আফরোজা সরকার: রংপুরের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে গত এক বছর পুলিশ দালালচক্রের দুই শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করলেও তাদের উৎপাত কমছে না বলে রোগীরা অভিযোগ করেছেন।তারা রোগীদের অপছন্দের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত খরচ আদায় করে প্রতারণা করে বলে রোগীদের ভাষ্য।
ঠাকুরগাঁওয়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাউলিয়াগঞ্জ এলাকার হাসিনা আক্তার হ্যাপি বলেন, গ্যাস্ট্রোলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলেন তিনি। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড়ে গাড়ি থেকে নামলে কয়েকজন তাকে ভাল চিকিৎসকের কথা বলে একটা চেম্বারে নিয়ে যায়। বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে তারা খরচ নেয় প্রায় আট হাজার টাকা। পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি কিছু ওষুধ লিখে দেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, দালালরা আমাকে যার কাছে নিয়ে গেছিল তিনি ভাল চিকিৎসক না। আমি প্রতারিত হয়েছি।
এদিকে রংপুরে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এক মাসে ৫৬ জনসহ গত বছর পুলিশ দালাল চক্রের দুই শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করলেও তাদের উৎপাত কমছে না বলে রোগীরা অভিযোগ করেছেন। তারা রোগীদের অপছন্দের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত খরচ আদায় করে প্রতারণা করে বলে রোগীদের ভাষ্য।পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বাবু মিয়া নামে পরিচয় দিয়ে বলেন, তার ৬০ বছর বয়সী বাবা ও মা ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে ভর্তি করানো হয়।দালালচক্র বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ছাড়পত্র ছাড়াই রোগীদের অন্যত্র নিয়ে যায়। এভাবে প্রতারিত হয়েছেন আমার বাবা-মা।
রংপুর সিটির হারাগাছ থানার চিলমন এলাকার পান দোকানি জাঙ্গীর আলম বলেন, আমি কয়েকদিন আগে স্ত্রীকে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেটে যাওয়া মাত্রই এক লোক এসে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কোন ডাক্তার দেখাবেন?’ তো আমি বললাম, ‘আমি তো হার্টের ডাক্তার দেখাব। লোকটা আমাকে নিয়ে গেল এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।সেখানে যাওয়ার পর ওই লোকটি হারিয়ে গেল। তাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন পরীক্ষা করে তিন হাজার টাকা আমার কাছ থেকে নিল। আমরা তো মূর্খ মানুষ। সে যে দালাল তা আগে বুঝতে পারি নাই। পরে বুঝলাম সে দালালি করে।
দালাল চক্রের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা অভিযোগ স্বীকার করেন। তবে তারা তাদের নাম-পরিচয় বলতে চাননি।তাদের একজন বলেন, ভাই আমরা কী করে খাব? আমাদের তো কোনো উপায় নেই। আমি বেকার যুবক। কে আমাকে চাকরি দেবে। তাই রোগীদের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে যাই। সেখান থেকে কিছু টাকা পাই । এই দিয়ে চলে আমার সংসার।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রেজাউল করিম জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে দালালমুক্ত করার জন্য যা যা করা দরকার তার জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দালালদের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত রংপুরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ২০০ শতাধিক দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । শুধু গত মাসেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫৬ জনকে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে।পুলিশের অভিযান অব্যহত থাকবে বলে তিনি জানান।
আপনার মতামত লিখুন :