নিউজ ডেস্ক: পবিত্র শব-ই-বরাত ও রমজান মাস সামনে রেখে দাম কমাতে বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী ১ এপ্রিল থেকে দ্বিগুণ ভোগ্যপণ্য নিয়ে মাঠে নামছে সরকারী বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। এর পাশাপাশি বেসরকারী খাতের ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের বাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। দাম বাড়াতে তৎপর অসাধু ব্যবসায়ীদের দিকে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাকে। ভোগ্যপণ্যের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আমদানিকারক, পাইকার ও উৎপাদনকারী মিল-মালিকরা এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন।
জানা গেছে, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হওয়ায় বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ভোজ্যতেলের দাম বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু সেই দাম কার্যকর না করে বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলে এখন আলোচনা হচ্ছে। অন্যদিকে শব-ই-বরাতও রোজার আগেই বেড়ে গেছে চিনি, সব ধরনের মুরগি মাছ-মাংসসহ বেশিরভাগ পণ্যের দাম। গত কয়েক মাস বাজারে শীতের সবজির দাপটে দাম কমে আসলে এখন সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে ধুন্দল, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স, করলা, টমেটোসহ সব ধরনের সবজির দাম আবার বেড়ে গেছে। চাল, আটা, ডাল, ছোলা ও ডিম আগের বেড়ে যাওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সামান্য কমেছে পেঁয়াজের দাম। বেড়ে গেছে সব ধরনের তরল দুধের দাম।
এ অবস্থায় আর মাত্র চারদিন পর পালিত হবে পবিত্র শব-ই-বরাত। এর পরের দু-সপ্তাহ পর রমজান মাস শুরু হচ্ছে। রমজানের সঙ্গে বাঙালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করবে পুরো জাতি। কিন্তু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। রমজানের ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন বলেন, ভোগ্যপণ্যের দাম কমাতে করণীয় নির্ধারণে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যসচিব। ওই বৈঠকের নির্দেশনা হলো রমজানে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে সরকারী সংস্থা টিসিবি সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে। এবার তাদের বিক্রি কার্যক্রম দ্বিগুণ করা হবে। এছাড়া বেসরকারী খাতকেও বাজারে পণ্য সরবরাহ বাড়াতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যারা সরকারী নির্দেশনা মানবে না তাদের দেশের প্রচলিত আইনের মুখোমুখি হতে হবে। এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তার কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে টিসিবি পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে রমজানের বিশেষ ট্রাকসেল বিক্রি কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ১ এপ্রিল থেকে। পুরো রমজান মাসজুড়ে টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশনা রয়েছে।
টিসিবির উদ্যোগ ॥ রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম কমাতে টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ৫০০ ট্রাকে বিক্রি করা হবে টিসিবির পণ্যসামগ্রী। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এখন চার শ’ ট্রাকে টিসিবি চার পণ্য বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত ১৭ মার্চ থেকে প্রাক রমজান পণ্য বিক্রয় ও বিশেষ কার্যক্রম শুরু করেছে। এর আওতায় ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রয় করা হচ্ছে। ভ্যেজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিসিবি। এখন ২ লাখ লিটার থেকে বাড়িয়ে প্রতিদিন ৪ লাখ লিটার ভোজ্যতেল বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্য চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজের সরবরাহও দ্বিগুণ করা হচ্ছে।
টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা দিনে ৫০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি মসুর ডাল, ৯০ টাকা দরে ২ থেকে ৫ লিটার সয়াবিন তেল এবং ১৫ টাকা দরে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সম্প্রতি মিল গেটে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম হবে ১১৩ টাকা, আর খুচরা বাজারে বিক্রি ১১৭ টাকা বেঁধে দিয়েছে। আর ৫ লিটারের বোতল মিল গেটে ৬২০ টাকা, ডিলার পর্যায়ে ৬৪০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৬৬০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এছাড়া প্রতি লিটার খোলা পাম তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে মিল গেটে ১০৪ টাকা, ডিলার পর্যায়ে ১০৬ টাকা এবং খুচরায় ১০৯ টাকা। কিন্তু নির্ধারিত এই দামের চেয়ে বেশি মূল্যে খুচরা বাজারে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, রোজার মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও এ তথ্য উঠে এসেছে। আর এর পেছনে প্রথাগত সরবরাহ প্রক্রিয়া, অতিরিক্ত মজুদের মাধ্যমে পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং, রমজানে পণ্যের বাড়তি চাহিদা, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি, যানজট ও অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর উচ্চ সুদের হার, ঋণপ্রাপ্তিতে জটিলতা এবং ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়া বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রমজান সামনে রেখে অসাধু সিন্ডিকেট সদস্যরা চাল, ছোলা, ডাল, সবজি, মসলা, ভোজ্যতেল, খেজুর, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, মাছ-মাংস এবং গুঁড়ো দুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত দুমাসে ধাপে ধাপে বাড়িয়েছে। এই দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। তবে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কমাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতি বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। যেকোন মূল্যে বাজার স্থিতিশীল রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে। - জনকণ্ঠ