শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০৮ মার্চ, ২০২১, ০৫:১৩ সকাল
আপডেট : ০৮ মার্চ, ২০২১, ০৫:১৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মিরাজুল ইসলাম: ‘রমণীয়’ নারী দিবসে নারীদের প্রত্যাশা বনাম প্রাপ্তি

মিরাজুল ইসলাম : প্রতি বছর যখন নারী দিবস পালনের আড়ম্বর ওঠে একই সাথে সম্পূরক প্রশ্ন ওঠে, নর-নারীর সামাজিক ও শারীরিক বৈষম্যের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি আদৌ হবে কিনা। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও কেন নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে। বিষয়টি কি কেবল একপেশে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অবয়বের অংশ? নারীর বিপরীত শব্দ ‘নর’ নাকি ‘পুরুষ’ সেই প্রশ্ন আপেক্ষিক। এই বিশেষ দিবসে নারীকে নারী উল্লেখ না করে মহিলা বা মেয়ে সম্বোধন করলে নিশ্চয় দিবসটি কিছু কৌলিন্য হারাবে। গুরুত্বও পাল্টে যেতে পারে।

আজ থেকে দশ হাজার বছর আগের নিওলিথিক বা নব্য প্রস্তর যুগে প্রাচীন সমাজে সাধারণ নারীদের যে চিত্র জাদুঘর কিংবা বই পুস্তকে চিত্রিত আছে এতো বছর পরও সেই চিত্রের অদল বদল হয়নি খুব একটা মোটা দাগে। এর মাঝে মানব সভ্যতার কোথাও কোথাও মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের বৈষম্যহীন সমাজ চিত্রের বর্ণনা পাওয়া গেলেও তা নারীদের হাজার বছরের সংগ্রামের পরিক্রমায় ধূসর অতীত। সেই নব্য প্রস্তর যুগে পুরুষরা খাদ্যের অন্বেষণে শিকারে বের হতো এবং নারীরা কুঁড়েঘরে শিশুকে দুধ পান করাতো কিংবা আগুন জ্বেলে পুরুষদের শিকার করা পশু মাংস পোড়াতো। নারীরা ছিল গৃহস্থালীতে পুরুষের সহায়ক। ডিজিটাল যুগে এই অবস্থানের কিছুটা অদল-বদল ঘটলেও পুরুষের পেছনে সাধারণ নারীর অবস্থান পরিবর্তন হয়নি।

গত পঞ্চাশ বছরে নারীবাদী আন্দোলন নারীকে তার অবস্থান ও স্বকীয়তার পক্ষে সামাজিক আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ ও ক্ষেত্র বিশেষে বিদ্রোহ রণক্লান্ত করলেও নারীর ক্ষমতায়নের গোলকধাঁধাঁ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করতে পারেনি। তাই মোটেও অবাক লাগে না যখন দেখি রাষ্ট্র গৃহস্থালী কাজে ব্যস্ত নারীর জন্য নির্দিষ্ট ভাতা প্রদানের আইন করে। পারতপক্ষে পরিবারের অন্তঃপুরে নারীর স্বাভাবিক অবস্থানের যৌক্তিকতাই যেন এর দ্বারা সত্যায়িত করা হলো। সম্মানের বিষয়টি আসছে পরে।
নারী দিবস কেন ‘নারী’ শব্দটির সমার্থকতুল্য অন্য কোনো শাব্দিক পরিচয়ে পালিত হয় না তা নিয়ে অমীমাংসিত কৌতুহল কাজ করে। ইংরেজি ভাষাতেও ‘উইমেন’ ও ‘ফিমেল’ শব্দ ব্যবহার নিয়ে নানা মুনির নানা মত দেখতে পাওয়া যায়। তেমনি বাংলা শব্দকোষে নারী শব্দের সমার্থক হিসেবে আমরা পাই যথাক্রমে - মানবী, মহিলা, মেয়ে, স্ত্রীলোক, রমণী, ললনা, অবলা, আওরত, মেয়েমানুষ, কামিনী, বনিতা, শর্বরী, বালা, ভামিনী, মাগী ইত্যাদি। এর মধ্যে আলাদা করে ‘নারী’ শব্দটি সামষ্টিক অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে মানবজাতির স্ত্রীলিঙ্গ’কে একটি নিরপেক্ষ সার্বজনীন পরিচয়ের মোড়কে উপস্থাপন করে। এই বিশেষ দিবসে নারীর প্রিয়া, কান্তা, প্রেমিকা, প্রমদা প্রমুখ পরিচয় তখন ঢাকা পড়ে যায়। নারীর সংগ্রামী স্বভাব ধর্মকে মুখ্য করেই যাবতীয় এজেণ্ডা থাকে। দিবসের পুরো দিন রাত সবাই ব্যস্ত থাকেন শোষিত ও নিপীড়িত নারীর বঞ্চনা ও বেদনার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-গবেষণায়।

কিন্তু তার উৎস খুঁজতে যে বিবিধ বিতর্কের অবতারণা করা হয় তার জেরে নারী তার দুর্বলতম রমণীয় সত্ত্বাকে দিন শেষে স্বীকার করে নেয়। নারী দিবসে নারী শুধুই কামনা করে তার সমঅধিকার, তার প্রতি সহমর্মিতার দাবিটি। নারী তার জরায়ুর স্বাধীনতা কাগজে কলমে অর্জন করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। আমরা হয়তো ভুলে গেছি আজ থেকে মাত্র একশো বছর আগেও জন্ম নিয়ন্ত্রণ ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করবার অপরাধে ১৯১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনে মার্গারেট সাঙ্গার’কে কারাবাস বরণ করতে হয়েছিল। তাছাড়া বেশিদিন আগের কথা নয়। শারীরিক সক্ষমতায় পুরুষের সমতুল্য প্রমাণের নজির রাখতে প্রথম নারী হিসেবে জাপানি অভিযাত্রী জুনকো তাবি মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন ১৯৭৫ সালে। আলোচনা-সেমিনারে একালের নারীরা নিজেদের পুরাকালের শক্তিমান নারী চরিত্র রুক্সিনী, দুঃশলা, সীতা কিংবা জোয়ান অব আর্ক, মহারানী ভিক্টোরিয়া বা আধুনিক রাষ্ট্রে মার্গারেট থ্যাচারের যোগ্য উত্তরসূরী মনে করলেও ‘প্রপার্টি রাইটস’ সূত্রে তাদের সামষ্টিক অবস্থান আজো নির্ধারিত প্রগতিশীল সূচকের বিপরীতে। যার কারণে হয়তো প্রতি বছর নিয়ম করে পুরুষ জাতিকে দায়ী করে দিবসটি বর্ণাঢ্য কলেবরে পালিত হয়ে আসছে। মানুষ হিসেবে নারী নিজেকে যে জায়গায় দেখতে চাচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে দেখতে না পাবার হতাশা যেন চিরকালীন।

নারীর প্রতি পুরুষ শাসিত সমাজের এই মনোবৈকল্যের পৌরাণিক ইতিহাস হাজার বছরের ধারায় ঈষৎ পরিবর্তিত হলেও যেকোনো রাষ্ট্রের একজন ক্ষমতাবান নারীর পক্ষে তার সমাধান দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তখন বুঝতে নিতে হয় সাধারণ নারী মাতা বনাম একজন ক্ষমতাবান রানী মাতার পারস্পরিক দূরত্ব সমাজের অনেক গভীরে। এই ধারায় একজন নারী রানী মৌমাছির মতো একটি রাজ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করলেই সকল নারীদের অধিকার সুরক্ষিত হবে এমন বিশ^াস করাটা যথেষ্ট নয়। মনে রাখতে হবে রাজা বা রানী ‘মধু ভাণ্ডে’ বিদ্যমান থাকেন উভয় লিঙ্গের সেবায়। নির্দিষ্ট করে বললে পুরুষ সমাজের আধিপত্যের প্রতি থাকে তাদের অবাধ পক্ষপাত। তখন তাদের কাছ থেকে সমলিঙ্গের অধিকার চাওয়া একাধারে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রহসন। সুতরাং নারীর প্রতি বৈষম্যের দায় এককভাবে পুরুষ জাতির উপর চাপিয়ে দিলে সমাধান আসবে না। সমাধান খুঁজতে হবে নিজেদের মধ্যে থেকে। তা না হলে কেবলমাত্র যন্ত্রণা প্রকাশের দিবস হিসেবেই ‘নারী দিবস’ বিবেচ্য হতে থাকবে ফি বছর।

লেখক ও চিকিৎসক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়