ফিরোজ আহমেদ : ল্যাতিন আমেরিকার সামরিক শাসন আমলের খবরের কাগজগুলো ছিল কবরের মতো নিস্তব্ধ। তাই মার্কেজ (সম্ভবত, অন্য কেউ হয়ে থাকলে মনে করিয়ে দেবন দয়া করে) একবার বলেছিলেন, ল্যাতিন আমেরিকার মানুষেরা দেশে কী ঘটছে তা জানতে ইউরোপীয় পত্রিকা পড়েন। তো ষাট দশকে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশটি যে পরিস্থিতিতে ছিল, বাংলাদেশ বহু দিক দিয়েই আজো প্রায় সেই দশায়। খুব সম্ভবত, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এই বিষয়টি নিয়ে কোন আলাপ হবে না, সরকারি প্রতিবাদলিপিটি প্রকাশ করা ছাড়া।
আল-জাজিরার ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন দেখলাম। চেনাজানা মোসাহেবরা সকলে বলছেন, জামায়াত-বিএনপির টাকা দিয়ে বানানো হয়েছে এই প্রামাণ্যচিত্রটি এবং নির্লজ্জতর মোসাহেবরা আরও বেপরোয়া, পারলে কী করবি কর! কিন্তু প্রামাণ্যচিত্রের মূল বক্তব্যগুলো নিয়ে তাদের তেমন কোনো কথাবার্তা দেখলাম না। সরকারি প্রতিবাদটিতেও বেশিরভাগ অভিযোগের কোনো উত্তর দেয়ার চেষ্টাও নেই।
স্বাভাবিক অবস্থায় আসলেই হয়তো এটা আলোচ্য বিষয় হতো যে, রাষ্ট্রপতি সত্যি একজন ইন্টারপোলের খোঁজার তালিকায় থাকা খুনির সাথে একই দাওয়াতে উপস্থিত ছিলেন? কিংবা সেনাপ্রধানের ভাই বলেই সেই খুনি দেশে ফিরে দিব্যি ঘুরেফিরে বেড়িয়েছেন, যদিও তার মাথায় ছিল খুনের মামলার রায়। আলোচনার চেষ্টা হতো ওই কথিত মেইলগুলো জাল না সঠিক, সেই নিয়ে। ধারনকৃত কণ্ঠগুলো কার, সেটা নিয়ে।
এখন পরিস্থিতি অস্বাভাবাবিক। গণমাধ্যমে তাই গণমানুষের উৎসুক্য, সংশয় এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে উদ্বেগ বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া প্রকাশের তাই প্রশ্নই আসে না। গণমাধ্যম কিংবা রাজনৈতিক দলের শক্তি আসলে জনগণই। মানুষ যখন শক্তিহীন, সংগঠনহীন, বিচ্ছিন্নভাবেই তাদের ঘায়েল করা যায়, থামিয়ে রাখা যায়-যাকে বলা হয় ভয়ের রাজত্ব। মানুষ আন্দোলন সংগ্রামে থাকলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়, অতো সহজে মানুষের মুখ বন্ধ করা যায় না। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :