অজয় দাশগুপ্ত : (এক) নারী যে পরিবারে প্রধান কিংবা চালিকার ভূমিকায় সে পরিবারের সচ্ছলতাও সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিত। বাঙালি পুরুষ মুখে যতো হম্বিতম্বি করুক দিনশেষে তারা ঘরের নারীর কাছে নতজানু। পাঁচ সন্তানের পরিবারে ব্যাংকার পিতার সব হিসাব এসে মিলে যেতো মায়ের কাছে। এ দৃশ্য বাঙালি সুখীও নিরাপদ পরিবারের সাধারণ দৃশ্য। মা জানতেন কার কী দরকার, কার স্কুল কলেজের ফি বাকি কে কিনবে বই খাতা কে থাকবে, কোথায় সব মা তথা নারীর নখ দর্পণে। পিতা কাজে যায় আসে আর মাকে বেতন বুঝিয়ে দিয়ে খালাস।
(দুই) পরিবর্তনে বদলে গেছে আমাদের জীবন। দেশেও এখন মা-বাবা দুজনকে কাজ করতে হয়। কারও হাতে সময় নেই অফুরন্ত। এর ভেতর ঢুকেছে সামাজিক মিডিয়া। মোবাইল ফেসবুক টুইটার নেট সব মিলে বিজি বিজি ওয়াল্ড। এর ফাঁকে ছেলেমেয়েরা সরে গেছে দূরে। তাদের এখন মা বাবার সাথে যোগাযোগও হয় ফোনে নয় ম্যাসেজে। এর ফলে সমাজে ভালোবাসা এখন সস্তা কিন্তু সত্যিকার ভালোবাসা উধাও। মায়া-মমতাহীন এই বাস্তবতায় নারীর জন্য মমতা আসবে কোথা থেকে? নেট দুনিয়ার ইন্ধন একদিকে যেমন নারীকে পোশাক বন্দী করেছে তেমনি তার জন্য খুলে রেখেছে অবাধ আনন্দের নামে উত্তেজনার দুয়ার। তাই এখন নারীর প্রতি যৌন ও সহিংস আচরণ প্রকট।
(তিন) যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী যে দেশের বিরোধী দলের নেতা নারী যে দেশের সংসদে স্পিকার নারী ঘরে দিন কাটানো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নারী সে দেশে তাদের ওপর এতো নির্যাতন অপরাধ মানা কষ্টকর। বিস্ময় লাগে তাঁরা অবগত থাকার পরও ধর্মব্যবসায়ী ও নিপীড়কেরা কীভাবে এতো সাহস পায়? কেন আইন ও বিচার এতোটা একমুখি? বারবার অপমানিত হওয়ার পরও তাদের পক্ষে কেন সরব সবল অবস্থান নিতে পারে না দেশ? অথচ এই যে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি এর পেছনে তারা। এরাই পোশাক শিল্পী এরাই ঘরের লক্ষী। এ দেশে নারীদের জন্য আলাদা কোন দিনের দরকার পড়ার কথা ছিলো না। তবু নারী দিবসের প্রতিজ্ঞা হোক এদেশে তাদের অপমান ও নির্যাতন রোধ। সরকার ও ক্ষমতা তা না করলেও সমাজকেই তা করতে হবে। তা না হলে মা বলে ডাকা বোনের জন্য ভালোবাসা কথাগুলো হবে কথার কথা। নারীদিবস হোক বা না হোক নারীর সম্মান হোক চিরন্তন।
লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক।
আপনার মতামত লিখুন :