শিরোনাম
◈ চট্টগ্রাম বন্দরে সাইফ পাওয়ার টেকের যুগের অবসান, এনসিটির দায়িত্বে নৌবাহিনী ◈ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজের খেলায় তালেবান, পেছনে চীন-রাশিয়া-ইরান-ভারত! ◈ পাকিস্তানকে ঠেকাতে গিয়ে ভারতে বন্যা, তোপের মুখে কঙ্গনা (ভিডিও) ◈ ৫ আগস্ট লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার জাতীয় সংসদ: নাহিদ ইসলাম (ভিডিও) ◈ গাজীপুরে মহানগর বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার ◈ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জনগণ ঐক্যবদ্ধ : মির্জা ফখরুল ◈ রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ’ ওসি, আটক করে ‘চাঁদা দাবি’ ছাত্রদল নেতার, সিসিটিভির ফুটেজ ফাঁস ◈ আর একটি হত্যাকাণ্ড ঘটলে সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ: হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের ◈ ধামরাইয়ে ঋণ দেওয়ার কথা বলে গৃহবধুকে ধর্ষণ, আসামী গ্রেফতার ◈ গাজীপুরে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার বিএনপি নেতা স্বপন

প্রকাশিত : ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৮:৫৩ সকাল
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৮:৫৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যদি সন্তান মানুষ না হয়, তবে কী লাভ পিতা-মাতা হয়ে ?

ডেস্ক রিপোর্ট : বিষাক্ত মদ্যপানে মারা গেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বাবা চাকরি সূত্রে থাকেন চট্রগ্রাম, মা অপর এক সন্তান সমেত আছেন ঢাকার বাইরে। উচ্চ শিক্ষার সুবাদে নিহত ছাত্রী ঢাকায় অবস্থান করতেন। মৃত্যুর পর জানা গেলো বন্ধুদের সাথে তিনি প্রায় প্রতিদিন পার্টি করতেন ঢাকার স্বনামধন্য রেষ্টুরেন্টে এবং ছেলে বন্ধুর সাথে ছিলো অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক। মৃত্যুর পর বাবার দায়ের করা মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন সকল আসামী। এই আসামীদের একজন ছাত্র এবং বন্ধু এই মদ্যপানেই মারা গেছেন তবুও আলোচনায় উঠে আসছে ছাত্রী! কারন আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একজন তরুনী মদ্যপানে অভ্যস্থ এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা না।

দুই.
কিছুদিন আগে একজন ইন্টার্ন নারী চিকিৎসকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার হয়েছেন তার বন্ধু। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিও একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক। তারা উভয়েই চীন থেকে এমবিবিএস পাশ করে এসেছেন। কথা ছিলো ইন্টার্ন শেষ হবার পর তারা বিয়ে করবেন। যদিও তারা একত্রে একই ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন এবং দুঃখজনক হলেও সত্য, পবিবারের সদস্যরা নাকি এই বিষয়ে অবগত ছিলেন না।

তিন.
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের একজন ছাত্রী মারা গেছেন বন্ধুর সাথে বিকৃত যৌনাচারের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে। গ্রেফতার হয়েছে তারই বন্ধু। আন্দোলন, মানব বন্ধন, সংবাদ সম্মেলন সবই হয়েছে। তবে পরপর উপরে উল্লেখিত দুই ঘটনায় চাঁপা পড়ে গেছে এই বেদনাদয়ক পরিনতি। পরবর্তী দুর্ঘটনায় আড়ালে চলে যাবে আজকের আলোচিত ঘটনাও...
আদিম যুগে অবাধ যৌনাচারে অভ্যস্থ ছিলো মানব সম্প্রদায়। সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় সেই যুগ সভ্যতার ইতিহাসে Promiscuity নামে পরিচিত। আমরা কি তবে উল্টো পথে হাঁটছি? মানবাধিকার, শিশুদের জন্য হ্যাঁ বলতে গিয়ে আমরা কি সন্তানদের ভুল পথে চালিত করছি? আজ সন্তানদের স্কুলে শিক্ষকদের শাসন করতে দিতেও আমাদের অনীহা। ছাত্র শিক্ষকদের স্বাভাবিক সম্পর্কও আজ অনুপস্থিত। এই সম্পর্ক এখন বাণিজ্যিক এবং ঠুনকো।

ছোটবেলায় স্কুলে শিক্ষকদের হাতে মার খেয়ছি আমরা প্রায় সকলেই। আমাদের আগের পুরুষ শিক্ষকদের ভয় পেতেন বাঘের চেয়েও বেশি। তারও আগে বাবারা সন্তানদের শিক্ষকদের হাতে তুলে দিয়ে বলতেনঃ হাড় ক’খনা ফেরত দিলেই চলবে। এই সময়ে সন্তানদের গায়ে শিক্ষকদের হাত? আমরা কি মেনে নেব?

