মোজাফ্ফর হোসেন : আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতিবছরই এই দিনটা এলে, আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি: আর কতোদিন নারীর অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য আলাদা করে এই দিবসটির দরকার হবে? ‘আন্দোলন দীর্ঘজীবী হোক’Ñ শ্লোগানের আরেক অর্থ তো আন্দোলন অসফল হোক। এই মুহূর্তে সম্ভবত পৃথিবীর দীর্ঘতম আন্দোলন হলো নারী-অধিকার আন্দোলন। এই অর্থে অসফল আন্দোলন বলা চলে। ‘অসফল’ বলাতে কেউ হয়তো নানারকম পরিসংখ্যান দেখিয়ে গত পঞ্চাশ বছরে নারীর অগ্রযাত্রার গল্প শোনাবেন। না, তাতে আমি মোটেও সন্তুষ্ট নই। নারীর অধিকার বলতে আমি যা বুঝি তা একশভাগের দশভাগও পূরণ হয়েছে কিনা সন্দেহ।
এই আন্দোলন সফল হলে এতদিনে বায়োলজিক্যাল ভেদাভেদ বাদে নারী-পুরুষে আর সমস্ত ভেদাভেদ ঘুচে যেত। বায়োলজিক্যাল ভেদাভেদ প্রাকৃতিক, পুরুষে পুরুষেও এই ভেদাভেদ আছে। নারী কয়েক শতাব্দী ধরে (সংখ্যায় সংখ্যালঘু না হয়েও) বাস করে আসছে পুরুষ-ঔপনিবেশিক সমাজে। পুরুষ তার সমস্ত শক্তি (রাজনীতি-অর্থনীতি-সমাজনীতি-শিল্প ও কলানীতি এবং অবশ্যই ধর্মনীতি) দিয়ে নারীর জন্য প্রতিকূল একটি সমাজ গঠন করেছে কয়েক হাজার বছর ধরে।
আমি মনেপ্রাণে চাই নারী-পুরুষের সম্পর্ক ও অব¯’ান এমন হয়ে উঠুক যেন নারীদিবস উদযাপনের আর প্রয়োজন না পড়ে। আমি আমার অনাগত সন্তানদের মধ্যে কোনো বিভেদ দেখতে চাই না। এক সন্তানকে আরেক সন্তানের অধিনস্ত করে তুলব কেন? প্রকৃতি যতটুকু ব্যবধান নারী-পুরুষের শরীরে মানসগঠনে করে দিয়েছে, ওইটুকুই, এর বাইরে পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র-গোষ্ঠী বাড়তি কোনো ব্যবধান যেন যুক্ত না করে। যতদিন সেই কাঙ্ক্ষিত সমাজ পা”িছ না, ততদিন এই দিবস সত্যিকার অর্থেই মুক্তির বার্তা বয়ে আনুক, এই মুক্তি শুধু নারীর না পুরুষেরও। নিপীড়কের ভূমিকা থেকে পুরুষ মুক্তি পাক।
নারী পুরুষ এক বিছানাতেই বাস। একসঙ্গে ঘুম-খাওয়া-উঠাবসা-প্রেম-ভালোবাসা সবই। এরপরও নারীর উপর দমনপীড়ন-অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে আসছে পুরুষই। যে সম্পর্ক প্রেমের, কামের, মায়ার, স্নেহের, ভালোবাসার, ঋণের, সেই সম্পর্কের মাঝেই যদি বৈষম্য দূর করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা না যায়, তাহলে রাষ্ট্রে মানুষে মানুষে শ্রেণিবিভেদ, বর্ণবিভেদ, বৈষম্য দূর হবে কেমন করে? যে সমাজে অর্ধেক মানুষ (পুরুষ) এখন পর্যন্ত বাকি অর্ধেক মানুষের (নারীর) সম্পত্তিতে সমঅধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি সেই সমাজে নাকি সাম্যবাদের আন্দোলন হয়, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন দার্শনিকরা?
এবার অন্য কথা বলি: নারীরা যে কারণে হিটলার হয় না, হয় না ‘মহাপ্রেমিক’ (পড়ুন ভণ্ডপ্রেমিক) শাহজাহান; সেই একই কারণে পৃথিবীর কোনো ধর্মের প্রবক্তাও হয়নি। মানে ভণ্ডামিটা তাঁদের স্বভাবে বায়োলজিক্যালি নেই। ফলে তার ‘মেধা’ ও ‘শক্তি’ নিয়ে পুরুষের মনে প্রশ্ন জাগে। জাগবেই তো। যে চোর, চুরিবিদ্যায় তো তার কাছে সকল বিদ্যার মাপকাঠি! ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :