শিরোনাম
◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন

প্রকাশিত : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০২:১৯ রাত
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০২:১৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লিভার রোগীদের টিকা নিতে কিছু পরামর্শ

ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর, ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল এবং ডা. পার্থপ্রতীক রায়: বাংলাদেশে এখন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সফলভাবে রোল করা হচ্ছে। শুরুর দিককার সংশয়গুলো কাটিয়ে মানুষ এখন আগ্রহ নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করছে, টিকা নিচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে অনেকেরই প্রশ্ন, তারা টিকা নিতে পারবেন কিনা, কারণ অনেকেই ভুগছেন অনেক রকম রোগে। আমরা যারা লিভার বিশেষজ্ঞ, আমাদের হরহামেশাই রোগীদের কাছ থেকে এমন সব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সে কারণেই এই লেখাটির অবতারণা, যাতে আমাদের লিভারের রোগীরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেয়ার আগে কোনো রকম সংশয়ে না ভোগেন।

অতি সম্প্রতি এশিয়ান প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভারের কোভিড টাস্কফোর্সের উদ্যোগে একটি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ হেপাটোলজি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। আর এ মাসেই আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ প্রকাশ করেছে লিভার রোগীদের জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন-সংক্রান্ত তাদের কনসেনসাস স্টেটমেন্ট। ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভারও প্রকাশ করেছে তাদের কোভিড-১৯-সংক্রান্ত পজিশন পেপার। বিএসএমএমইউ হেপাটোলজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ও ফোরাম ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেশের লিভার রোগীদের ভ্যাকসিন নেওয়ার সুবিধার্থে এই পরামর্শমূলক প্রবন্ধটি লেখার সময় আমরা এই প্রতিটি প্রকাশনা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছি।

বাংলাদেশে এখন কোভিড-১৯-এর যে ভ্যাকসিনটি ব্যবহার করা হচ্ছে, তার নাম কোভিশিল্ড। এটি একটি এডিনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন, অর্থাৎ এতে আছে শিম্পাঞ্জির একধরনের এডিনোভাইরাস, যা না শিম্পাঞ্জি না মানুষের শরীরে কোনো ইনফেকশন করতে পারে। কাজেই এটি মানুষের জন্য শতভাগ নিরাপদ। কোভিশিল্ড খুব কার্যকরভাবে এমনকি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীর দেহেও ‘সার্স-কোভ-২’-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধক এন্টিবডি তৈরি করে। মনে রাখতে হবে, কোভিশিল্ডের আসল সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটির নামগন্ধও নেই। কাজেই কোভিশিল্ড নিয়ে কারো ‘সার্স-কোভ-২’তে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও নেই।

আমরা জানি যে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটির মিউটেশন হচ্ছে। মিউটেশন আসলে যেকোনো ভাইরাসেরই ধর্ম আর সার্স-কোভ-২ এবং এর কোনো ব্যতিক্রম নয়। তবে মাথায় রাখতে হবে, ভবিষ্যতে ভাইরাসটির মিউটেশন হবে এই আশঙ্কায় এখন কোভিশিল্ড না নেওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। প্রথম ডোজটি নেয়ার চার থেকে বারো সপ্তাহের মধ্যে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজটি নিতে হয়। একেক দেশ একেকভাবে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজের সময় নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশের জন্য এখন তা আট সপ্তাহ। যারা একবার কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন, তারাও কোভিড-১৯ নেগেটিভ হওয়ার এক মাস পরই কোভিশিল্ড নিতে পারবেন।

কোভিশিল্ড নেয়ার পর ইনজেকশন নেওয়ার জায়গাটিতে ব্যথা হতে পারে, তবে এই ব্যথা ১ শতাংশের চেয়ে কম মানুষের ক্ষেত্রে তীব্র হয়ে থাকে। ভ্যাকসিন নেয়ার পর হালকা জ্বর, গায়ে ব্যথা কিংবা মাথাব্যথা হতে পারে। সাধারণত অল্প বয়সীদের ক্ষেত্রে এসব সমস্যা বয়স্কদের চেয়ে বেশি দেখা যায়। কোভিশিল্ড নেওয়ার পর কাশি বা স্বাসকষ্ট হয় না বললেই চলে।

এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় লিভার অ্যাসোসিয়েশনের কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের গবেষণায় উঠে এসেছে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীদের কোভিডে মৃত্যুর ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। আর মৃত্যু না হলেও আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখছি যে এ ধরনের রোগীদের লিভার কোভিড-১৯-এর কারণে অনেক বেশি খারাপ হয়ে যেতে পারে এবং সেখান থেকে লিভার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠা অনেক সময়ই সম্ভব নয়-ও হতে পারে। কাজেই লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই কোভিশিল্ড নিয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে যেসব লিভার সিরোসিস রোগীকে ডিকমপেনসেশন বা লিভার ফেইলিউর আছে, তাদের জন্য এটি আরও বেশি জরুরি।

আমাদের দেশে অনেক মানুষ আছেন, যারা লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন করেছেন তাদেরও কোভিশিল্ড নেওয়ায় কোনো বাধা নেই। এমনকি ভ্যাকসিনটির দুটি ডোজ নেওয়ার মাঝেও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা যেতে পারে। পাশাপাশি লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরাও কোভিশিল্ড নিতে পারবেন। এমনকি যেসব লিভার ক্যান্সার রোগী সোরাফেনিব বা লেনভাটেনিব খাচ্ছেন বা যারা আরএফএ বা টেইস করিয়েছেন, তারাও নিশ্চিন্তে এই ভ্যাকসিনটি নিতে পারবেন। আর যাদের লিভার অতটা খারাপ নয়, অর্থাৎ যারা হেপাটাইটিস-বি বা সি ভাইরাসে আক্রান্ত অথবা যাদের ফ্যাটি লিভার আছে, তাদেরও কোভিশিল্ড নিতে হবে। পাশাপাশি তারা তাদের নিয়মিত ওষুধগুলোও খেয়ে যাবেন। আর কোভিশিল্ড নেওয়ার পর লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের রোগী, যাদের ইমিউন সাপ্রেসিভ ওষুধ খেতে হয়, তারাও তাদের নিয়মিত ওষুধগুলো চালিয়ে যাবেন। যেসব লিভার রোগীর কোনো রকম অ্যালার্জির সমস্যা আছে, কোভিশিল্ড নেওয়ার পর তারা ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে থাকবেন।

লিভারে যাদের জটিল রোগ আছে, যেমন লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার, তাদের জন্য প্যারাসিটামল ও এনএসএআইডি-জাতীয় ওষুধগুলো নিরাপদ নয়। কাজেই কোভিশিল্ড নিলে ইনজেকশন নেওয়ার জায়গায় ব্যথা হতে পারে কিংবা জ্বর আসবে, এই আশঙ্কায় আগেভাগেই এ ধরনের ওষুধ গ্রহণ করা উচিত হবে না। যদি এ ধরনের কোনো রোগীর ভ্যাকসিন নিয়ে এমনি কোনো সমস্যা হয়ই, সে ক্ষেত্রে তারা প্যারাসিটামল খেতে পারবেন। কোভিশিল্ড নেয়ার আগে বা পরে লিভার রোগীরা তাদের নির্ধারিত ওষুধগুলো চালিয়ে যাবেন।

আমরা যারা চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করেছি, তারা শিখে বড় হয়েছি যে ন্যাচারাল ইনফেকশনই সবচেয়ে বড় টিকা। সমস্যা হচ্ছে, কোভিড-১৯-এর বেলায় এটি এখনো প্রমাণিত নয়। বরং যা প্রমাণিত তা হলো যে একবার কোভিড হওয়ার পরও দফায় দফায় কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কাজেই কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার পর কোভিড-১৯ এন্টিবডি টেস্ট পজিটিভ থাকা মানেই কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা নয়। এ কারণেই কোভিশিল্ড নেয়ার আগে-পরে এন্টিবডি পরীক্ষার সুপারিশ কোনো দেশে কোনো সংস্থাই করে না। বাংলাদেশের বেলাতে তেমনটাই প্রযোজ্য।

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। আমাদের মাস্ক পরা বাদ দেয়া চলবে না। পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, অহেতুক জনসমাবেশে না যাওয়া আর বারবার হাত ধোয়ার সেই চিরায়ত পরামর্শগুলোও মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভ্যাকসিন নেয়া আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমেই আমরা আমাদের ‘নিউ নরমাল’ জীবনকে আবারও ‘ওল্ড নরমালে’ ফিরিয়ে নিতে পারব।

লেখক : [১] অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল), চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। [২] ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর, সিনিয়র রিসার্চার, এহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। [৩] ডা. পার্থপ্রতীক রায়, লিভার বিশেষজ্ঞ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়