শিরোনাম
◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন

প্রকাশিত : ০৭ মার্চ, ২০২১, ১২:০৬ দুপুর
আপডেট : ০৭ মার্চ, ২০২১, ১২:০৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লেলিন চৌধুরী:  সাত মার্চের ভাষণ : অবিস্মরণীয় প্রোজ্জ্বল শব্দমালা 

লেলিন চৌধুরী: প্রতিটি সময়কালে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব কিছু সংকট, প্রত্যাশা এবং ভাষা থাকে। সৃজনশীলতার স্পর্শে সে ভাষা ও প্রত্যাশা শিল্পে বাঙময় হয়ে উঠে। শিল্পের আবেদন হতে পারে খন্ডকালীন অথবা কালোত্তীর্ণ। বিষয়টি নির্ভর করে শিল্পীর সৃজন-ক্ষমতার ওপর। এটি হতে পারে গান, কবিতা অথবা বক্তৃতা। ১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বর পেনসিলভানিয়ার গেটিসবার্গ শহরে একটি অমর ভাষণ দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন। মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’ অথবা উইস্টন চার্চিলের ‘আমরা লড়বো...’ সে-ধরনের কালোত্তীর্ণ বক্তৃতা। বাংলা ভাষার প্রোজ্জ্বল শব্দমালায় গ্রন্থিত হয়ে একটি অমর মহাকাব্যিক ভাষণ রচিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। সে ভাষণটির বর্ণে-অক্ষরে-শব্দে-পক্তিতে ধ্বনিত হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসকারী সাড়ে সাতকোটি মানুষের গভীর প্রত্যাশা। একইসঙ্গে অনুরণিত হয়েছে চিরকালের বাঙালির প্রবহমান আকাক্সক্ষা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১০ লাখ মানুষের সামনে সেই ভাষণটি উচ্চারণ করেন তখনকার ‘শেখ মুজিব’। কী ছিলো সেই বক্তৃতায়? কী গুণে সেটি স্থান পেলো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বক্তৃতামালায়? তার আগে স্মরণ করতে হবে গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তর দশকের কথা। তখন পৃথিবীর দেশে দেশে মুক্তির সংগ্রাম চলছে। উপনিবেশিক শাসনের জোয়াল ফেলে দিয়ে জাতীয় স্বাধীনতার লড়াই ক্রমাগত জোরদার হচ্ছে। মানুষের ওপর মানুষের শোষণ অবসানের স্বপ্নে তখন পৃথিবী উজ্জীবিত। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, যেটি আজকের বাংলাদেশ সেখানেও ঘটছে নতুন স্বপ্নের মহা- উজ্জীবন।

১৯৪৭ সালের মধ্য-আগস্টে ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে ব্রিটিশরা চলে যায়। পাকিস্তান ও ভারত/ইন্ডিয়া নামের দুটো দেশের জন্ম হলো। ভারত উপমহাদেশের দুই প্রান্তের দুটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান। দুই অংশের নাম হয় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান। সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ভাবনাগত দিক দিয়ে দুটো অঞ্চল ছিল দুই মেরুর, মিল ছিল শুধু ধর্ম পরিচয়ের। আমরা জানি সমাজ ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে ধর্ম চলমান থাকে। অচিরেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ অনুধাবন করতে পারে, তারা আসলে পশ্চিম পাকিস্তানিদের উপনিবেশিক শাসনের নিগড়ে আবদ্ধ। তাদের মধ্যে জাতীয় মুক্তির ভাবনা দানা বাঁধতে থাকে। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেই ভাবনা পরিপুষ্ট হয়। এ-ধারাবাহিকতায় নির্মিত হয় ১৯৬৯-র গণঅভ্যুত্থান। তারপর ১৯৭০ সালের নির্বাচন। বাঙালির প্রতিনিধি হিসেবে আওয়ামী লীগের নিরুঙ্কুশ বিজয়। তৎকালীন সামরিক জান্তা জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে টালবাহানায় সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। সেই উত্তাল সময়ে তৈরি হলো অগ্নিগর্ভ মার্চ। সাত মার্চের ভাষণে শেখ মুজিব বললেন, ‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়।’ একটিমাত্র বাক্যে ব্যক্ত হলো জনপদবাসীর মূল আকাক্সক্ষা। এটি ছিল বিশ্বের সকল মুক্তিকামী মানুষের স্বপ্নের প্রকাশ। লাইনটির দ্বিতীয় শব্দ ‘বাংলার’ স্থানে মুক্তিপাগল যেকোনো দেশের বা জাতির নাম বসিয়ে দিলে সেটা ওই দেশ বা জাতির প্রাণকথা হয়ে যায়। শেখ মুজিব এখানে ‘বাংলার মানুষ’ বলেছেন, শুধু বাঙালি বলেন নাই। এই বাংলাদেশে বাঙালিসহ অনেকগুলো জাতির মানুষের বসবাস। তাদের ভাষাও ভিন্ন। তাই ‘বাংলার মানুষ’ বলে তিনি বহুজাতিক ও বহুভাষিক একটি জনপদ ও দেশকে সংজ্ঞায়িত করেন।

১৮৭১ সালের ফরাসি বিপ্লবের পর ‘ডিক্লেয়ারেশন অব ফ্রেঞ্চ পিপল’-র প্রধান ঘোষণা ছিলো ‘জনগণের সরকার’। গেটিসবার্গে লিংকন বলেছিলেন, ‘সরকার হবে জনগণের, জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা।’ মুজিব বললেন, ‘মানুষ মুক্তি চায়, বাঁচতে চায়,অধিকার চায়’। সুভাষ বসু মুক্তিকামী ভারতবাসীকে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।’ মুজিব বললেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দিবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব...’। এখানে মুক্তির জন্য রক্তদানকারীর দলে মুজিব নিজেও রয়েছেন। ইতিহাসের দূরত্বকে অতিক্রম করে যেন স্পার্টাকাসের কণ্ঠস্বর আমাদের কানে বেজে উঠে। যুদ্ধ ব্যতিরেকে স্বাধীনতা আসে না। কে যুদ্ধ করবে? দেশের প্রতিটি মানুষ যুদ্ধ করবে। অর্থাৎ যুদ্ধটি হবে জনযুদ্ধ। জনযুদ্ধের প্রধান কৌশল হিসেবে-‘ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে’ তুলতে হবে। সেনাপতির নির্দেশ, ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’। লাখ লাখ মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে একটি স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠীকে জনযুদ্ধের দীক্ষা দিচ্ছেন মহান নেতা।

মানবমুক্তির সংগ্রাম একটি চলমান প্রক্রিয়া। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে এর উল্লম্ফন ঘটে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা হচ্ছে মানবমুক্তির তেমনি একটা উল্লম্ফন। মহানায়ক তার অপারেজয় তর্জনী উঁচিয়ে জাতির গন্তব্য নির্দেশ করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ একটি জনগোষ্ঠীর পথচলার জন্য  এক স্বর্ণসোপান নির্মিত হলো। সাত মার্চের এই মহাকাব্য রচনার মধ্য দিয়ে মানুষের মুক্তিসংগ্রামের চিরকালের অগ্রণীদের দলে শামিল হলেন শ্যামল বাংলার সাহস-সুন্দর নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  লেখক : স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও শিশুঅধিকার কর্মী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়