রাস্তায় শিক্ষকদের সাথে দেখা হবার ভয়ে ছাত্ররা এক সময় অন্য রাস্তা দিয়ে হাঁটতো। শিক্ষক বৃন্দ মাথা উঁচু করে হাঁটতেন আর ছাত্ররা মাথা নিচু করে হাঁটতো, বিনয়ের সাথে সালাম দিতো। ছাত্ররা বিড়ি সিগারেট খেতো লুকিয়ে। “যুগ বদলাইছে”! এখন শিক্ষকবৃন্দ ভয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে রাস্তা দিয়ে হাঁটেন! পাছে কোন বিব্রতকর দৃশ্য না চোখে পড়ে! ছাত্ররা আজ বেপরোয়া, বুক ফুলিয়ে হাঁটে, গাল ভরে ধোঁয় ছাড়ে মুখের উপর...
এর জন্য কম বেশি দায়ী আমরা সবাই। আমি যখন কলেজে পড়ি তখন একজন মাদকাসক্ত শিক্ষক ইংরেজি পড়াতেন। শুনেছি একজন অভিভাভবক তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ স্যার, আপনি যদি ফেনসিডিন নেন, তাহলে ছাত্ররা কি শিখবে? শিক্ষকের ক্ষুব্ধ প্রতিউত্তর ছিলোঃ আপনার বাপের পয়সায় খাই? এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বলতে দ্বিধা নেই, অনেক শিক্ষক তাদের সম্মান এবং মর্যাদা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন চরম ভাবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগে গুরুত্ব পাচ্ছে দলীয় ভক্তি এবং তদবির। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন বাণিজ্যের অনুষঙ্গ।

এক সময় আমাদের যৌথ পরিবারের সুপ্রাচীন সংস্কৃতি ছিলো। গ্রামীণ এবং মফঃস্বল সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে দ্রুত গড়ে উঠছে নগর বন্দর। আমরা কাজের খোঁজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এবং দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে পা ফেলছি অনেক দূরে, প্রবাসে। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে একটু ভালো ভাবে বাঁচার লোভে আমরা সব মেনে নিচ্ছি হাসি মুখে। তবে সন্তান প্রতিপালনের জন্য এটা যথেষ্ঠ্য নয়।
আত্মীয় স্বজন এমনকি প্রতিবেশীদের শাসনে আমরা বড় হয়েছি। তখন কিছু করে ফেলার আগে দুই বার ভাবতাম! কেউ না দেখে ফেলে! পরিচিত কারো সামনে পড়ে গেলে আর রক্ষা নাই। ছুটে চলা এই সময়ে এখন কেউ কাউকে চিনি না আমরা। কে কি ভাবে সেটা দেখার ও ভাবার সময় আমাদের নাই, সন্তানদের থাকবে কেন?
পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি খেলাধুলা ,সাংস্কৃতিক চর্চা, ধর্মীয় শিক্ষা, নৈতিকতা বোধের শিক্ষাও জরুরী। সামাজিক, প্রাকৃতিক দুর্যোগে এগিয়ে যাবার প্রেরণা আমরা পরিবার ও সমাজ থেকেই পেয়েছিলাম। কিশোর বয়সে কবিতা লিখে এখনো অমর কবি সুকান্ত। ক্ষুদিরাম হাসি মুখে ফাঁসির কাষ্ঠে উঠেও গেয়েছেন জীবনের জয় গান। মালালা ইয়সুফ জাই নোবেল জয় করেছে এই বয়সেই। একজন গ্রেটা থুনবারগ এই বয়সেই নাড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বের বিবেক।

মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির সুবাদে ভুলে যাচ্ছি আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, জীবন বোধ। পরিবর্তনের স্রোতে গা ভাসিয়ে কোথায় যাচ্ছি আমরা? যদি সন্তান মানুষ না হয়, তবে কি লাভ পিতা মাতা হয়ে? কুকুর বিড়ালেও সন্তান জন্ম দেয়! আমরা কি আশরাফুল মাখলুকাত নই? আমরা কি আমাদের পিতা মাতার কাছে, পূর্ব প্রজন্মের কাছে কিছু শিখি নাই? আমরা কি শুধু সার্টিফিকেট বাগিয়েছি? শিক্ষার অন্তর্নিহিত মূল্যবোদের কিছুই কি রপ্ত করতে পারি নাই?

আধুনিক কিছু বাবা মায়ের এই ধারনা যে তাদের সন্তান যদি সম্মতিতে এবং স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে তবে তাদের বিশেষ কিছু বলার নাই। এটা তাদের অধিকার! আমি লজ্জিত সেই সব বাবা মায়ের জন্য। কারন তাদের সন্তানেরা তাদের পিতা মাতার কাছে যথাযত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত যা ছিলো তাদের অধিকার। আফসোস...

একটি হাদিস দিয়ে শেষ করছি। হজরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত এই হাদিসে আল্লাহ্‌র রাসুল সাঃ বলেছেনঃ মৃত্যুর পর আমাদের আমলের দরোজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল মৃত্যুর পরেও চলমান থাকেঃ
১. সাদকায়ে জারিয়া
২. এলেম শিক্ষা, যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়
৩. নেক সন্তান, যে তার পিতা মাতার জন্য দোয়া করে

সূত্রঃ [মুসলিম ১৬৩১, তিরমিযি ১৩৭৬, নাসায়ি ৩৬৫১, আবু দাউদ ২৮৮০,৩৫৪০, আহমদ ৮৬২৭, দারেমি ৫৫৯]
::
হে আল্লাহ্‌, আপনি আমাদের সবাইকে সহিহ বুঝ দান করুন।
পিতা মাতার হক আদায়ে আমাদের সমর্থবান করুন।
সন্তান হউক নাজাতের উছিলা...
-অনুপম মাহমুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়