নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করতে কালুরঘাট থেকে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে রিভারভিউ নয়নাভিরাম চার লেন সড়ক। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে কর্ণফুলী দ্বিতীয় সেতুর মাধ্যমে এ সড়কের সংযোগ দিয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর পর্যন্ত স্বল্প সময়ে পৌঁছাতে যাত্রীদের বেগ পেতে হবে না। যা শেষ পর্যন্ত পতেঙ্গার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা সরকারী অর্থায়নে এ সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসন ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ১২টি স্লুইচগেটসহ প্রায় ৯০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। চার বছর মেয়াদী এ প্রকল্পটি ২০১৭ সালে শুরু হয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। চউক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম উন্নয়নের অন্যতম প্রকল্প হিসেবে এটিকে অনুমোদন দেন। ভৌত ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় চউক। সরকারী অর্থায়নে এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে চউক। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩১০ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরুর কথা থাকলেও ২০১৮ সাল থেকে নির্মাণ শুরু হয়েছে ঠিকাদারি চুক্তি ও অবকাঠামোগত রিপোর্ট বিলম্বের কারণে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে সড়কটির নির্মাণ শেষ করার কথা থাকলেও সাময়িক অসুবিধার কারণে সময় বৃদ্ধি হতে পারে। এ প্রকল্পের জন্য প্রায় ১৬ একর জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। সরকারী জায়গা ছাড়াও অধিগ্রহণে প্রায় ব্যয় হবে ১৬০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, এ সড়কটি দ্বিমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। একদিকে জলাবদ্ধতা নিরসন, অন্যদিকে চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত যানজট নিরসন হবে। চার লেনের এ সড়কটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য স্বল্প সময়ে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক শাহ আমানত বিমানবন্দরে পৌঁছাতে সহায়ক হবে। জমি অধিগ্রহণে সাময়িক অসুবিধার কারণে এ সড়ক নির্মাণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এ রাস্তাটি বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু হয়ে বোয়ালখালী ও পটিয়ার সঙ্গে স্বল্প সময়ে যাতায়াতের সুবিধা পাওয়া যাবে। বর্তমান কালুরঘাট ব্রিজ হতে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত কোন বাঁধ ও স্লুইচগেট না থাকায় অতি বৃষ্টি ও সমুদ্রের জোয়ারের পানি নগরীতে আটকা পড়ে। এ সড়ক নির্মাণে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১২টি বিভিন্ন সাইজের রেগুলেটর (পাম্প হাউসসহ) নির্মাণ করা হবে এ সড়কের নিচ দিয়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হলে বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট সেতু হয়ে এবং বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী ব্রিজ হয়ে কক্সবাজার যাতায়াতের সুবিধা অর্জন করবে যাত্রীরা। অপরদিকে, শহর ও উপকূলীয় বাঁধের মধ্যবর্তী এলাকাসমূহের উন্নয়ন এ সড়কের সঙ্গে অনেকটা সম্পৃক্ত। জনগণের আবাসন, ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য ও পর্যটকদের পর্যটন শিল্পকে উৎসাহিত করে দেশী বিদেশী বিনিয়োগও আকৃষ্ট করবে এ সড়ক। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে চট্টগ্রাম শহরের দুঃখ চাক্তাই খাল এমনকি দেশের অন্যতম বাণিজ্যপাড়া খাতুনগঞ্জকে ঘিরে গড়ে উঠবে ভারি শিল্প এলাকা কালুরঘাট। প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি ৩০ ফুট উচ্চতায় নির্মিত হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনসহ সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করতে এটি শহর রক্ষা বাঁধ হিসেবেও কাজ করবে। প্রায় ৯০ ফুট প্রশস্ত এ সড়কটিকে চার লেনে বিভক্ত করে যান চলাচলের দ্রুততা নিশ্চিত করা হবে। সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে সাড়ে ৬৯ হেক্টর। ১২টি জলাধারের জন্য আরও ১২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। সড়কের নিচ দিয়ে ১২টি রেগুলেটর নির্মাণের পাশাপাশি এসব রেগুলেটরকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ১২টি পাম্প হাউসও নির্মাণ করা হবে। চউক অধ্যাদেশের ৭৪ ও ৭৫ ধারা অনুযায়ী এ সাড়ে আট কিলোমিটার সড়কের জন্য চউক সরাসরি ভূমি ও স্থাপনা মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া চলমান রেখে প্রকল্পটি দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করছে। সাড়ে ৮ কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৬ কিলোমিটার অংশে মাটি ভরাটের কাজ শেষ পর্যায়ে। - জনকণ্ঠ