অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: একসময় ঢাকা কলেজ, ক্যাডেট কলেজ, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, জাদরেল সব জেলা স্কুল ইত্যাদি ছিলো, এখন এসব কেবল সোনালী অতীত। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতো আর এখন মিত্রতা করে। এক সময় প্রমত্তা পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ হাজারও নদী ছিলো। একসময় বাংলাদেশটা মিঠা পানির মাছের আধার ছিলো। আমাদের যা কিছু সুন্দর সব কিছুই অতীত হয়ে গেছে।
আজকের দিন থেকেও আগামীকালটা কম সুন্দর হয়ে আসে। এ কেমন উন্নয়ন? সরকারি দলের নেতাদের বক্তৃতা যদি শুনেন, তাহলে দেখবেন তাদের বক্তব্যের সিংহভাগজুড়ে আছে অতীত নিয়ে গর্ব। দেশকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে জাতির পিতার সংগ্রাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংগ্রাম, কলকারখানার শ্রমিকদের সংগ্রাম। সংগ্রাম মানে রাস্তায় বিক্ষোভ, মিছিলো, হরতাল ইত্যাদি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ঠিক যেই যেই বিষয় নিয়ে তারা গর্ব করে আজকে অন্য কেউ একই জিনিস করলে তাকে মামলা, হামলা ইত্যাদির সঙ্গে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। যে কাজের জন্য তাদের নেতাদের নিয়ে গর্ব করে সেই একই কাজ এখন কেউ করলে তাকে দেশদ্রোহী ট্যাগ লাগিয়ে দেয়।
পাকিস্তানিরা এবং তাদের ভাবধারার মানুষরাও কিন্তু তখনকার নেতাদের দেশদ্রোহী ভাবতো। একটু আগে শুনলাম মাদক মামলায়ও অব্যাহতি পেলেন ইরফান সেলিম। মানে একে একে সকল মামলার knot-ই আবছে unkno হয়ে যাচ্ছে। কেবল ইরফান সেলিমই না বরং এই লিস্ট অনেক লম্বা। ব্যাংক চোর থেকে শুরু করে খুনের অভিযোগ আছে এমন ব্যক্তিদেরও মামলা টামলা কর্পূরের মতো উড়ে যায় উপরের ব্লেসিংস থাকে। আর অন্যদিকে সামান্য দুইটা কথা লেখার জন্য জেলে পঁচে মরতে হয় মোশতাকদের। আবার আজকে নাকি আমাদের ‘জাতীয় ভোট দিবস’। দুইয়েকটি সংবাদপত্রে এটি পড়েও বেশ মজা পেয়েছি। গণিতের knot theory একটি ভালো গবেষণার ফিল্ড। কিন্তু আমি যেই বাংলাদেশে বাস করি সেখানে একি কান্ড হচ্ছে? বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শহড়ঃ knot theorist আমাদের knot unknot করতে পারবে না।
লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :