ভিকটর রোজারিও: [২] বিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদারকে চট্টগ্রাম আর্চডায়োসিসের আর্চবিশপ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মনোনীত আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার চট্টগ্রামের ষষ্ঠ বিশপ ও দ্বিতীয় আর্চবিশপ হিসেবে অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন।
[২] শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ভাটিকান সিটির সময় দুপুর ১২টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা) কাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফান্সিস তাঁকে এ নিয়োগ দেন।
[৩] বাংলাদেশে নিযুক্ত পোপ ফ্রান্সিসের প্রতিনিধি এবং ভাটিকান রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী চট্টগ্রামের পবিত্র জপমালা রানি ক্যাথিড্রাল চার্চে উপস্থিত থেকে ধর্মীয় উপাসনা খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিসের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৩ জুলাই তারিখে আর্চবিশপ মজেস এম কস্তার মৃত্যুর পর থেকে চট্টগ্রামের আর্চবিশপ পদটি শূন্য ছিলো।
[৪] আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার বর্তমানে বরিশাল কাথলিক ডাইয়োসিসের বিশপ হিসেবে সেবা দান করছেন। এর আগে তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ডাইয়োসিসের সহকারী বিশপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৬৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বরিশালের নবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ও ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৪ সালে পবিত্র ক্রুশ সংঘের একজন কাথলিক যাজক হিসেবে অভিষেক গ্রহণ করেন। ২০০৯ সালের ৩ জুলাই তারিখে তিনি চট্টগ্রাম ডাইয়োসিসের সহকারী বিশপ ও ২০১৬ সালের ২৯ জানুয়ারি তারিখে নতুন সৃষ্ট বরিশাল ডাইয়োসিসের প্রথম বিশপ হিসেবে অভিষেক গ্রহণ করেন।
[৫] খ্রিস্টভক্তদের উপযুক্ত ও নিবিড় পালকীয় সেবাদানের উদ্দেশে বাংলাদেশে কাথলিক খ্রিস্টানদের ৮টি ডাইয়োসিস আছে। যেগুলো হলো : ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল। প্রতিটি ডাইয়োসিসের অন্তর্ভুক্ত আছে বেশ কয়েকটি প্যারিশ বা চার্চ। প্রতিটি চার্চের ধর্মযাজক ‘প্যারিস প্রিস্ট’ নামে অভিহিত। আর ডাইয়োসিসের প্রধান ধর্মযাজক হলেন একজন ‘বিশপ’। ৮টি ডাইয়োসিস-এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম হলো আর্চডাইয়োসিস এবং এ দুটো ডাইয়োসিসের প্রধান হচ্ছেন একজন করে আর্চবিশপ।
[৬] চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিসের এলাকা বাংলাদেশের ৯টি প্রশাসনিক জেলাজুড়ে বিস্তৃত। জেলাগুলো হলো : চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার। এ জেলাগুলোতে কাথলিক খ্রিস্টানদের প্যারিশ বা চার্চ আছে ১১টি এবং সাব-প্যারিশ আছে ২টি। চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিসের প্রধান ধর্মযাজক ‘আর্চবিশপ’ চট্টগ্রাম শহরের পাথরঘাটার আর্চবিশপ ভবনে অবস্থান করেন।
[৭] বাংলাদেশে চট্টগ্রামেই প্রথম খ্রিস্ট ধর্মবিশ্বাস আসে ১৫১৮ সালে পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। ১৬০০ সালে পাথরঘাটা, জামালখান ও আনোয়ারা উপজেলার দিয়াংয়ে গড়ে ওঠে প্রথম গির্জা। জেজুইট সম্প্রদায়ের যাজক ফাদার ফ্রান্সেসকো ফার্নান্দেজ ১৫৯৮ সালে চট্টগ্রামে আসেন এবং পরবর্তীতে আরাকানদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে মারা যান। তখন বাংলাদেশে কোনো ডাইয়োসিস ছিল না। ১৮৪৫ সালে চট্টগ্রাম অবিভক্ত পূর্ববঙ্গের ‘ভিকার এপোস্টলিক’র ধর্মাসনের মর্যাদা লাভ করে অর্থাৎ কোনো ডাইয়োসিস না থাকায় চট্টগ্রামই ছিল পূর্ববঙ্গের কাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান কেন্দ্র। পরবর্তীতে ‘ভিকার এপোস্টলিক’র ধর্মাসন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়।
[৮] ১৯২৭ সালে চট্টগ্রামকে ‘ডাইয়োসিস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন চট্টগ্রাম ডাইয়োসিসের এলাকাধীন ছিল বর্তমান বরিশাল ডাইয়োসিস এবং ভারত ও মিয়ানমারের বিস্তৃত এলাকা। ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম আর্চডাইয়োসিসে উন্নীত হয়।
