টার ধুমে এত দীর্ঘ সময় কে অপেক্ষা করবে পানির জন্য। তাই দৌড়ে নদী থেকেই পানি নিয়ে আসেন সবজি বিক্রেতারা।

সোহেল আকবর নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলো। তিনি শসা বিক্রি করেন। সাভারের ক্ষেত থেকে শসা আনিয়েছেন তিনি। শসা তাজা দেখাতে অন্য সবার মতো তিনিও একটু পরপর পানির ছিটা দিচ্ছিলেন। কলের পানিই ব্যবহার করেন বলে দাবি করলেন। পানির স্বচ্ছ রঙ দেখিয়ে বললেন, আমরা নদীর পানি ব্যবহার করি না। তবে অনেকেই সবজিতে নদীর পানি দেয়, নদীর পানি দিয়ে সবজি ধোয়ও। কিন্তু আমরা তা করি না। পাশের কয়েকজন শাক বিক্রেতাকে দেখিয়ে তিনি বললেন, তারা এসব শাক নদীর পানি দিয়ে ধুয়েছেন। বুড়িগঙ্গার বিষাক্ত পানিতে সবজি ধুলেও সবজি কিন্তু তাজাই দেখায়। তাই ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই বিষয়টি তেমন গুরুতরভাবে দেখেন না।

২০১১ সালের ১ জুন হাইকোর্টের এক রায়ে বুড়িগঙ্গার পানি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ঢাকার প্রাণরূপী নদী বুড়িগঙ্গার পানি দূষণে এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এ পানিকে আর পানি বলা যায় না। আদালত মনে করেন, শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরই বুড়িগঙ্গার বিষাক্ত পানির মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।

প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ৫ মিলিগ্রাম বা তার বেশি থাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে দ্রবীভূত হাইড্রোজেনের মাত্রা সর্বনিম্ন ৭ মিলিগ্রাম থাকা উচিত। কিন্তু দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গার পানিতে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন দুটোর পরিমাণই প্রায় শূন্যের কোটায়। এমন পানিতে কোনো জলজ প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না।

বুড়িগঙ্গার পানির গুণগত মান পরীক্ষা করে দেখা গেছে, শিল্পবর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য, পয়ঃবর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্যসহ অসংখ্য বর্জ্যের কারণে নদীর পানি তো বটেই, নদীর পানির গন্ধও মানুষের ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়েছে অনেক আগেই।

সম্প্রতি এক গবেষণায় বুড়িগঙ্গার পানিতে মোট ৬২ ধরনের রাসায়নিক বর্জ্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। হাসপাতালের বর্জ্যের কারণে বুড়িগঙ্গার পানিতে এমেক্সাসিলিন, পেনিসিলিন, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিনের মতো উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।

শাকসবজিতে বুড়িগঙ্গার পানি ব্যবহারের কারণে মানবস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল হক ভূঁইয়া। তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গার পানি দূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। এ পানি দিয়ে শাকসবজি ধোয়ার পর কিংবা শাকসবজিতে এ পানি ব্যবহার করার পর বাসায় এনে ভালোভাবে সিদ্ধ না করা পর্যন্ত দূষণ কমার সম্ভাবনা নেই। অল্প সিদ্ধ করে বা ভালোভাবে না ধুয়ে এসব সবজি খেলে পুষ্টি তো দূরের কথা উল্টো মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি হবে।

সবজিতে বুড়িগঙ্গার পানি ব্যবহারের ব্যাপারে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব সবজি বাসায় এনে যদি ভালোভাবে না ধুয়ে ফ্রিজে রাখা হয়, তাহলে ফ্রিজে থাকা অন্যসব সবজিও দূষিত হয়ে পড়বে। ভালোভাবে ধোয়ার পরও ফ্রিজে সবজির সঙ্গে ফল না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফাতেমা রোকশানা বলেন, বুড়িগঙ্গা নদী নিয়ে আমরা একটি গবেষণা করেছিলাম। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, পানি দূষণের মাত্রা ছিল মারাত্মক। ওই পানি খাওয়া বা ব্যবহার কোনোটারই উপযোগী নয়।

সবজি ধোয়ার কাজে বুড়িগঙ্গার পানি ব্যবহার অবশ্যই শিউরে ওঠার মতো ঘটনা মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো নয়। রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী বাজার শ্যামবাজার। এখানের সবজি রাজধানীর অধিকাংশ মানুষের নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় থাকে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে অবশ্যই সতর্ক হওয়া উচিত। - বণিক বার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়