শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৭ মার্চ, ২০২১, ১২:১১ দুপুর
আপডেট : ০৭ মার্চ, ২০২১, ১২:১১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সেলিম জাহান: বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এবং কিছু কথা

সেলিম জাহান: আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল সর্ব অর্থেই ঐতিহাসিক। পৃথিবীর সর্বকালের একটি শ্রেষ্ঠ ভাষণ এটি- বিষয়বস্তুর দিক থেকে, উপস্থাপনার দিক থেকে, উজ্জীবনের দিক থেকে। এই সব মাত্রিকতার পরিপ্রেক্ষিতে এই ভাষণের পাঁচটি দিক আমাকে সদা মুগ্ধ করে- এ ভাষণ আমাকে আব্রাহাম লিঙ্কনের গেটিসবার্গ ভাষণের কথা মনে করিয়ে দেয়।

প্রথমত : একটি জাতির জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চিত মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু যখন তার ভবিষ্যৎ পথযাত্রা নির্দেশ করছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন তাঁর মন থেকে- আবেগ ও বিবেক মিশিয়ে। পুরো সময়ে তিনি কোনো কাগজের দিকে তাকাননি, কোনো লিখিত বর্ণনার আশ্রয় নেননি, তাঁর ভাষণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও হৃদয়-নিঃসৃত। নিঃসরিত ঝর্ণার মতোই ছিল তার গতি। সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য ছিল বাস্তবসম্মত- শুধু আবেগপ্রসূত নই। একটি জাতির ক্রান্তিকালে তাদের পথনির্দেশ দেওয়ার কালে এমনটি ভাবা যায় না।

দ্বিতীয়ত: সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ হলেও তার বক্তব্য ও যুক্তির কাঠামো ছিলো বিস্ময়কর। তাঁর ভাষণের গঠন ও চলমানতা ছিল একটি সঙ্গীতের মতো- কোথাও তাল কাটেনি, কোথাও সঙ্গতি নষ্ট হয়নি, কোথাও অপ্রাসঙ্গিকসমনে হয়নি। তাঁর বক্তব্যের মধ্যে কোনো বিক্ষিপ্ততা ছিল না- একটি যুক্তিপূর্ণ গ্রন্থিবদ্ধতা ছিল তাঁর বক্তব্যে। সেই সঙ্গে একটি দৃঢ়তা একটি ঋজুতা ছিল সে ভাষণের প্রাণ।

তৃতীয়ত: বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মূল লক্ষ্য ছিলো দুটো গোষ্ঠী- বাংলাদেশের জনগণ ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। বাংলাদেশের জনগণকে তিনি পথনির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের উজ্জীবিত করতে চেয়েছেন, কিন্তু একইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, পাকিস্তানি শাসককূলের বিরুদ্ধে, সাবধান করে দিয়েছেন তাদের অপপ্রয়াসের ফলাফল সম্পর্কে। পুরো বক্তৃতায় এক অভাবনীয় ভারসাম্য রক্ষা করেছেন তিনি। তাঁর ভাষণ ছিল সংযত, কিন্তু সংহত।

চতুর্থত: তাঁর শব্দচয়ন, ভাষা এবং বাক্যগঠন ছিল হৃদয়গ্রাহী। তিনি তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় - সহজ কথা সহজেই বলেছিলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য তিনি পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি সবের কাছে। বাঙালি জাতির মনকে তাই তিনি নাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের উদ্দীপ্ত করেছিলেন স্বাধীনতার লক্ষ্যে। একই সঙ্গে তিনি শঙ্কিত করেছিলেন পাকিস্তানিদের।

পঞ্চমত: বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণ শেষ করেছিলেন আমাদের সংগ্রামকে ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ও ‘মুক্তির সংগ্রাম’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। আমার মনে হয় অত্যন্ত সচেতনভাবে বঙ্গবন্ধু শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন তাদের অন্তর্নিহিত অর্থ মনে রেখে। ‘স্বাধীনতা’ ও ‘মুক্তির’ ব্যঞ্জনা ভিন্ন। স্বাধীনতা এলেই মুক্তি আসে না। স্বাধীনতা অর্জন করার পরেও একটি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বঞ্চনা থাকতে পারে, অসাম্য থাকতে পারে, অন্যায় থাকতে পারে। এগুলো দূর করতে পারলেই কেবল মুক্তি সম্ভব। সুতরাং বাঙালি জাতির সংগ্রাম শুধু স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে শেষ হবে না, তাকে মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে, কারণ স্বাধীনতা মুক্তির আবশ্যকীয় শর্ত, কিন্তু পর্যাপ্ত শর্ত নয়। আজ পঞ্চাশ বছর পরেও বঙ্গবন্ধুর মার্চের ভাষণের চিন্তা-চেতনা বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ পথযাত্রার জন্যে তাৎপর্য্যপূর্ণ। বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের জন্যও একটি থাকবে একটি পাথেয় হয়ে সর্বকালে, সর্বযুগে। লেখক : অর্থনীতিবিদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়