অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: ফেব্রুয়ারি মাস এলে বাংলা ভাষার জন্য দরদ এক্কেবারে যেন বাইয়া বাইয়া, চুইয়া চুইয়া পরে। যতোই আমরা ২১ তারিখের দিকে আগাই ততোই এই দরদের ইনটেনসিটি বাড়তে বাড়তে ২১ তারিখে একদম সর্বোচ্চ পর্যায়ে যায় এবং তারপর আবার কমতে থাকে। ভাষার জন্য যেই জাতি রক্ত দিয়েছে সেই জাতি কতোটা নিমকহারাম হলে পরে তার মাতৃভাষার শিক্ষার মাধ্যমের বইগুলোকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করে তারপর পড়ে। এর নাম দিয়েছে ভার্সন। এখন শুনছি দেশের সকল স্কুলেই নাকি ভার্সন চালুর পরিকল্পনা চলছে। বলদামির তো একটা সীমা আছে নাকি? যেখানে আমাদের উচিত উচ্চ শিক্ষাকেও বাংলা ভাষায় কীভাবে চালু করা যায় সেদিকে কাজ করা সেখানে বাংলাকে ইংরেজি বানিয়ে পড়িয়ে আমাদের সন্তানদের তোতা পাখি বানানোর পায়তারা হচ্ছে।
এমনিতেই শহর এলাকার উচ্চবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত পরিবারের ছেলেমেয়েরা এখন ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে। যার কু-প্রভাব ইতোমধ্যেই আমাদের সাহিত্যাঙ্গনে পড়েছে। ইংরেজি মাধ্যমে যারা পড়ে তারা নিশ্চিতভাবেই বাংলা ভাষার কবি-সাহিত্যিক হতে পারবে না। আবার তারা বাংলা সাহিত্যতের ভোক্তাও না। ফলে এই মাধ্যম বড় স্কেলে চালু করার কারণে দেশে সাহিত্যিকের বড় সংকট চলছে। কারণ যারা এখন ইংরেজি মাধ্যমে পড়ছে তারা বাংলা মাধ্যমে পড়লে কারো কারো কবি সাহিত্যিক হওয়ার সম্ভবনা বাড়তো। আর তা না হলেও তাদের অনেকেই সাহিত্যের বই কিনে পড়তো। কেবলই কি পড়া? শোনার ক্ষেত্রেও একই সমস্যা।
এই ছেলেমেয়েরা বাংলা গান শুনে না, বাংলা সিনেমা দেখে না, থিয়েটার দেখতে যায় না। শিক্ষার একটি বড় উদ্যেশ্য হলো শিক্ষালাভ করে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন অন্তত তার নিজ দেশের মানুষদের মন মানসিকতা বুঝতে পারে এবং যেন তারা সকলের সঙ্গে ইন্টারেক্ট করতে করতে পারে। এখন বাজারে গিয়ে মাছ ওয়ালা যদি মাছের দাম ঊনচল্লিশ শত ঊনপঞ্চাশ টাকা দাম চায় আর আপনার সন্তান সেটা বুঝতে না পারে সেই শিক্ষা আসলে কেমন শিক্ষা? আমাদের উচিত হলো বাংলা ভাষায় মানসম্পন্ন বই লেখার প্রকল্প হাতে নেওয়া। অবকাঠামো উন্নয়নের আগে মানুষের চিন্তা, চেতনা ও জ্ঞানের উন্নয়ন না ঘটালে দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন ঘটবে না, ঘটবে না, ঘটবে না। লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :