শাহাজাদা এমরান : দীর্ঘ আড়াই দশকের বেশি সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, লেখক আর সাংবাদিকরা (কতিপয় মোসাহেব ছাড়া) কখনো কোন সরকারের আমলেই খুব একটা স্বস্তি পায়নি। প্রতিটা সরকারই মুক্তমনা,স্বাধীনচেতা লেখকদের প্রতিপক্ষ মনে করে। আবার বিরোধী দলে গেলে তাদের জন্য মায়া কান্না করে। আমরা সত্যিই এই দুর্ভাগ্যজনক নির্মম ধারাবাহিকতার অবসান চাই।
লেখক মুশতাক আমার কেউ নন, তার সাথে আমার কখনো পরিচয়ও ছিল না। কিন্তু তার এই মৃত্যুতে আমি আপনজন হারানোর ব্যথা অনুভব করছি। কারণ, তিনি দেশের কোন স্বীকৃত চোর,ডাকাত কিংবা সন্ত্রাসী ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন কলম সৈনিক। শুধু মাত্র লেখার কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শুধু মাত্র ভিন্নমত পোষণ করে লেখার কারণে! তিনি বার বার জামিন চেয়েছেন কিন্তু পান নি।
লেখক ও কাটুর্নিস্ট মুশতাক আহমেদ (৫৩) ২৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে আটটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মুশতাক আহমেদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কারাগারের ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাকে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাকে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার ছোট বালাপুর এলাকায় তার বাড়ি। ঢাকার লালমাটিয়ায় স্ত্রী ও বৃদ্ধ মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন। তিনি মা-বাবার একমাত্র ছেলে। বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষের উদ্যোক্তা এই মুশতাক আহমেদ। ২০২০ সালের মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাকে গ্রেফতার করে কারাবন্দী করা হয়। সেই থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি কারাবন্দী ছিলেন। জীবিত অবস্থায় পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার জামিনের আবেদন করা হলেও তিনি জামিন পাননি ।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান লিটন বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর তদন্ত হওয়া উচিত। যে আইনে মুশতাক আহমেদে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং যে আইনে তাকে কারাগারে রাখা হয়েছিল, একজন মানবাধিকারকর্মী হিসেবে বলতে পারি, এই আইনটি হয়রানিমূলক, কালো আইন, এর পরিবর্তন হওয়া উচিত।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মুক্ত সাংবাদিকতার জন্যও এক বিশাল হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। আমরা লিখতে চাই,বলতে চাই খোলা মনে এবং মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায়। তবে দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখেই। আর যেন লেখক মুশতাকের মত কাউকে এভাবে চলে যেতে না হয়?
লেখক : ব্যবস্থাপনা সম্পাদক , দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কুমিল্লা জেলা। মোবাইল ফোন : ০১৭১১-৩৮৮৩০৮, e-mail- [email protected]
আপনার মতামত লিখুন :